Lotus Farming Guide: পদ্ম চাষ করে লক্ষ লক্ষ টাকা রোজগার করা সম্ভব

Lotus Farming Guide: কথিত আছে যে কাদা বা নোংরা জল যেখানে, সেখানে পদ্ম জন্মে। তবে একটি বিশেষ বিষয় হলো পদ্ম চাষ আজ দেশে এমন একটি চাষে পরিণত হয়েছে যা হাজার হাজার কৃষকের ঘরে সুখের পদ্ম এনে দিয়েছে।

Lotus Farming

Lotus Farming Guide: কথিত আছে যে কাদা বা নোংরা জল যেখানে, সেখানে পদ্ম জন্মে। তবে একটি বিশেষ বিষয় হলো পদ্ম চাষ আজ দেশে এমন একটি চাষে পরিণত হয়েছে যা হাজার হাজার কৃষকের ঘরে সুখের পদ্ম এনে দিয়েছে। মনে করা হয় পদ্ম শুধু পুকুর বা হ্রদে জন্মে, কিন্তু আজ দেশের হাজার হাজার কৃষক তাদের ক্ষেতে পদ্ম চাষ করে প্রচুর লাভ করছে। চাষিরা মাছ চাষের পাশাপাশি এই চাষও করতে পারছেন। মাত্র তিন মাসে তৈরি হওয়া পদ্মফসলের রয়েছে দারুণ ওষুধি গুণ। বিশেষজ্ঞদের মতে, পদ্ম চাষ একটি অধিক লাভজনক চাষ। এর মাধ্যমে কৃষকরা কম খরচে বেশি আয় করতে পারবেন।

এই পোস্টে আমরা কৃষক ভাইদের কিভাবে পদ্ম চাষ করতে হয়, পদ্ম চাষের পদ্ধতি, পদ্ম শসা চাষের গুরুত্ব, পদ্ম কেন চাষ করা উচিত, পদ্ম চাষ থেকে কত আয় করা যায়, এই সব তথ্য দিচ্ছি। .

কেন পদ্ম চাষ করা উচিত?
কৃষক ভাইয়েরা, পদ্ম চাষের হাজার বছরের ইতিহাস রয়েছে। এমনকি বর্তমান প্রেক্ষাপটেও পদ্ম চাষের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। কেন পদ্ম চাষ করা উচিত তার সর্বোত্তম উত্তর হল এই চাষ শুধুমাত্র কৃষকদের আর্থিকভাবে শক্তিশালী করে না, এই চাষের নিজস্ব কিছু গুরুত্বও রয়েছে। আসুন জেনে নিই কেন

পদ্ম চাষ গুরুত্বপূর্ণ।
ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক গুরুত্ব: ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক দৃষ্টিকোণ থেকেও পদ্ম চাষের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। হিন্দু ধর্ম, বৌদ্ধ বা তাও ধর্ম যাই হোক না কেন, বেশিরভাগ ধর্মেই পদ্মের একটি বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। পদ্মের ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক চাহিদাও রয়েছে।

পদ্মে বিদ্যমান ঔষধি গুণাগুণ: পদ্মমূল, পদ্মের বীজ এবং পদ্ম ফুলের অনেক ঔষধি গুণ রয়েছে। হজম শক্তি বৃদ্ধি এবং অনিদ্রা নিরাময় অর্থাৎ ঘুম সংক্রান্ত রোগের পাশাপাশি উদ্বেগ দূর করার মতো অনেক ক্ষেত্রে পদ্মের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। পদ্ম পাতা, বীজ এবং শিকড় সবই ঔষধিগতভাবে বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। যারা ঔষধি চাষ করেন তাদের জন্য পদ্ম চাষের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে।

পদ্মের খাদ্য উৎস: পদ্ম ফুল মানুষ ও প্রাণী উভয়ের খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। পদ্মের বীজ, পাতা এবং শিকড় সবই ভোজ্য। এছাড়া পদ্মকে খাবার ও পানীয় সুন্দর দেখাতে এবং সাজসজ্জায় ব্যবহার করা হয়।

এ ছাড়া পদ্ম চাষের পরিবেশগত উপকারিতাও রয়েছে। পদ্ম চাষ পানিকে দূষণ থেকে পরিষ্কার করে এবং বন্যপ্রাণীর উন্নতি ঘটায়। পুকুরের পানির গুণমান বজায় রাখার জন্য পুকুরেও পদ্ম ব্যবহার করা হয়। এছাড়া পদ্ম চাষের অর্থনৈতিক গুরুত্ব অনেক। কারণ পদ্ম শুধু ওষুধেই ব্যবহৃত হয় না, সুগন্ধি ও প্রসাধনী তৈরিতেও ব্যবহৃত হয়।

পদ্ম চাষের জন্য কি কি জিনিস প্রয়োজন?
ভালো মানের পদ্মের বীজ কিনুন।
পদ্ম চাষের জন্য পুকুর বা মাঠ ব্যবহার করা যেতে পারে।
মিষ্টি পানি থাকা দরকার, লোনা পানিতে পদ্ম চাষ করা যায় না।

পদ্মের সেরা জাত কোনটি?
পদ্মফুল দুই প্রকার, কুমুদনী ও উৎপল। উৎপলকে নীল কমলও বলা হয়। চাহিদা অনুযায়ী যেকোনো ফুল লাগাতে পারেন। পদ্মের উভয় জাতই খুব ভালো। যাইহোক, আপনি লাল পদ্ম, সাদা পদ্ম, হলুদ, নীল, গোলাপী পদ্ম ইত্যাদির মতো অনেক রঙের পদ্ম ফুল পাবেন। আপনার এলাকার পরিবেশ অনুযায়ী পদ্মের জাত বেছে নিন। এর জন্য, আপনি আপনার এলাকার নিকটস্থ কৃষক উপদেষ্টার সাথে যোগাযোগ করে তথ্য পেতে পারেন।

কিভাবে পদ্ম বীজ অঙ্কুর
পদ্মের বীজ অঙ্কুরিত করার পদ্ধতি সম্পর্কে বলতে গেলে, প্রথমে আপনার বাজার থেকে ভাল এবং উচ্চমানের পদ্মের বীজ কেনা উচিত। আসুন আমরা আপনাকে বলি যে পদ্মের বীজের খোসা খুব শক্ত, তাই এটি আগে থেকেই অঙ্কুরিত করা উচিত। বীজগুলিকে একটু ঘষে পরিষ্কার জলে ফেলে দিন এবং বীজগুলি অঙ্কুরিত হতে ছেড়ে দিন, বীজ অঙ্কুরিত হলে পুকুরের গভীরে পুঁতে দিন। মনে রাখবেন নীচের কালো মাটি ছড়িয়ে দিলেই বীজ টিপুন।

পদ্ম গাছের যত্ন নেওয়ার উপায়
পদ্ম চাষের ব্যাপারে কৃষক ভাইদের প্রায়ই প্রশ্ন থাকে যে পদ্ম গাছের যত্ন কিভাবে নিবেন? পদ্মের বীজ অঙ্কুরিত হয়ে গেলে পর্যাপ্ত পরিচর্যা প্রয়োজন। সঠিক সময়ে যত্ন না নিলে ফসল নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। পানি বিশুদ্ধ রাখুন, পানিতে সার ও এনপিকেও ব্যবহার করা যেতে পারে। সরাসরি NPK ঢালার পরিবর্তে, এটি কাপড়ের সাথে মিশ্রিত করা ভাল। যদি কখনো পদ্ম গাছে পোকামাকড়ের আক্রমণের লক্ষণ দেখেন, নিমের তেল স্প্রে করুন এবং পচা পাতা অপসারণ করতে ভুলবেন না।

মাছ চাষের পাশাপাশি পদ্ম চাষ করুন।
দ্বিগুণ লাভের জন্য কৃষককে মাছ চাষের পাশাপাশি পদ্ম চাষ করতে হবে। মাছ চাষের পাশাপাশি এই চাষ করে চাষিরা শুধু মাছ থেকে লাভবান হবেন না, পদ্ম চাষে বাড়তি লাভও করবেন। এতে কৃষকদের আয় বাড়বে। আমরা যদি পদ্ম চাষ থেকে আয়ের কথা বলি, তাও কম নয়, অনেক চাষিই প্রশ্ন করেন পদ্ম চাষ করে কত আয় করা যায়, তাহলে আপনাদের জানাই এক বান্ডিল পদ্ম বিক্রি হয় ২০ থেকে ৩০ টাকায়। এক একরে পদ্ম চাষ করলে একজন কৃষক তিন মাসে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত আয় করতে পারে, এক একর পদ্ম চাষ করে বছরে ২ লাখ টাকা আয় করতে পারে।

পদ্ম চাষ সংক্রান্ত কিছু প্রশ্ন ও উত্তর
1) কিভাবে পদ্ম চাষ করবেন?
উত্তর: মাছ চাষের পাশাপাশি পদ্ম চাষ করা উপযুক্ত, কারণ এতে কৃষকরা দ্বিগুণ লাভ করতে পারেন। যদি জমিতে পদ্ম চাষ করা হয়, তাহলে গভীর লাঙ্গল প্রয়োজন। চাষের পর জমিতে পদ্মের শিকড় লাগান। পদ্মের শিকড় রোপণের পর, গাছটি বড় না হওয়া পর্যন্ত এর বিশেষ যত্ন নিন। গাছটি আসার পরে, পাতা এবং পাতার স্বাস্থ্যের দিকে নজর রাখুন। পোকামাকড়ের উপদ্রব থাকলে নিয়মিত নিমের তেল ছিটিয়ে দিন। খারাপ পাতাগুলো তুলে ফেলুন এবং যে কোনো গাছপালা নষ্ট হয়ে গেলেও পানি থেকে বের করে নিতে হবে।

2) পদ্ম চাষ কোন মাসে বপন করা হয়?
উত্তর- পদ্ম চাষের কথা বললে, জুলাই বা আগস্ট মাসে পদ্ম বপন করা সবচেয়ে উপযুক্ত বলে মনে করা হয়। যে সকল কৃষক পদ্ম কন্দ চাষ করেন তাদের এই মাসগুলিতে বপন করা উচিত।

3) পদ্ম আহরণ কোন মাস থেকে শুরু হয়?
উত্তর- অক্টোবর থেকে নভেম্বরের মধ্যে পদ্ম কাটা শুরু হয়। এই উদ্ভিদে যত বেশি নোড থাকবে, তত বেশি ফুল উৎপন্ন হবে।

4) পদ্ম চাষের সুবিধা বা উপকারিতা কি?
উত্তর : মাছ চাষের পাশাপাশি পদ্ম চাষ করা যায়। একভাবে কৃষকের দ্বিগুণ লাভ হয়।

5) পদ্ম গাছের জন্য কোন মাটি ভালো?
উত্তর: পানিতে পদ্ম চাষ করা হলেও পানির গোড়ায় কালো মাটি ছড়িয়ে দিলে বীজের অঙ্কুরোদগম সহজ হয় এবং কৃষকরা বেশি ফসল উৎপাদন করতে সক্ষম হয়।

6) আমরা কি বাড়িতে পদ্ম জন্মাতে পারি?
উত্তর- হ্যাঁ, একেবারে, জলের ট্যাঙ্ক এবং টব পদ্ম জন্মাতে ব্যবহার করা যেতে পারে। পদ্ম সহজে বাড়তে, ট্যাঙ্কের নীচে কুঁড়ি মাটি ছড়িয়ে দিন এবং যত্ন নিতে থাকুন।

7) ভারতের কোথায় পদ্ম জন্মে?
উত্তর- ভারতের সর্বত্রই পদ্মের চাষ হয়।

9) ভারতে পদ্ম জন্মানোর সেরা ঋতু কোনটি?
উত্তর- জুলাই বা আগস্ট মাসে পদ্মের কন্দ বপন করা সবচেয়ে উপযোগী।