কলকাতা: কসবার সাউথ ক্যালকাটা ল কলেজের (Kasba Law College) ভিতরে ছাত্রী গণধর্ষণের ঘটনার পর রাজ্যের উচ্চশিক্ষা দফতর দ্রুত পদক্ষেপ নিল। কলেজ কর্তৃপক্ষের থেকে দ্রুত রিপোর্ট তলব করল বিকাশ ভবন। পাশাপাশি কলেজের নিরাপত্তা ব্যবস্থার গাফিলতি নিয়ে উঠেছে বড় প্রশ্ন।
জানা গিয়েছে, কলেজে (Kasba Law College) ঘটে যাওয়া এই জঘন্য অপরাধের পরই মঙ্গলবার সকালে কলেজের গভর্নিং বডির বৈঠক ডাকতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে কলেজে ঠিক কীভাবে নিরাপত্তা ব্যবস্থার ত্রুটি থেকে গেল, তার কারণ জানতে চাওয়া হয়েছে। প্রয়োজন পড়লে অতিরিক্ত নিরাপত্তারক্ষী নিয়োগের কথাও ভাবতে বলেছে উচ্চশিক্ষা দফতর।
উল্লেখ্য, গত ২৫ জুন রাতে কলেজ (Kasba Law College) চত্বরে প্রথম বর্ষের এক ছাত্রী গণধর্ষণের শিকার হন। অভিযুক্তের তালিকায় রয়েছেন কলেজের এক প্রাক্তনী, যিনি বর্তমানে কলেজের অস্থায়ী কর্মী। জানা গিয়েছে, অভিযুক্ত ওই যুবক তৃণমূল ছাত্র পরিষদের এক প্রভাবশালী নেতা।
নির্যাতিতার অভিযোগ অনুযায়ী, কিছুদিন আগে অভিযুক্ত তাঁকে বিয়ের প্রস্তাব দেন। ওই ছাত্রী সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন। আর তারপরই প্রতিশোধপরায়ণ হয়ে উঠে অভিযুক্ত। কলেজের (Kasba Law College) মধ্যেই ওই ছাত্রীকে ইউনিয়ন রুমে আটকে রেখে শারীরিক নির্যাতন চালানো হয়। পরে গার্ড রুমে নিয়ে গিয়ে চলে পাশবিক অত্যাচার। অভিযুক্তকে সাহায্য করে কলেজের দুই পড়ুয়া।
এই ঘটনায় তিনজন অভিযুক্তকেই গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বর্তমানে তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির একাধিক ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছে।
ঘটনার তদন্তে নেমে পুলিশ ইতিমধ্যেই কলেজ (Kasba Law College) চত্বরের বিভিন্ন জায়গায় তল্লাশি চালিয়েছে। বিশেষ করে ইউনিয়ন রুম এবং গার্ড রুমকে ঘিরে নজরদারি চলছে। মঙ্গলবার সকাল থেকে কলেজ চত্বরে কড়া নিরাপত্তা বলয় তৈরি হয়েছে। রাস্তার দিকেও ব্যারিকেড করে ঘিরে রেখেছে পুলিশ। পুলিশ আধিকারিকরাও ঘটনাস্থলে পৌঁছে গোটা কলেজ ক্যাম্পাস খতিয়ে দেখেছেন।
বিশেষ সূত্রের খবর, সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করেছে পুলিশ। সেই ফুটেজ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। পাশাপাশি নির্যাতিতার বয়ান রেকর্ড করা হয়েছে। ঘটনার পর থেকে কলেজের পড়ুয়া, শিক্ষকমহল এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে ব্যাপক উত্তেজনা ছড়িয়েছে।
উচ্চশিক্ষা দফতর জানিয়েছে, কলেজের তরফে ৩ দিনের মধ্যে একটি পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট জমা দিতে হবে। এই রিপোর্টে কলেজের নিরাপত্তা ব্যবস্থা, ছাত্র-ছাত্রীদের মনিটরিং, কলেজ প্রশাসনের ভূমিকা— সব কিছু বিস্তারিত ভাবে উল্লেখ করতে বলা হয়েছে।
বিশেষজ্ঞ মহলের মতে, এই ঘটনায় শুধু অভিযুক্তদের শাস্তি নয়, ভবিষ্যতে যাতে এমন ঘটনা আর না ঘটে তার জন্য কলেজ নিরাপত্তা নীতিতেও বড় পরিবর্তন প্রয়োজন।
শিক্ষামহলে এমন এক গুরুতর অপরাধের ঘটনার পর প্রশ্ন উঠেছে, কীভাবে দিনের পর দিন কলেজের ভিতরে এমন অসামাজিক কাজকর্ম চলছিল অথচ প্রশাসনের নজর এড়িয়ে গেল? ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত চলছে। অভিযুক্তদের কঠোরতম শাস্তির দাবিতে সরব হয়েছেন সাধারণ ছাত্রছাত্রী থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষও।