কলকাতা: কসবা আইন কলেজ (Kasba Law College) গণধর্ষণ কাণ্ডে উঠে আসছে একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য। মূল অভিযুক্ত মনজিৎ মিশ্রর বিরুদ্ধে আগেও একাধিক গুরুতর অভিযোগ ছিল। এবার সেই পুরনো অপরাধের খতিয়ান নতুন করে সামনে এসেছে।
জানা গিয়েছে, ২০১৭ সালেই মনজিৎ কলেজে (Kasba Law College) ভাঙচুর ও অশান্তির অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছিল। সে সময় কলেজের তৎকালীন অধ্যক্ষের অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ মনজিৎ সহ আরও এক ছাত্রকে আটক করে। সেই ঘটনার পর তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রীর নির্দেশে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের কলেজ ইউনিট ভেঙে দেওয়া হয়।
কিন্তু তাতেও থামেনি মনজিতের দাদাগিরি। যদিও সে তখন কলেজ (Kasba Law College) ইউনিটের কোনও অফিসিয়াল পদে ছিল না, তবুও ‘ঘোষিত না হলেও কার্যত’ কলেজের ছাত্র রাজনীতির সর্বেসর্বা হয়ে ওঠে। অভিযোগ, মনজিতের নিয়ন্ত্রণ ছিল কলেজের বিভিন্ন প্রশাসনিক কাজ থেকে শুরু করে ছাত্রদের উপর প্রভাব বিস্তারের ক্ষেত্রেও।
মনজিতের বিরুদ্ধে কালীঘাট থানায় খুনের চেষ্টার মামলা রয়েছে বলে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে। শুধু তাই নয়, কলেজের (Kasba Law College) ক্যাম্পাসে একের পর এক র্যাগিং, জুনিয়রদের উপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন, ছাত্রীদের টিজ় করা, ইউনিয়ন রুমে মারধর, কলেজের দাবি না মানা হলে ভাঙচুর—সব কিছুর সঙ্গেই মনজিতের নাম জড়িয়েছে বারবার।
২০২৩ সালেও এমন এক ঘটনা ঘটে। অভিযোগ, ইউনিয়নে যোগ না দেওয়ায় প্রথম বর্ষের এক ছাত্রকে টার্গেট করে হেনস্থা করে মনজিৎ ও তার দলবল। নবাগত ছাত্রকে ঘেরাও করে মারধর করা হয় বলে অভিযোগ।
প্রশ্ন উঠছে, এত অভিযোগের পরও কীভাবে কলেজের গভর্নিং বডি মনজিৎকে অস্থায়ী কর্মী হিসাবে নিয়োগ করল? এতবার অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে নাম জড়ানো সত্ত্বেও কলেজ কর্তৃপক্ষের তরফে কোনো কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি কেন? কার আর্শীবাদে দিনের পর দিন কলেজে মনজিতের দৌরাত্ম্য চলল?
স্থানীয় ছাত্ররা বলছেন, ‘‘মনজিৎ কলেজের ছায়া প্রশাসক হয়ে উঠেছিল। তার কথাই শেষ কথা। কেউ প্রতিবাদ করলে তার পরিণাম ভালো হত না।’’
রাজনৈতিক মহলও প্রশ্ন তুলেছে, কলেজ ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে এই ধরনের অপরাধমূলক দৌরাত্ম্য শাসক দলের ছত্রছায়া ছাড়া সম্ভব কি? অনেকের মতে, রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়েই এতদিন রক্ষা পেয়ে এসেছে মনজিৎ।
শিক্ষা দফতরের তরফে ইতিমধ্যেই কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছে রিপোর্ট তলব করা হয়েছে। কেন বারবার মনজিতের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি, তা জানতে চাওয়া হয়েছে।
এই মুহূর্তে কলেজে চূড়ান্ত উত্তেজনা। ছাত্র-ছাত্রী এবং অভিভাবকদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়েছে। রাজ্য রাজনীতিতে আবারও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিরাপত্তা ও ছাত্ররাজনীতি নিয়ে নতুন করে বিতর্কের ঝড়।
অনেকেরই একটাই প্রশ্ন—এই ধরনের ঘটনা বন্ধ করতে আর কতজন ছাত্রীকে নিপীড়নের শিকার হতে হবে? সরকার ও কলেজ কর্তৃপক্ষের কড়া পদক্ষেপ কবে আসবে, সেই দিকেই তাকিয়ে গোটা রাজ্য।