নয়াদিল্লি: পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থার হয়ে দেশের গোপন নৌসেনা তথ্য পাচার করার অভিযোগে গ্রেফতার করা হল নৌসেনার সদর দফতরে কর্মরত এক বেসামরিক কর্মীকে। নাম বিশাল যাদব। পেশায় একজন উচ্চমান সহকারী (UDC)। রাজস্থানের গোয়েন্দা বিভাগের দীর্ঘ নজরদারির পর বুধবার তাঁকে গ্রেফতার করা হয় দিল্লি থেকে। অভিযুক্তের বিরুদ্ধে সরকারিভাবে মামলা রুজু হয়েছে Official Secrets Act, 1923-এর অধীনে।
নারী গোয়েন্দার সঙ্গে সোশ্যাল মিডিয়ায় যোগাযোগ
তদন্তকারীদের দাবি, বিশাল বেশ কিছুদিন ধরেই পাকিস্তানের এক নারী গোয়েন্দার সঙ্গে সোশ্যাল মিডিয়ায় যোগাযোগ রাখছিলেন। ওই মহিলা নিজেকে ‘প্রিয়া শর্মা’ নামে পরিচয় দিতেন, কিন্তু তদন্তে উঠে এসেছে এই পরিচয় ছিল সম্পূর্ণ ভুয়ো। আসলে, তিনি পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থার এক হ্যান্ডলার, যিনি সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ধাপে ধাপে বিশালকে ফাঁদে ফেলেন। আর্থিক লোভ দেখিয়ে তাঁর থেকে দেশের গুরুত্বপূর্ণ নৌসেনা সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ করতেন।
সূত্রের খবর, ওই মহিলা বিশালকে মোটা টাকার প্রলোভন দেন। সেই টাকা পাঠানো হত কখনও ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে, কখনও আবার সরাসরি ক্রিপ্টোকারেন্সি (USDT)-র মাধ্যমে। দেশের নিরাপত্তা নিয়ে এই ঘৃণ্য লেনদেনের মূল মঞ্চ হয়ে উঠেছিল সোশ্যাল মিডিয়া।
ফোন থেকে উদ্ধার চাঞ্চল্যকর তথ্য Indian Navy Spy Arrest
রাজস্থান পুলিশের গোয়েন্দা শাখার আইজি বিশ্নুকান্ত গুপ্ত জানান, বিশালের মোবাইল ফোন ও ডিভাইসের ফরেনসিক বিশ্লেষণে এমন কিছু তথ্য মিলেছে, যা শুধু চাঞ্চল্যকরই নয়, আতঙ্কজনকও। তার মোবাইলে থাকা চ্যাট রেকর্ড, গোপন ডকুমেন্ট এবং সামরিক নথিপত্র থেকে স্পষ্ট, ‘অপারেশন সিঁদুর’ চলাকালীনও তিনি গুরুত্বপূর্ণ নৌ-তথ্য পাচার করেছিলেন। অর্থাৎ, বিষয়টি বিচ্ছিন্ন নয়, বরং দীর্ঘদিন ধরেই এই চক্র সক্রিয় ছিল।
আরও বিস্ময়ের বিষয়, তদন্তে জানা গিয়েছে বিশাল যাদব ছিলেন অনলাইন গেমিংয়ের আসক্ত। সেই আসক্তি থেকেই আর্থিক অনটন, আর সেই দুর্বলতাকে কাজে লাগিয়েই পাক হ্যান্ডলার তাঁকে ব্যবহার করেন।
জেরা করছে একাধিক কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা
বর্তমানে বিশালকে রাখা হয়েছে জয়পুরের একটি নিরাপদ স্থানে। তাঁকে জেরা করছে একাধিক কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা। তাঁর সঙ্গে আর কারা যুক্ত, কিংবা তথ্য পাচারের নেটওয়ার্ক কতটা বিস্তৃত—তা জানতেই চলছে লাগাতার তদন্ত।
ঘটনার পর গোটা গোয়েন্দা মহলে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। প্রশাসনের তরফে সাধারণ নাগরিকদের উদ্দেশে সতর্কবার্তা দেওয়া হয়েছে—সোশ্যাল মিডিয়ায় অপরিচিত কারও সঙ্গে ব্যক্তিগত বা সংবেদনশীল তথ্য শেয়ার করা একেবারেই অনুচিত। রাষ্ট্রের নিরাপত্তা যে কত সহজে সোশ্যাল মিডিয়ার ফাঁদে ধরা দিতে পারে, বিশাল যাদবের ঘটনা যেন তারই বাস্তব উদাহরণ।