শিবরাত্রির পর এবার হোলির রঙে রঙিন হতে চলেছে কাশী। বেনারসে হোলির সূচনা হয় রংভরি একাদশী দিয়ে। এই দিনে বাবা বিশ্বনাথ (Kashi Vishwanath) গৌর অর্থাৎ মা পার্বতীর গৌড় সংগ্রহ করতে যান। কাশীর মানুষ রং-গুলাল নিয়ে বাবার সঙ্গে হোলি খেলতে গিয়ে এই গাঁয়ে যোগ দেয়।
এ সময় বাবা বিশ্বনাথের রৌপ্য মূর্তিকে খাদি কাপড় ও আকবরী টুপি পরানো হয়। দারুণ ব্যাপার হল বেনারসের একটি মুসলিম পরিবার গত আড়াইশো বছর ধরে এই আকবরী টুপি তৈরি করে। যাদের তারা মজুরিও নেয় না। প্রতিবারের মতো এবারও বাবার বিশেষ পাগড়ি তৈরি হচ্ছে, যার জন্য জড়ো হয়েছেন মুসলিম পরিবার।
বেনারসের অযত্ন, ভক্তি, সঙ্গীত এবং খাবার এর বুননের মতোই বিখ্যাত। এই বুননে গঙ্গা যমুনি-সংস্কৃতির সুতোকে অত্যন্ত মজবুত মনে করা হয়, কারণ বেনারসের লাল্লাপুরা এলাকায় বসবাসকারী গিয়াসউদ্দিনের পরিবার এই সুতোকে শক্ত করে ধরে রেখেছে। গিয়াসউদ্দিনের পরিবার প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে বাবা বিশ্বনাথের রৌপ্য মূর্তির জন্য বিশেষ পাগড়ি তৈরি করে।
রংভরী একাদশীতে বাবা এই পাগড়ি পরে গৌর অর্থাৎ পার্বতীকে নিতে শ্বশুর বাড়িতে যান। এই সময় থেকে বেনারসে হোলি উৎসব শুরু হয়। বাবার রৌপ্য মূর্তি যখন খাদির পোশাক পরে এবং পাগড়ি পরে বেরিয়ে আসে, ভক্তরা তার দিকে তাকিয়ে থাকে। বড় কথা হল বাবা বিশ্বনাথের মহন্ত পরিবার মুসলিম পরিবার থেকে পাগড়ি বানানো শুরু করেছিল, যা আজও চলছে।
বাবার কৃপা ও ভক্তির সুযোগ পেলাম
গিয়াসউদ্দিন বলেন, এই পর্বটি শুরু হয়েছিল তার প্রপিতামহকে দিয়ে। যারা রংভারী একাদশীতে বাবার রৌপ্য মূর্তির জন্য পাগড়ি তৈরি করেন। গত ২৫০ বছর ধরে তার পরিবার এই বিশেষ পাগড়ি তৈরি করে। যার জন্য কোনো ফি নেওয়া হয় না। গিয়াসউদ্দিন জানান যে তিনি সবসময় বাবার কৃপা ও ভক্তি করার সুযোগ পেয়েছেন, যা তিনি এবং তার পরিবার আনন্দের সাথে করেন।
এটাই বেনারসের সৌন্দর্য। প্রতিটি সম্প্রদায় বেনারসের হোলিতে অংশ নেয়। হোলির রঙে ধর্ম আর জাত দুটোই মিশে যায়। যেখানে প্রতিটি সম্প্রদায়কে তাদের প্রধান ভূমিকা পালন করতে দেখা যায়। তাদের মধ্যে একটি হল এই মুসলিম পরিবার, যারা গত আড়াইশ বছর ধরে খুব ভালোভাবে এই দায়িত্ব পালন করে আসছে।