রবীন্দ্রনাথের ‘বিজয়া’র দেশ আর্জেন্টিনা থেকে বাংলাদেশের জন্য অনাবিল শুভেচ্ছা

প্রসেনজিৎ চৌধুরী: ‘বিজয়া’র দেশ থেকে নীল-সাদা শুভেচ্ছা! এই শুভেচ্ছা এসেছে বিজয় আনন্দ নিয়ে। ফুটবলে বিশ্বজয়ী আর্জেন্টিনার (Argentina) তরফে বাংলাদেশকে (Bangladesh) দেওয়া আবেগময় বার্তা পৌঁছে গেল…

প্রসেনজিৎ চৌধুরী: ‘বিজয়া’র দেশ থেকে নীল-সাদা শুভেচ্ছা! এই শুভেচ্ছা এসেছে বিজয় আনন্দ নিয়ে। ফুটবলে বিশ্বজয়ী আর্জেন্টিনার (Argentina) তরফে বাংলাদেশকে (Bangladesh) দেওয়া আবেগময় বার্তা পৌঁছে গেল ঢাকায়-বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী (Sheikh Hasina) শেখ হাসিনার কাছে। এতে আরও আপ্লুত বাংলাদেশ সরকার। জানা যাচ্ছে, ঢাকায় দূতাবাস খুলতে আগ্রহী আর্জেন্টিনা সরকার।

কাতার বিশ্বকাপে রোমহর্ষক ফাইনাল খেলায় ফ্রান্সকে পরাজিত করে জয়ী আর্জেন্টিনা। বিশ্বকাপ চলাকালীন আর্জেন্টিনার সমর্থনে বাংলাদেশিদের আবেগ গোটা বিশ্বজুড়ে তীব্র আলোড়ন ফেলে দেয়। বারবার আর্জেন্টিনা জাতীয় দলের তরফে বাংলাদেশকে শুভেচ্ছা জানানো হয়। আর বিশ্বকাপ জয়ের পর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানিয়েছিলেন অভিনন্দন। তারই প্রত্যুত্তরে আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট আলবার্তো ফার্নান্ডেজ টুইটে লেখেন, ‘বাংলাদেশের সকল মানুষ এবং শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ। সাম্প্রতিক সময়ে আমরা যে বন্ধন এবং পারস্পরিক ভালোবাসা দেখেছি, তা বর্ণনাতীত। আজ দুই দেশের পতাকা এখানেও (আর্জেন্টিনায়) উড়ছে। আসুন এ বন্ধন আরও দৃঢ় করি।’

   

ঐতিহাসিক তথ্য বলছে, সুদূর দক্ষিণ আমেরিকার দেশ আর্জেন্টিনার সাথে বাঙালি আবেগ শুধুমাত্র ফুটবলকেন্দ্রীক নয়। এতে জড়িয়ে আছেন (Rabindranath) রবীন্দ্রনাথ ও (Victoria Ocampo) ভিক্টোরিয়া ওকাম্পো । আর্জেন্টাইন নারী অধিকার কর্মী ওকাম্পোর বাংলা নাম ‘বিজয়া’ দিয়েছিলেন কবি।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে সরাসরি সমর্থন করেছিলেন রবীন্দ্রনাথের বিজয়া-ওকাম্পো। আর্জেন্টিনা সরকারের উপর চাপ তৈরি করেছিলেন তিনি। বাংলাদেশ স্বাধীনতা পাওয়ার পর আর্জেন্টিনা সরকার দেয় তাদের তরফে স্বীকৃতি। তাৎপর্যপূর্ণ ডিসেম্বর মাস বাংলাদেশের কাছে বিজয়ের মাস। ১৯৭১ সালে পাক শাসন থেকে মুক্তি পেতে রক্তাক্ত মুক্তিযুদ্ধে নেমে বিজয় ও বাংলাদেশ তৈরি হয়েছিল ডিসেন্বর মাসেই। আর এই মাসেই দীর্ঘ তিন দশক পর ফের বিশ্বসেরা আর্জেন্টিনা।

আর্জেন্টিনার সাথে রবীন্দ্রনাথের গভীর সম্পর্কের সেতু ওকাম্পো। এই সম্পর্ক  তীব্র চর্চিত। ভিক্টোরিয়া ওকাম্পো আন্তর্জাতিক নারী অধিকার কর্মী ও সাহিত্যিক। তিনিই ইউনেস্কো (UNESCO) প্রতিষ্ঠার একজন প্রধান উদ্যোগী। ইউনেস্কোর তরফে ঢাকার রক্তাক্ত ভাষা আন্দোলনকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়।

১৯১৩ সালে  রবীন্দ্রনাথ পান সাহিত্যে নোবেল। আর  ১৯১৪ সালে গীতাঞ্জলি  ফরাসি ভাষায় অনুদিত হয়। সেই অনুবাদ পড়েই আর্জেন্টিনার নারীবাদী কর্মী ভিক্টোরিয়া ওকাম্পো রবীন্দ্রনাথের অনুরাগী হন। ১৯২৪ সালে রবীন্দ্রনাথ  পেরু ও মেক্সিকো ভ্রমণে গিয়ে অসুস্থ হন। তিনি আর্জেন্টিনায় পৌঁছে চিকিৎসা করান। আর্জেন্টিনায় যাত্রা বিরতির সময় ভিক্টোরিয়া ওকাম্পোর আতিথ্যে ছিলেন রবীন্দ্রনাথ।

ভিক্টোরিয়া ওকাম্পোর নাম বিজয়া রেখেছিলেন রবীন্দ্রনাথ। ১৯২৫ সালে পূরবী  কাব্যগ্রন্থ বিজয়াকেই  উৎসর্গ করেন। ১৯৩০ সালে প্যারিসে রবীন্দ্রনাথের প্রথম চিত্র প্রদর্শনীর আয়োজনে উদ্যোগী ভুমিকা পালন করেন ভিক্টোরিয়া। সেই ছিল তাদের দ্বিতীয় ও শেষ দেখা। ১৯৪১ সালে রবীন্দ্রনাথের প্রয়াণ হয়। বিজয়া অর্থাৎ ওকাম্পো প্রয়াত হন ১৯৭৯ সালে।  আর্জেন্টিনার ভয়াবহ সামরিক শাসনের তীব্র বিরোধিতা করে জেলে বন্দি ছিলেন ওকাম্পো।

রবীন্দ্রনাথ বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীতের রচয়িতা। সবমিলে ফুটবল বিশ্বকাপ জয়ের আনন্দে বাংলাদেশের তুুমুল উল্লাস গোটা বিশ্ব জুড়ে আলোড়ন ফেলে দিয়েছে।