‘সি বি আই এর উপর ভরসা নেই তদন্ত করুক পুলিশ’, দাবি অগ্নিমিত্রার

পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক মঞ্চে নতুন বিতর্কের সূচনা করেছে বিজেপি নেত্রী ও আসানসোল দক্ষিণের বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পালের (Agnimitra-Paul) একটি বিস্ফোরক মন্তব্য। তিনি দাবি করেছেন, কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা…

Agnimitra-Paul wants police to investigate rape case in kasba

পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক মঞ্চে নতুন বিতর্কের সূচনা করেছে বিজেপি নেত্রী ও আসানসোল দক্ষিণের বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পালের (Agnimitra-Paul) একটি বিস্ফোরক মন্তব্য। তিনি দাবি করেছেন, কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা (সিবিআই) আরজি কর হাসপাতালে ঘটে যাওয়া অভয়া ধর্ষণ ও হত্যা মামলার তদন্তে ব্যর্থ হয়েছে।

এই প্রেক্ষাপটে তিনি কলকাতার সাম্প্রতিক কসবা গণধর্ষণ মামলার তদন্তের দায়িত্ব মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন রাজ্য পুলিশের হাতে তুলে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। অগ্নিমিত্রার এই মন্তব্য রাজ্যের রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে আরও উত্তপ্ত করেছে।

   

অগ্নিমিত্রা পালের মন্তব্য ও তার পটভূমি (Agnimitra-Paul)

অগ্নিমিত্রা পাল, (Agnimitra-Paul) যিনি একজন সফল ফ্যাশন ডিজাইনার থেকে রাজনীতিবিদ হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছেন, সম্প্রতি কলকাতার কসবা গণধর্ষণ মামলা নিয়ে একটি বিতর্কিত মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেন, “সিবিআইয়ের উপর আমাদের কোনো ভরসা নেই।

আরজি কর মামলায় তারা সম্পূর্ণ ব্যর্থ। কসবা কাণ্ডের তদন্ত করুক মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পুলিশ, যাদের মাইনে হয় আমাদের টাকায়।” তাঁর এই মন্তব্য সিবিআইয়ের তদন্ত প্রক্রিয়ার দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে এবং রাজ্য পুলিশের উপর ভরসা রাখার পক্ষে সওয়াল করেছে।

অগ্নিমিত্রার (Agnimitra-Paul) এই মন্তব্যের পেছনে প্রধানত দুটি ঘটনার উল্লেখ রয়েছে। প্রথমত, ২০২৪ সালে আরজি কর মেডিকেল কলেজে ঘটে যাওয়া অভয়া ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনা, যার তদন্ত সিবিআইয়ের হাতে দেওয়া হয়েছিল। এই মামলায় সিবিআইয়ের তদন্তে অগ্রগতির অভাব এবং কিছু প্রশ্নবিদ্ধ পদক্ষেপ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হয়েছে। দ্বিতীয়ত, কলকাতার কসবা এলাকায় একটি আইন কলেজে ঘটে যাওয়া গণধর্ষণের ঘটনা, যেখানে তিনজন অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এই মামলার তদন্ত বর্তমানে কলকাতা পুলিশের হাতে রয়েছে।

আরজি কর মামলায় সিবিআইয়ের ব্যর্থতা

আরজি কর মামলা পশ্চিমবঙ্গের একটি অত্যন্ত স্পর্শকাতর বিষয়। ২০২৪ সালে এই হাসপাতালে একজন তরুণী ডাক্তারের ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনা রাজ্যজুড়ে ব্যাপক প্রতিবাদের সূত্রপাত করেছিল। সিবিআই এই মামলার তদন্তভার গ্রহণ করলেও, তদন্তের গতি এবং ফলাফল নিয়ে বিভিন্ন মহলে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। অগ্নিমিত্রা পালের (Agnimitra-Paul) মতে, সিবিআই এই মামলায় ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় ব্যর্থ হয়েছে। তিনি দাবি করেছেন, সিবিআইয়ের তদন্তে স্বচ্ছতার অভাব এবং রাজনৈতিক চাপের কারণে এই মামলা জটিল হয়ে পড়েছে।

কসবা গণধর্ষণ মামলা

কসবা গণধর্ষণ মামলা সম্প্রতি কলকাতার রাজনৈতিক ও সামাজিক মহলে ব্যাপক আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছে। ২০২৫ সালের ২৫ জুন কলকাতার দক্ষিণ কলকাতার একটি আইন কলেজে এক ছাত্রী গণধর্ষণের শিকার হন বলে অভিযোগ। পুলিশ তিন অভিযুক্ত—মনোজিৎ মিশ্র, জায়েব আহমেদ এবং প্রমিত মুখোপাধ্যায়—কে গ্রেপ্তার করেছে।

এই ঘটনায় ভুক্তভোগী জানিয়েছেন, তাঁকে কলেজের গার্ড রুমে ডেকে নিয়ে যাওয়া হয় এবং সেখানে নির্যাতন করা হয়। চিকিৎসা রিপোর্টে তাঁর শরীরে আঘাতের চিহ্ন এবং নির্যাতনের প্রমাণ পাওয়া গেছে। এই মামলার তদন্ত বর্তমানে কলকাতা পুলিশের হাতে রয়েছে।

Advertisements

অগ্নিমিত্রা পাল (Agnimitra-Paul) দাবি করেছেন যে, রাজ্য পুলিশের উপর ভরসা রাখা উচিত, কারণ তাদের বেতন জনগণের ট্যাক্সের টাকায় দেওয়া হয়। তিনি বলেন, “যারা আমাদের টাকায় চলে, তাদেরই এই তদন্ত করা উচিত। সিবিআইয়ের মতো কোনো বাইরের সংস্থার উপর ভরসা করার কোনো কারণ নেই।”

রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া

অগ্নিমিত্রার (Agnimitra-Paul) এই মন্তব্য রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস এবং বিরোধী দল বিজেপির মধ্যে তীব্র বিতর্কের সূত্রপাত করেছে। তৃণমূল নেতৃত্ব এই মন্তব্যকে ‘রাজনৈতিক প্ররোচনা’ বলে সমালোচনা করেছে। তৃণমূলের এক মুখপাত্র বলেন, “অগ্নিমিত্রা পাল রাজনৈতিক স্বার্থে এই ধরনের মন্তব্য করছেন। কলকাতা পুলিশ ইতিমধ্যেই কসবা মামলায় দ্রুত ব্যবস্থা নিয়েছে এবং অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করেছে। তাঁর এই মন্তব্য অপ্রয়োজনীয় এবং বিভ্রান্তিকর।”

অন্যদিকে, বিজেপি নেতারা অগ্নিমিত্রার মন্তব্যের সমর্থনে সরব হয়েছেন। বিজেপি নেতা শঙ্কর ঘোষ বলেন, “আরজি কর মামলায় সিবিআইয়ের ব্যর্থতা সবাই দেখেছে। কসবা মামলায় রাজ্য পুলিশের হাতে তদন্ত থাকলে ন্যায়বিচার নিশ্চিত হবে।” বিজেপি এই ঘটনাকে কাজে লাগিয়ে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলার অবনতির অভিযোগ তুলেছে।

স্পিনে বাড়তি ভরসা দিয়ে বোলিংয়ে রদবদলের আভাস, টেস্টে অভিষেকের অপেক্ষায় এই বোলার

সমাজে প্রভাব

অগ্নিমিত্রা পালের (Agnimitra-Paul) এই মন্তব্য পশ্চিমবঙ্গে মহিলাদের নিরাপত্তা এবং তদন্ত সংস্থাগুলোর দক্ষতা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন তুলেছে। আরজি কর মামলার পর কসবা গণধর্ষণ মামলা রাজ্যের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে নিরাপত্তার অভাবের বিষয়টিকে আরও প্রকট করেছে। জাতীয় মহিলা কমিশন (এনসিডব্লিউ) কসবা মামলার স্বতঃপ্রণোদিত সংজ্ঞান নিয়েছে এবং কলকাতা পুলিশকে দ্রুত তদন্ত সম্পন্ন করার নির্দেশ দিয়েছে।

সামাজিক মাধ্যমে অগ্নিমিত্রার মন্তব্য নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। একদল মানুষ তাঁর সিবিআইয়ের সমালোচনাকে সমর্থন করলেও, অনেকে মনে করছেন যে তাঁর মন্তব্য রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। একজন সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারকারী লিখেছেন, “সিবিআই ব্যর্থ হলেও রাজ্য পুলিশের উপর ভরসা রাখা কতটা যুক্তিযুক্ত, তা নিয়ে প্রশ্ন আছে।”

অগ্নিমিত্রা পালের ‘সিবিআইয়ের উপর ভরসা নেই, তদন্ত করুক পুলিশ’ মন্তব্যটি পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। আরজি কর মামলায় সিবিআইয়ের ব্যর্থতা এবং কসবা গণধর্ষণ মামলার তদন্ত নিয়ে তাঁর এই দাবি রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা ও ন্যায়বিচার ব্যবস্থার উপর নতুন করে আলোকপাত করেছে। তৃণমূল এবং বিজেপির মধ্যে চলমান শব্দযুদ্ধের মধ্যে ভুক্তভোগীদের ন্যায়বিচারের প্রশ্নটি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। তদন্তের অগ্রগতি এবং এর ফলাফল এই ঘটনার ভবিষ্যৎ দিক নির্ধারণ করবে।