কন্যা সুরক্ষা যাত্রায় জনগণের সঙ্গে পা মেলালেন শুভেন্দু

গোলপার্কে আজ সন্ধ্যায় বিজেপির দক্ষিণ কলকাতা সাংগঠনিক জেলার উদ্যোগে আয়োজিত ‘কন্যা সুরক্ষা যাত্রা’-য় জনগণের সঙ্গে পা মিলিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী (Suvendu)। দক্ষিণ কলকাতার…

Suvendu joins in rally

গোলপার্কে আজ সন্ধ্যায় বিজেপির দক্ষিণ কলকাতা সাংগঠনিক জেলার উদ্যোগে আয়োজিত ‘কন্যা সুরক্ষা যাত্রা’-য় জনগণের সঙ্গে পা মিলিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী (Suvendu)। দক্ষিণ কলকাতার কসবা এলাকায় অবস্থিত সাউথ কলকাতা ল কলেজে এক ছাত্রীকে নৃশংস গণধর্ষণের ঘটনার প্রতিবাদে শুরু হয় এই যাত্রা। ‘ছি মমতা ছি’ স্লোগান লেখা প্ল্যাকার্ড নিয়ে শুরু হয় এই যাত্রা । 

এই ঘটনাকে শুভেন্দু অধিকারী (Suvendu) তৃণমূল কংগ্রেস (টিএমসি) শাসনের অধীনে বাংলার আত্মার উপর আরেকটি কলঙ্ক হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, “তৃণমূল শাসনের ব্যর্থতার কারণে আরও কত নিরীহ মেয়ে ও মহিলাকে ভোগান্তি পোহাতে হবে? বারবার ঘটে চলা এই নৃশংসতা রাজ্য সরকারের অবহেলা এবং অযোগ্যতার লজ্জাজনক প্রতিফলন।”

   

ঘটনার পটভূমি

২০২৫ সালের ২৫ জুন সন্ধ্যা ৭:৩০ থেকে ১০:৫০-এর মধ্যে সাউথ কলকাতা ল কলেজের ক্যাম্পাসে এক ২৪ বছর বয়সী ছাত্রী গণধর্ষণের শিকার হন। অভিযোগ অনুযায়ী, প্রধান অভিযুক্ত মনোজিৎ মিশ্র (৩১), যিনি কলেজের প্রাক্তন ছাত্র এবং তৃণমূল ছাত্র পরিষদের (টিএমসিপি) দক্ষিণ কলকাতা জেলার সাধারণ সম্পাদক, তিনি এই অপরাধের মূল মাথা।

তার সঙ্গে অভিযুক্ত হিসেবে গ্রেফতার হয়েছেন দুই বর্তমান ছাত্র, (Suvendu) জায়েব আহমেদ (১৯) এবং প্রমিত মুখোপাধ্যায় (২০), এবং একজন নিরাপত্তারক্ষী পিনাকী ব্যানার্জি (৫৫)। পুলিশ জানিয়েছে, অভিযুক্তদের মোবাইল ফোনে ধর্ষণের ভিডিও পাওয়া গেছে, যা দিয়ে তারা ভুক্তভোগীকে হুমকি দিয়েছিল।

ভুক্তভোগীর অভিযোগ অনুযায়ী, তিনি পরীক্ষার ফর্ম জমা দিতে কলেজে গিয়েছিলেন। এ সময় কলেজের প্রধান গেট বন্ধ করে তাকে নিরাপত্তারক্ষীর কক্ষে নিয়ে যাওয়া হয়, যেখানে এই নৃশংস ঘটনা ঘটে। মনোজিৎ মিশ্র তাকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলেন, যা তিনি প্রত্যাখ্যান করায় তাকে হকি স্টিক দিয়ে আঘাত করা হয় এবং তার প্রেমিককে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়। চিকিৎসা পরীক্ষায় ভুক্তভোগীর শরীরে জোরপূর্বক অনুপ্রবেশ, দাঁতের কামড় এবং নখের আঁচড়ের চিহ্ন পাওয়া গেছে।

কন্যা সুরক্ষা যাত্রা ও বিজেপির প্রতিবাদ

এই ঘটনার প্রতিবাদে বিজেপির (Suvendu) দক্ষিণ কলকাতা সাংগঠনিক জেলা ‘কন্যা সুরক্ষা যাত্রা’র আয়োজন করে। শুভেন্দু অধিকারী এই যাত্রায় অংশ নিয়ে রাজ্য সরকারের তীব্র সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, “কলকাতা পুলিশের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা দিঘায় রথযাত্রায় ব্যস্ত ছিলেন, যখন এই ঘটনা ঘটে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পদত্যাগ করা উচিত।” তিনি এই ঘটনাকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তৃণমূলের দুর্নীতি ও অপরাধের প্রমাণ হিসেবে উল্লেখ করেন।

বিজেপির আইটি সেল প্রধান অমিত মালব্য (Suvendu) ঘটনাটিকে “ভয়াবহ” আখ্যা দিয়ে এক্স-এ পোস্ট করেন, “মনোজিৎ মিশ্র তৃণমূলের শীর্ষ নেতা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য এবং কাউন্সিলর কাজরী বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে ছবিতে দেখা গেছে। এটি কেবল একটি অপরাধ নয়, তৃণমূলের সর্বোচ্চ পর্যায়ের আড়াল করার চেষ্টা।” তিনি আরও বলেন, “তৃণমূল বাংলাকে মহিলাদের জন্য দুঃস্বপ্নে পরিণত করেছে।”

বিজেপির জাতীয় সভাপতি জে পি নড়্ডা (Suvendu) এই ঘটনার তদন্তের জন্য একটি চার সদস্যের কমিটি গঠন করেছেন, যার মধ্যে রয়েছেন প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সতপাল সিং, মীনাক্ষী লেখী, সাংসদ বিপ্লব কুমার দেব এবং মানন কুমার মিশ্র। এই কমিটি শীঘ্রই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে রিপোর্ট জমা দেবে।

তৃণমূলের প্রতিক্রিয়া

তৃণমূল কংগ্রেস (Suvendu) ঘটনাটির নিন্দা করে বলেছে, “আমরা এই জঘন্য অপরাধের তীব্র নিন্দা জানাই। কলকাতা পুলিশ ১২ ঘণ্টার মধ্যে তিনজন অভিযুক্তকে গ্রেফতার করেছে, এবং আইনের পূর্ণ শক্তি প্রয়োগ করে দোষীদের কঠোর শাস্তি দেওয়া হবে।” তৃণমূল নেতা তৃণাঙ্কুর ভট্টাচার্য জানান, মনোজিৎ মিশ্রের সঙ্গে দলের কোনও সম্পর্ক নেই এবং তিনি কোনও গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিলেন না।

Advertisements

তবে, তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্তব্য বিতর্কের সৃষ্টি করে। তিনি বলেন, “বন্ধু যদি বন্ধুকে ধর্ষণ করে, তাহলে সরকার কীভাবে সুরক্ষা দেবে? শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কি পুলিশ মোতায়েন করা হবে?” এই মন্তব্যের জন্য তৃণমূল দল তাকে সমর্থন না করলেও, বিজেপি এটিকে “ধর্ষকদের পক্ষে” মন্তব্য হিসেবে সমালোচনা করে।

এসএফআই-এর সর্বভারতীয় পদে নির্বাচিত বাংলার সৃজন

জনগণের প্রতিক্রিয়া ও বিক্ষোভ (Suvendu)

এই ঘটনার পর কলকাতা ও তার পার্শ্ববর্তী এলাকায় ব্যাপক বিক্ষোভ শুরু হয়। এসএফআই, এআইডিএসও এবং কংগ্রেসের ছাত্র ও যুব সংগঠন কসবা থানা এবং ল কলেজের সামনে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। এসএফআই-এর নবনির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক সৃজন ভট্টাচার্য এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করে বলেন, “শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মহিলাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা রাজ্য সরকারের দায়িত্ব। এই ঘটনা তৃণমূল শাসনের ব্যর্থতার প্রমাণ।”

বিজেপির বিক্ষোভের সময় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়, এবং রাজ্য বিজেপি সভাপতি সুকান্ত মজুমদারকে গ্রেফতার করা হয়। তিনি বলেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গণতন্ত্রকে ধ্বংস করেছেন। আমাদের প্রতিবাদের কণ্ঠস্বরকে দমন করা হচ্ছে।” তিনি ‘বেল বন্ড’ প্রত্যাখ্যান করে পুলিশ হেফাজত থেকে মুক্তি পান।

কন্যা সুরক্ষা যাত্রা এবং শুভেন্দু অধিকারীর (Suvendu) নেতৃত্বে বিজেপির প্রতিবাদ বাংলায় মহিলাদের নিরাপত্তা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন তুলেছে। গত বছর আর জি কর মেডিক্যাল কলেজে ধর্ষণ-হত্যার ঘটনার পর এই ঘটনা রাজ্যে মহিলাদের নিরাপত্তার অবনতি এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিরাপত্তার ঘাটতির বিষয়টি সামনে এনেছে।

তৃণমূল সরকার ‘অপরাজিতা বিল’-এর বাস্তবায়নের দাবি জানালেও, বিজেপি এই ঘটনাকে রাজনৈতিকভাবে কাজে লাগিয়ে তৃণমূলের বিরুদ্ধে আক্রমণ শানিয়েছে। আগামী বিধানসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে এই ঘটনা রাজনৈতিক সমীকরণে নতুন মাত্রা যোগ করবে।