বেতন বাড়তে পারে ৪০% পর্যন্ত, কিন্তু কবে থেকে? জানুন বিস্তারিত

কেন্দ্রীয় সরকার কর্মচারী ও পেনশনভোগীদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ৮ম কেন্দ্রীয় বেতন কমিশনের (8th Pay Commission) বাস্তবায়ন নিয়ে আলোচনার পারদ ক্রমেই চড়ছে। যদিও পূর্বে অনুমান করা…

8th Pay Commission Salary Hike

কেন্দ্রীয় সরকার কর্মচারী ও পেনশনভোগীদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ৮ম কেন্দ্রীয় বেতন কমিশনের (8th Pay Commission) বাস্তবায়ন নিয়ে আলোচনার পারদ ক্রমেই চড়ছে। যদিও পূর্বে অনুমান করা হয়েছিল ২০২৬ সালের ১ জানুয়ারি থেকে এই কমিশনের সুপারিশ কার্যকর হবে, তবে সাম্প্রতিক রিপোর্ট অনুযায়ী বাস্তবায়নে বিলম্ব হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। তবে এক গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উঠে আসছে—২০২৬ সালের ১ জানুয়ারির পর যারা অবসর নেবেন, তারা কি বিলম্বিত হলেও এই বেতন কমিশনের সুবিধা পাবেন?

কী অবস্থায় রয়েছে ৮ম বেতন কমিশন?
২০২৫ সালের জানুয়ারিতে কেন্দ্রীয় সরকার ৮ম বেতন কমিশনের ঘোষণা করলেও এখনও পর্যন্ত কমিশনের চেয়ারম্যান, সদস্য এবং টার্মস অব রেফারেন্স (ToR) নির্ধারিত হয়নি। যদিও গত মাসে কেন্দ্রীয় সরকার এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে যে কমিশনের জন্য প্রায় ৩৫টি পদে নিয়োগ হবে প্রেষণ ভিত্তিতে (deputation)। এই পদক্ষেপই স্পষ্ট ইঙ্গিত দিচ্ছে যে কাজ এগোচ্ছে ধীরে, যার ফলে বাস্তবায়নে বিলম্ব অনিবার্য হয়ে উঠছে।

   

সাধারণত, প্রতি ১০ বছর অন্তর কেন্দ্রীয় বেতন কমিশন গঠিত হয়। শেষ (৭ম) বেতন কমিশন ২০১৬ সালের ১ জানুয়ারি থেকে কার্যকর হয়েছিল এবং তার মেয়াদ শেষ হচ্ছে ২০২৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর। ফলে ৮ম কমিশন কার্যকর হওয়ার স্বাভাবিক সময় ছিল ২০২৬ সালের শুরু থেকে। কিন্তু বাস্তবে তা সম্ভবত ২০২৬ সালের শেষ অথবা ২০২৭ সালের শুরুতে গিয়ে পৌঁছাবে।

কেন বিলম্ব হচ্ছে?
সরকারের তরফে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনও সময়সীমা ঘোষণা না হলেও, বিলম্বের কারণ হিসেবে বিশেষজ্ঞরা কয়েকটি বিষয়কে দায়ী করছেন। প্রথমত, সরকারের আর্থিক ভারসাম্য রক্ষা করা অন্যতম চ্যালেঞ্জ। দ্বিতীয়ত, “আয়ক্রয়ড সূত্র” (Aykroyd formula) এবং মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সংযুক্ত বেতন সংশোধনের মতো বিকল্প ব্যবস্থা আলোচনা পর্যায়ে রয়েছে, যদিও এখনও পর্যন্ত এগুলি পূর্ণাঙ্গ বেতন কমিশনের বিকল্প হয়ে ওঠেনি।

২০২৬ সালের ১ জানুয়ারির পর অবসর নিলে কি সুবিধা পাওয়া যাবে?
এই প্রশ্নই বর্তমানে বহু সরকারি কর্মচারী ও পেনশনপ্রার্থীর চিন্তার মূল কারণ। তবে অতীতের অভিজ্ঞতা বলছে, যদি কমিশনের সুপারিশ পরে কার্যকর হয়, তবে তা প্রায়শই পূর্বনির্ধারিত তারিখ থেকে কার্যকর ধরা হয়—এক্ষেত্রে ২০২৬ সালের ১ জানুয়ারি থেকে। ফলে যারা ওই তারিখের পরে অবসর নেবেন, তারাও নতুন কাঠামো অনুযায়ী পেনশন এবং সম্ভবত বকেয়া বেতন পাবেন। ২০১৬ সালে ৭ম কমিশনের ক্ষেত্রেও অনেক অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারী নতুন কাঠামোর সুবিধা সহ বকেয়া অর্থ পেয়েছিলেন।

Advertisements

কতটা বেতন বৃদ্ধি হতে পারে?
যদিও সরকারিভাবে কোনও ঘোষণা এখনও আসেনি, তবে বিভিন্ন কর্মচারী সংগঠন ও বিশেষজ্ঞরা অনুমান করছেন যে ন্যূনতম মূল বেতন (Minimum Basic Pay) বর্তমান ১৮,০০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২৬,০০০ টাকা পর্যন্ত করা হতে পারে। এটি হবে প্রায় ৪৪ শতাংশ বর্ধিত। এই হিসাব অনুযায়ী ফিটমেন্ট ফ্যাক্টর (Fitment Factor)—যা একটি নির্দিষ্ট গুণক, যার মাধ্যমে বেতন পুনর্গঠন হয়—হতে পারে ১.৯৬। যদিও কিছু রিপোর্টে ১.৯২ ফিটমেন্ট ফ্যাক্টরের কথাও বলা হয়েছে।

এই হার অনুসারে, লেভেল-১ এর কেন্দ্রীয় সরকার কর্মচারীরা প্রায় ১৫,০০০ টাকার মতো অতিরিক্ত বেতন পেতে পারেন, যা বাস্তবে প্রায় ৪০ শতাংশ বর্ধিত গ্রস বেতন। এই বৃদ্ধির ফলে কেন্দ্রীয় কর্মচারীদের জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধি পাওয়া যেমন সম্ভব, তেমনই দেশজ অর্থনীতিতেও একটি ইতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।

যদিও ৮ম বেতন কমিশনের বাস্তবায়নে বিলম্ব নিশ্চিত মনে করা হচ্ছে, তবে পূর্বনির্ধারিত তারিখ থেকে সুপারিশ কার্যকর হওয়ার সম্ভাবনার কারণে, ২০২৬ সালের ১ জানুয়ারির পর অবসরপ্রাপ্তদের আশাহত হওয়ার কারণ নেই। কমিশনের কাঠামো, সদস্য মনোনয়ন এবং টার্মস অব রেফারেন্স দ্রুত চূড়ান্ত হলে প্রক্রিয়া গতি পাবে বলে আশা করা যায়।

তবে এখনই চূড়ান্ত কিছু বলার সময় আসেনি। কেন্দ্রীয় কর্মচারীদের উচিত হবে সরকারী আপডেটের দিকে নজর রাখা এবং কর্মচারী সংগঠনগুলির পরামর্শ অনুযায়ী নিজেদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সাজানো। সঠিক পরিকল্পনার মাধ্যমে এই পরিবর্তনকে নিজেদের পক্ষে কাজে লাগানো সম্ভব হবে।