‘বন্ধু বান্ধবীকে ধর্ষণ করলে কে নিরাপত্তা দেবে?’ প্রশ্ন কল্যাণের

কসবার আইন কলেজে এক ছাত্রীকে গণধর্ষণের ঘটনায় তৃণমূল কংগ্রেসের (TMC) সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Kalyan) বিতর্কিত মন্তব্য রাজ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে। কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় এই ঘটনাকে…

Kalyan controversian statement

কসবার আইন কলেজে এক ছাত্রীকে গণধর্ষণের ঘটনায় তৃণমূল কংগ্রেসের (TMC) সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Kalyan) বিতর্কিত মন্তব্য রাজ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে। কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় এই ঘটনাকে তুচ্ছ করে বলেছেন, এটি “রাজনৈতিক অ্যাজেন্ডা” এবং “শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভিতরে এমন ঘটনা ঘটলে পুলিশ বা সরকারের কোনও দায় নেই।” তিনি আরও দাবি করেন, “ধর্ষণ করেছে সহপাঠীরা , একজন বন্ধু তার বান্ধবীকে ধর্ষণ করলে কে নিরাপত্তা দেবে?”

এই ঘটনায় প্রধান অভিযুক্ত মনোজিৎ মিশ্র, যিনি তৃণমূল ছাত্র পরিষদের (টিএমসিপি) দক্ষিণ কলকাতা জেলার সাধারণ সম্পাদক,(Kalyan)  এবং তার দুই সহযোগী জাইব আহমেদ (১৯) ও প্রমিত মুখোপাধ্যায় ওরফে প্রমিত মুখার্জি (২০) গ্রেফতার হয়েছেন। প্রসঙ্গত তৃণমূলের উপর মহলের নেতারা মনোজিৎ এর সঙ্গে তৃণমূল যোগ অস্বীকার করছেন যা রাজনৈতিক দের পক্ষে অত্যন্ত স্বাভাবিক। কল্যাণ বন্দোপাধ্যায় কে মনোজিৎ এর উপস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন করলে তিনি উল্টে প্রশ্ন করেন যে মনোজিৎ কিভাবে কলেজে ঢুকল।

   

ঘটনার পটভূমি

গত ২৫ জুন সন্ধ্যা ৭:৩০ থেকে ১০:৫০-এর মধ্যে দক্ষিণ কলকাতা আইন কলেজের নিরাপত্তারক্ষীর ঘরে ২৪ বছর বয়সী এক ছাত্রীর উপর গণধর্ষণের ঘটনা ঘটে। অভিযোগকারিনীর অভিযোগ অনুযায়ী, মনোজিৎ মিশ্র তাকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলেন, যা প্রত্যাখ্যান করায় তিনি হুমকি দেন এবং তাকে ধর্ষণ করেন।

জাইব আহমেদ এবং প্রমিত মুখোপাধ্যায় (Kalyan) এই ঘটনায় সহায়তা করেন এবং ভিডিও রেকর্ড করে ব্ল্যাকমেল শুরু করেন। কসবা থানায় অভিযোগ দায়েরের পর পুলিশ দ্রুত ব্যবস্থা নিয়ে তিনজনকে গ্রেফতার করে। মনোজিৎ ও জাইবকে ২৬ জুন তালবাগান ক্রসিং-এর কাছ থেকে এবং প্রমিতকে ২৭ জুন ভোরে তার বাড়ি থেকে গ্রেফতার করা হয়। অভিযুক্তদের মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়েছে, এবং ফরেনসিক তদন্ত চলছে।

কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিতর্কিত মন্তব্য (Kalyan)

কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় (Kalyan) নারী নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, “কলেজের ভিতরে এমন ঘটনা ঘটলে পুলিশ কী করবে? আমরা কি প্রতিটি কলেজে পুলিশ মোতায়েন করব?” এই মন্তব্যে তিনি দায়িত্ব এড়ানোর পাশাপাশি ভুক্তভোগীকে দায়ী করার ইঙ্গিত দিয়েছেন। তিনি আরজি কর মেডিকেল কলেজের ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ‘রাত জাগো’ আন্দোলনকেও উপহাস করেন, যেখানে জনগণ অভয়ার জন্য ন্যায়বিচার দাবি করছে। এই মন্তব্যকে বিরোধীরা “নির্লজ্জ” এবং “নারীবিরোধী” বলে সমালোচনা করেছে।

রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া

বিজেপি নেতা প্রদীপ ভাণ্ডারী বলেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার বাংলায় নারীদের উপর ধর্ষণকে সমর্থন করে। কসবা গণধর্ষণের মূল অভিযুক্ত মনোজিৎ মিশ্র টিএমসি-র সক্রিয় সদস্য।” তিনি মমতার সরকারকে “ধর্ষকদের রক্ষাকর্তা” বলে সমালোচনা করেন।

শুভেন্দু অধিকারী বলেন, “এই ঘটনা টিএমসি-র শাসনে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দূষণের প্রমাণ। মুখ্যমন্ত্রীর পদে থাকার নৈতিক অধিকার নেই।” সঞ্জু ভার্মা এক্স-এ পোস্ট করে বলেন, “টিএমসি-র টেমপ্লেট স্পষ্ট—পার্ক স্ট্রিট, হাঁসখালি বা আরজি কর ধর্ষণের ক্ষেত্রে তারা কখনও অপরাধীদের দায়ী করে না।”

Advertisements

টিএমসি নেতা কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় (Kalyan) বলেন, “আমি ভুক্তভোগীকে দায়ী করিনি। আমি বলেছি, ছেলেদের মানসিকতা পরিবর্তন না হলে এই ধরণের ঘটনা ঘটবে।” তিনি অভিযুক্তদের দ্রুত গ্রেফতারের কথা উল্লেখ করে বলেন, “প্রশাসন ভুক্তভোগীকে সব ধরনের সহায়তা দেবে।” তবে, বিরোধীরা এই বক্তব্যকে “ভণ্ডামি” বলে সমালোচনা করেছে।

জনগণের ক্ষোভ

এই ঘটনা এবং কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Kalyan) মন্তব্যে সামাজিক মাধ্যমে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ পেয়েছে। যেখানে জনগণ নারী নিরাপত্তা এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিরাপত্তার দুর্বলতা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে । আরজি কর ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডের ১০ মাসের মধ্যে এই ঘটনা ঘটায় জনগণের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়েছে। জাতীয় মহিলা কমিশন (এনসিডব্লিউ) স্বতঃপ্রণোদিতভাবে তদন্ত শুরু করেছে এবং কলকাতা পুলিশকে তিন দিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে।

মনোজিতের সঙ্গে তৃণমূলের কোনও যোগ নেই, দাবি ফিরহাদ হাকিমের

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিরাপত্তার প্রশ্ন

কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Kalyan) মন্তব্যে জনগণ প্রশ্ন তুলেছে, যদি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিরাপত্তার দায় সরকার না নেয়, তবে সরকারের ভূমিকা কী? ডিওয়াইএফআই-এর মিনাক্ষী মুখার্জি বলেন, “এটি টিএমসি-র জঙ্গলরাজ। ক্যাম্পাসে নিরাপত্তা না থাকলে ছাত্রীদের ভবিষ্যৎ কী হবে?” তারা কলেজে সিসিটিভি, নিরাপত্তারক্ষী এবং কঠোর প্রবেশ নিয়ন্ত্রণের দাবি জানিয়েছে।

কসবা গণধর্ষণ মামলা এবং কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Kalyan) মন্তব্য রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা ও নারী নিরাপত্তার সংকটকে প্রকট করেছে। টিএমসি-র নেতৃত্বের এই ঘটনাকে তুচ্ছ করার প্রবণতা জনগণের মধ্যে ক্ষোভ বাড়িয়েছে। পুলিশ তদন্তে অগ্রগতি এবং অভিযুক্তদের শাস্তি নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি দিলেও, এই ঘটনা রাজ্যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা এবং সরকারের দায়িত্ব নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন তুলেছে। ন্যায়বিচারের জন্য জনগণের আন্দোলন এবং তদন্তের ফলাফল এই মামলার ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে।