কসবা কাণ্ডের প্রতিবাদে শিলিগুড়িতে বিজেপি মহিলা মোর্চার ‘মশাল মিছিল’

দক্ষিণ কলকাতার সাউথ কলকাতা ল কলেজে ২৫ জুন সন্ধ্যায় এক ছাত্রীর উপর ঘটে যাওয়া নৃশংস গণধর্ষণের ঘটনার প্রতিবাদে শিলিগুড়িতে (BJP Mahila Morcha)ভারতীয় জনতা পার্টির (BJP)…

BJP Mahila Morcha at shiliguri

দক্ষিণ কলকাতার সাউথ কলকাতা ল কলেজে ২৫ জুন সন্ধ্যায় এক ছাত্রীর উপর ঘটে যাওয়া নৃশংস গণধর্ষণের ঘটনার প্রতিবাদে শিলিগুড়িতে (BJP Mahila Morcha)ভারতীয় জনতা পার্টির (BJP) মহিলা মোর্চা একটি ‘মশাল মিছিল’ আয়োজন করেছে। লোয়ার বাগডোগরা গোসাইনপুর মণ্ডল বিজেপি মহিলা মোর্চার নেতৃত্বে এই মিছিল বাগডোগরা থানার সামনে অনুষ্ঠিত হয়।

মিছিলে অংশগ্রহণকারীরা অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির দাবি জানান এবং তৃণমূল কংগ্রেস (TMC) সরকারের অধীনে মহিলাদের নিরাপত্তার অভাব নিয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এই ঘটনা পশ্চিমবঙ্গে নারী নিরাপত্তা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন তুলেছে এবং রাজনৈতিক বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।

   

২৫ জুন সন্ধ্যা ৭:৩০ থেকে ১০:৫০-এর মধ্যে সাউথ (BJP Mahila Morcha)কলকাতা ল কলেজে এক ২৪ বছর বয়সী প্রথম বর্ষের ছাত্রী গণধর্ষণের শিকার হন। ভুক্তভোগীর অভিযোগ অনুযায়ী, প্রধান অভিযুক্ত মনোজিৎ মিশ্র (৩১), যিনি কলেজের প্রাক্তন ছাত্র এবং তৃণমূল ছাত্র পরিষদের (TMCP) দক্ষিণ কলকাতা জেলার সাধারণ সম্পাদক, তিনি এই অপরাধের মূল পরিকল্পনাকারী।

তার সঙ্গে গ্রেফতার হয়েছেন দুই বর্তমান ছাত্র, জায়েব আহমেদ (১৯) এবং প্রমিত মুখোপাধ্যায় (২০), এবং কলেজের নিরাপত্তারক্ষী পিনাকী ব্যানার্জি (৫৫)। পুলিশ জানিয়েছে, অভিযুক্তরা ধর্ষণের ভিডিও ধারণ করেছিল এবং তা দিয়ে ভুক্তভোগীকে হুমকি দিয়েছিল।

সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে, ভুক্তভোগীকে জোর করে নিরাপত্তারক্ষীর কক্ষে নিয়ে যাওয়া হয়। চিকিৎসা পরীক্ষায় ভুক্তভোগীর গলায় এবং বুকে ঘর্ষণের চিহ্ন, দাঁতের কামড় এবং নখের আঁচড়ের প্রমান পাওয়া গেছে।

শিলিগুড়ির বাগডোগরা থানার সামনে বিজেপি মহিলা মোর্চার (BJP Mahila Morcha) নেত্রী জ্যোৎস্না বর্মণের নেতৃত্বে এই মশাল মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। বিক্ষোভকারীরা শ্লোগান দিয়ে এবং মশাল হাতে রাস্তায় মিছিল করে এই নৃশংস ঘটনার তীব্র নিন্দা জানান। জ্যোৎস্না বর্মণ বলেন, “অভিযুক্তদের গ্রেফতার করা হলেও, এই পদক্ষেপ কেবল পৃষ্ঠস্থ।

আমরা মনে করি, শাসক দলের আশ্রয়ে এই অপরাধ সংঘটিত হয়েছে। ন্যায়বিচার নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত আমাদের প্রতিবাদ চলবে।” মিছিলে অংশগ্রহণকারীরা তৃণমূল সরকারের উপর নারী নিরাপত্তায় ব্যর্থতার অভিযোগ তুলে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পদত্যাগ দাবি করেন।

এই ঘটনা পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেস এবং বিজেপির মধ্যে তীব্র রাজনৈতিক বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। বিজেপির আইটি সেল প্রধান অমিত মালব্য এক্স-এ পোস্ট করে বলেন, “মনোজিৎ মিশ্র তৃণমূলের শীর্ষ নেতা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য এবং কাউন্সিলর কাজরী বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে ছবিতে দেখা গেছে। এটি কেবল একটি অপরাধ নয়, তৃণমূলের সর্বোচ্চ পর্যায়ের আড়াল করার চেষ্টা।” তিনি আরও বলেন, “তৃণমূল বাংলাকে মহিলাদের জন্য দুঃস্বপ্নে পরিণত করেছে।”

বিজেপির (BJP Mahila Morcha) জাতীয় সভাপতি জে পি নড়্ডা এই ঘটনার তদন্তের জন্য একটি চার সদস্যের কমিটি গঠন করেছেন, যার মধ্যে রয়েছেন প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সতপাল সিং, মীনাক্ষী লেখী, সাংসদ বিপ্লব কুমার দেব এবং মানন কুমার মিশ্র। এই কমিটি শীঘ্রই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে রিপোর্ট জমা দেবে।

Advertisements

অন্যদিকে, তৃণমূল কংগ্রেস ঘটনাটির নিন্দা করে বলেছে, “আমরা এই জঘন্য অপরাধের তীব্র নিন্দা জানাই। কলকাতা পুলিশ ১২ ঘণ্টার মধ্যে তিনজন অভিযুক্তকে গ্রেফতার করেছে।” তৃণমূল নেতা তৃণাঙ্কুর ভট্টাচার্য জানান, মনোজিৎ মিশ্রের সঙ্গে দলের কোনও গুরুত্বপূর্ণ সম্পর্ক নেই।

তবে, তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্তব্য বিতর্কের সৃষ্টি করে। তিনি বলেন, “বন্ধু যদি বন্ধুকে ধর্ষণ করে, তাহলে সরকার কীভাবে সুরক্ষা দেবে?” এই মন্তব্যের জন্য বিজেপি তাকে “ধর্ষকদের পক্ষে” মন্তব্য হিসেবে সমালোচনা করে।

এই ঘটনার প্রতিবাদে কলকাতা এবং তার পার্শ্ববর্তী (BJP Mahila Morcha) এলাকায় ব্যাপক বিক্ষোভ শুরু হয়। বাম সমর্থিত ছাত্র সংগঠন এসএফআই এবং এআইডিএসও কসবা থানার সামনে মশাল মিছিল করে। এসএফআই-এর নবনির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক সৃজন ভট্টাচার্য বলেন, “শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা রাজ্য সরকারের দায়িত্ব। এই ঘটনা তৃণমূল শাসনের ব্যর্থতার প্রমাণ।” কংগ্রেস এবং সিপিআই(এম) কর্মীরাও হাওড়া এবং দুর্গাপুরে পৃথক বিক্ষোভ প্রদর্শন করে।

‘ধর্ষণকে ভোটের ইস্যু বানাবেন না’, হাওড়া থেকে কড়া বার্তা সায়নীর

শিলিগুড়ির (BJP Mahila Morcha) স্থানীয় বাসিন্দারা এই ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। একজন স্থানীয় বাসিন্দা, রীতা সাহা, বলেন, “শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এমন ঘটনা অত্যন্ত লজ্জাজনক। আমরা আমাদের মেয়েদের নিরাপত্তার জন্য রাস্তায় নেমেছি।” জাতীয় মহিলা কমিশনের (এনসিডব্লিউ) সদস্য অর্চনা মজুমদার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে বলেন, “পুলিশের সহযোগিতার অভাবে মনে হচ্ছে কিছু লুকানোর চেষ্টা চলছে।”

শিলিগুড়িতে বিজেপি মহিলা মোর্চার মশাল মিছিল এবং কলকাতায় কন্যা সুরক্ষা যাত্রা পশ্চিমবঙ্গে নারী নিরাপত্তার সংকটকে সামনে এনেছে। গত বছর আর জি কর মেডিক্যাল কলেজে ধর্ষণ-হত্যার ঘটনার পর এই ঘটনা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিরাপত্তার ঘাটতির বিষয়টি আরও জোরালোভাবে তুলে ধরেছে।

তৃণমূল সরকার ‘অপরাজিতা বিল’-এর বাস্তবায়নের কথা বললেও, বিজেপি এই ঘটনাকে রাজনৈতিকভাবে কাজে লাগিয়ে তৃণমূলের বিরুদ্ধে আক্রমণ শানিয়েছে। আগামী দিনে এই ঘটনা রাজ্যের রাজনৈতিক সমীকরণে নতুন মাত্রা যোগ করবে।