কসবা আইন কলেজে এক ছাত্রীকে গণধর্ষণের ঘটনায় ডেমোক্রেটিক ইয়ুথ ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়া (DYFIই) কলেজের সামনে ব্যাপক প্রতিবাদ বিক্ষোভ করছে। এই ঘটনায় তিন অভিযুক্ত—মনোজিৎ মিশ্র (৩১), জাইব আহমেদ (১৯), এবং প্রমিত মুখোপাধ্যায় ওরফে প্রমিত মুখার্জি (২০)—কে গ্রেফতার করা হয়েছে।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, এই নৃশংস ঘটনাটি গত ২৫ জুন সন্ধ্যা ৭:৩০ থেকে ১০:৫০-এর মধ্যে কলেজের নিরাপত্তারক্ষীর কক্ষে সংঘটিত হয়। ডিওয়াইএফআই-এর প্রতিবাদে তারা রাজ্যের আইনশৃঙ্খলার অবনতি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নারী নিরাপত্তার অভাব এবং তৃণমূল কংগ্রেসের (টিএমসি) শাসনের সমালোচনা করেছে।
ঘটনার বিবরণ
এফআইআর অনুযায়ী, ২৪ বছর বয়সী ভুক্তভোগী ছাত্রী কলেজে পরীক্ষার ফর্ম জমা দিতে এসেছিলেন। তিনি অভিযোগ করেছেন, প্রধান অভিযুক্ত মনোজিৎ মিশ্র, যিনি দক্ষিণ কলকাতা জেলার তৃণমূল ছাত্র পরিষদের (টিএমসিপি) সাধারণ সম্পাদক এবং কলেজের প্রাক্তন ছাত্র, তাকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলেন।
প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় (DYFI) মিশ্র তাকে হুমকি দেন এবং তার প্রেমিক ও পরিবারের ক্ষতি করার ভয় দেখান। এরপর তিনি ভুক্তভোগীকে কলেজের নির্জন নিরাপত্তারক্ষীর কক্ষে নিয়ে যান, যেখানে তাকে গণধর্ষণ করা হয়। অভিযোগে বলা হয়েছে, জাইব আহমেদ (প্রথম বর্ষের ছাত্র) এবং প্রমিত মুখোপাধ্যায় (তৃতীয় সেমিস্টারের ছাত্র) এই অপরাধে সহায়তা করেছেন এবং ঘটনার ভিডিও রেকর্ড করে ভুক্তভোগীকে ব্ল্যাকমেল করেছেন।
ভুক্তভোগী ঘটনার (DYFI) পর কাসবা থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। পুলিশ দ্রুত ব্যবস্থা নিয়ে ২৬ জুন সন্ধ্যায় তালবাগান ক্রসিং-এর কাছে সিদ্ধার্থ শঙ্কর রায় শিশু উদ্যানের নিকট থেকে মনোজিৎ মিশ্র এবং জাইব আহমেদকে গ্রেফতার করে। প্রমিত মুখোপাধ্যায়কে ২৭ জুন ভোরে তার বাড়ি থেকে গ্রেফতার করা হয়।
তাদের মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়েছে, এবং অপরাধের স্থান ফরেনসিক তদন্তের জন্য সংরক্ষিত হয়েছে।
ভুক্তভোগীর প্রাথমিক চিকিৎসা পরীক্ষা কলকাতা ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজে (সিএনএমসি) করা হয়েছে। অভিযুক্তদের আলিপুরের এসিজেএম আদালতে হাজির করা হয়েছে, এবং তাদের চার দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
ডিওয়াইএফআই-এর প্রতিবাদ (DYFI)
ডিওয়াইএফআই, (DYFI) ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মার্কসবাদী)-এর যুব শাখা, এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে কলেজের সামনে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করে। তারা রাজ্যের শাসক দল টিএমসি-র বিরুদ্ধে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিরাপত্তার অভাব এবং নারী নির্যাতনের ঘটনা বৃদ্ধির জন্য সমালোচনা করছে।
ডিওয়াইএফআই-এর (DYFI) রাজ্য সম্পাদক মিনাক্ষী মুখার্জি এক্স-এ পোস্ট করে বলেছেন, “আরজি কর থেকে দক্ষিণ কলকাতা আইন কলেজ—রাজ্যে ধর্ষণের সংস্কৃতি বেড়েই চলেছে। ক্যাম্পাসে নিরাপত্তা কোথায়?” তিনি এই ঘটনাকে ‘টিএমসি জঙ্গলরাজ’-এর ফল বলে অভিহিত করেছেন। বিক্ষোভে ছাত্র-ছাত্রী এবং স্থানীয়রা অংশ নিয়ে অভিযুক্তদের দ্রুত শাস্তি এবং কলেজে সিসিটিভি, নিরাপত্তারক্ষী এবং কঠোর প্রবেশ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার দাবি জানিয়েছে।
রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া
এই ঘটনা রাজ্যে রাজনৈতিক ঝড় তুলেছে। বিজেপি মনোজিৎ মিশ্রের টিএমসিপি-এর সঙ্গে সংযোগ তুলে ধরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের তীব্র সমালোচনা করেছে। বিজেপি নেতা অমিত মালবিয়া এক্স-এ বলেছেন, “আরজি করের ভয়াবহতা এখনও মুছে যায়নি, তবুও বাংলায় এই ধরনের জঘন্য অপরাধ প্রতিদিন বাড়ছে।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (DYFI) শাসনে বাংলা নারীদের জন্য দুঃস্বপ্ন হয়ে উঠেছে।” তিনি মিশ্রের সঙ্গে টিএমসি নেতা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং মুখ্যমন্ত্রীর শ্যালিকা কাজরী বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি শেয়ার করে তাদের সংযোগ তুলে ধরেছেন। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেছেন, “এই ঘটনার বিরুদ্ধে ব্যাপক প্রতিবাদ হবে। মুখ্যমন্ত্রীর পদে থাকার নৈতিক অধিকার নেই।”
টিএমসি ঘটনার নিন্দা করে বলেছে, “আমরা এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই। তিন অভিযুক্তকেই দ্রুত গ্রেফতার করা হয়েছে। ভুক্তভোগীকে সব ধরনের সহায়তা দেওয়া হবে।” টিএমসি নেতা কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, “এই ঘটনা লজ্জাজনক, তবে কলেজ প্রশাসনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।”
গণধর্ষণের প্রতিবাদে বিস্ফোরক কুণাল, বললেন ‘চামড়া গুটিয়ে দেওয়া হোক’
জনগণের ক্ষোভ
এই ঘটনা আরজি কর মেডিকেল কলেজে গত বছরের (DYFI) ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডের ১০ মাসের মধ্যে ঘটায় জনগণের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়েছে। জাতীয় মহিলা কমিশন (এনসিডব্লিউ) এই ঘটনায় স্বতঃপ্রণোদিতভাবে পদক্ষেপ নিয়েছে এবং কলকাতা পুলিশকে তিন দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে।
দক্ষিণ কলকাতার এই আইন কলেজে গণধর্ষণের ঘটনা রাজ্যের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিরাপত্তার গুরুতর সংকট তুলে ধরেছে। ডিওয়াইএফআই-এর প্রতিবাদ এই ঘটনার প্রতি জনগণের ক্ষোভের প্রকাশ। পুলিশ তদন্তে অগ্রগতি এবং অভিযুক্তদের শাস্তি নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি দিলেও, এই ঘটনা নারী নিরাপত্তা এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিবেশ নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন তুলেছে। আগামী দিনে তদন্তের ফলাফল এবং সরকারের পদক্ষেপ এই মামলায় ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।