একটি বা দুটি নয়, ১১টি দুর্নীতির মামলায় দোষী সাব্যস্ত হলেন মায়ানমারের গণতন্ত্রকামী নেত্রী আউং সান সুকি (Aung San Suu Kyi)। বুধবার বর্মী সেনা পরিচালিত সরকারের আদালত নোবেলজয়ী নেত্রীর পাঁচ বছরের কারাদণ্ড ঘোষণা করেছে।
১১টি দুর্নীতির মামলায় দোষী সাব্যস্ত সুকির ৫ বছরের কারাদণ্ড দিয়ে মায়ানমারে গণতন্ত্রের আন্দোলনকে দমাতে চাইছে বর্মী সেনার সরকার। এমনই অভিযোগ আন্তর্জাতিক মহলের।
তবে সুকির সাজা এখানেই শেষ নয়। সুকির বিরুদ্ধে আরও ১৮টি অভিযোগ রয়েছে। প্রতিটি মামলায় যদি তিনি দোষী সাব্যস্ত হন তাহলে সুকির ১৯০ বছর জেল হতে পারে।
সংবাদসংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, রাজধানী নেপিদে ১১টি দুর্নীতির মামলায় সুকির বিরুদ্ধে শুনানি হয়েছে। লৌহ কপাটের আড়ালে দীর্ঘদিন ধরে চলেছে সওয়াল-জবাব। শেষ পর্যন্ত সুকির বিরুদ্ধে অপরাধ প্রমাণ হওয়ায় তাঁর পাঁচ বছরের কারাদণ্ড হয়েছে। তবে সুকির সমর্থকদের দাবি, পরিকল্পিতভাবে জুন্টা প্রশাসনের নির্দেশেই এভাবে নেত্রীকে ফাঁসানো হয়েছে।
সুকির বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় অভিযোগ করেছেন ইয়াঙ্গনের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ফিও মিন থেন। একদা সুকির অনুগামী হিসেবেই পরিচিত ছিলেন থেন। তিনি অভিযোগ করেছেন, সুকি সোনা ও টাকা মিলিয়ে তাঁর কাছ থেকে প্রায় ছয় লক্ষ ডলার নিয়েছেন।এই অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা বলে জানিয়েছেন সুকি। মায়ানমার আদালতের এই রায়ের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যেই সরব হয়েছে আন্তর্জাতিক দুনিয়া। তারা অবিলম্বে সুকির মুক্তির দাবি জানিয়েছে।
তবে আন্তর্জাতিক চাপের কাছে কোনওভাবেই মাথা নোয়াতে রাজি নয় মায়ানমারেরসেনা প্রশাসন। বর্মী সেনাবাহিনীর প্রধান মিন হ্লাইং জানিয়েছেন, সমস্ত মামলার রায় ঘোষণা না হওয়া পর্যন্ত সুকিকে জেলেই থাকতে হবে।
২০২১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি হঠাৎ মায়ানমারের নির্বাচিত সরকারকে সরিয়ে দিয়ে রক্তপাতহীন অভ্যুত্থানে ক্ষমতা দখল করে সেনাবাহিনী। তারপর থেকেই সেনার নির্দেশে বন্দি রয়েছেন সুকি। গণতন্ত্রকামী এই নেত্রীর বিরুদ্ধে ভোটে কারচুপি, আর্থিক দুর্নীতি সহ একাধিক অভিযোগ আনা হয়েছে। এমনকী, ভোট প্রচারে করোনা বিধি ভাঙার অভিযোগ রয়েছে নোবেলজয়ী এই নেত্রীর বিরুদ্ধে। সেনা ক্ষমতা দখলের পর রক্তাক্ত হচ্ছে মায়ানমার। সেনার গুলিতে সুকি অনুরাগী ও বহু সাধারণ মানুষ মৃত।
২০২০ সালে বিরোধীদের উড়িয়ে দিয়ে দেশের ক্ষমতা দখল করেছিল সুকির দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসি। মায়ানমার সংসদের নিম্নকক্ষের ৪২৫ টির মধ্যে ৩৪৬টি আসনে জয়ী হয়েছিল এনএলডি। কিন্তু ক্ষমতা দখলের কিছুদিন পরেই রোহিঙ্গা ইস্যু থেকে শুরু করে বিভিন্ন বিষয়ে সেনাবাহিনীর সঙ্গে সরকারের দূরত্ব তৈরি হয়। তারপরই দেশে সেনা অভ্যুত্থান ঘটে।