‘মোদী শাসনের ১১ বছরে ধ্বংস গণতন্ত্র’, দাবি দ্রাবিড় ভূমির কংগ্রেস নেতার

তামিলনাড়ুর (Congress-Leader) কংগ্রেস নেতা মানিকম ঠাকুর বুধবার ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) বিরুদ্ধে তীব্র আক্রমণ শানিয়েছেন। তিনি বলেছেন যে গত ১১ বছর ধরে ভারত একটি ‘অঘোষিত…

Congress-Leader statement for modi

তামিলনাড়ুর (Congress-Leader) কংগ্রেস নেতা মানিকম ঠাকুর বুধবার ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) বিরুদ্ধে তীব্র আক্রমণ শানিয়েছেন। তিনি বলেছেন যে গত ১১ বছর ধরে ভারত একটি ‘অঘোষিত জরুরি অবস্থার’ মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। তিনি বিজেপির উপর অভিযোগ তুলেছেন যে তারা ড. বি.আর. আম্বেদকরের উত্তরাধিকার ধ্বংস করার জন্য সংবিধানের উপর আক্রমণ চালাচ্ছে।

তিনি (Congress-Leader) এক্স-এ একটি পোস্টে লিখেছেন, “সংবিধান আক্রমণের মুখে রয়েছে। ২০২৪ সালে মোদী ‘চার সো পার’ ম্যান্ডেট চেয়েছিলেন সংবিধান পরিবর্তন করতে। তিনি আম্বেদকরের উত্তরাধিকার ধ্বংস করতে চেয়েছিলেন কিন্তু জনগণ তাকে প্রত্যাখ্যান করেছে। তবুও বিজেপি গোপনে গণতন্ত্রকে ক্ষুণ্ণ করছে।”

   

সংসদের কার্যপ্রণালীর সমালোচনা করে ঠাকুর ২০২৩ সালে শীতকালীন অধিবেশনে ১৪৬ জন সাংসদের সাসপেনশনের ঘটনার কথা উল্লেখ করেন, যা একটি রেকর্ড সংখ্যক সাসপেনশন। তিনি দাবি করেন, “গণতন্ত্রের মন্দির এখন একটি স্বৈরাচারের থিয়েটারে পরিণত হয়েছে।”

তিনি (Congress-Leader) বলেন, “সংসদকে একটি প্রহসনে পরিণত করা হয়েছে; এক অধিবেশনে ১৪৬ জন সাংসদ সাসপেন্ড করা হয়েছে – এটি একটি বিশ্ব রেকর্ড; পাঁচ মিনিটে আইন পাস করা হয়েছে; কোনো জবাবদিহিতা নেই; বাজেট আলোচনা ছাড়াই উপস্থাপন করা হয়েছে; ভারতের গণতন্ত্রের মন্দির এখন স্বৈরাচারের থিয়েটারে পরিণত হয়েছে।”

বিজেপি প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর আমলে ১৯৭৫ সালে আরোপিত জরুরি অবস্থার ৫০তম বার্ষিকীকে ‘সংবিধান হত্যা দিবস’ হিসেবে পালন করছে। আর সেই প্রসঙ্গে মানিকম এই মন্তব্য করেছেন। কংগ্রেস নেতা ঠাকুর বিভিন্ন ঘটনার কথা উল্লেখ করে দাবি করেছেন যে এগুলো গণতন্ত্রের উপর আক্রমণ এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের অপব্যবহার।

তিনি তার (Congress-Leader) পোস্টে বলেন, “মোদীর শাসনের ১১ বছর ৩০ দিন। আমরা আর গণতন্ত্রে নেই – আমরা একটি অঘোষিত জরুরি অবস্থার মধ্যে রয়েছি। ভারতের আত্মার বিরুদ্ধে পাঁচটি ফ্রন্টে যুদ্ধ চলছে। এটি শাসন নয়। এটি পদ্ধতিগত ধ্বংসযজ্ঞ।”

ঠাকুর (Congress-Leader) বিচারব্যবস্থার উপর আক্রমণের সমালোচনা করে বলেন যে স্বাধীনতা বজায় রাখার জন্য বিচারপতিদের শাস্তি দেওয়া হচ্ছে, আর যারা সরকারের পক্ষে থাকছেন তাদের পুরস্কৃত করা হচ্ছে। একইভাবে, প্রতিষ্ঠানগুলোর দখল নিয়ে তিনি নির্বাচন কমিশনের উপর অভিযোগ তুলেছেন যে তারা বিজেপিকে সাহায্য করে চলেছে, এবং রাজ্যপালদের বিরোধী দল শাসিত রাজ্যগুলোতে ধ্বংসযজ্ঞ চালানোর জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে।

তিনি (Congress-Leader) বলেন, “এটি মোদী বনাম কংগ্রেসের লড়াই নয়। এটি গণতন্ত্র বনাম স্বৈরাচার। এটি আম্বেদকর বনাম সংঘ। এটি ভারত বনাম জরুরি অবস্থা। আমরা প্রতিরোধ করব। আমরা লড়ব। আমরা সংবিধান পুনরুদ্ধার করব।” এর আগে একই দিনে, কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক (যোগাযোগ) জয়রাম রমেশও গত ১১ বছরে বিজেপির গণতন্ত্রের উপর আক্রমণের সমালোচনা করেন। তিনি কেন্দ্র ও রাজ্যের সম্পর্কের অবনতি, সংসদীয় নিয়মের উপর আক্রমণ, প্রতিষ্ঠানগুলোর দখল এবং আরও অনেক বিষয় তুলে ধরেন।

Advertisements

জরুরি অবস্থার ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট

ভারত ১৯৭৫ সালের ২৫ জুন থেকে ১৯৭৭ সালের ২১ মার্চ পর্যন্ত জরুরি অবস্থার মধ্যে ছিল, যখন সংবিধানের ৩৫২ অনুচ্ছেদের অধীনে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি ফখরুদ্দিন আলি আহমেদ অভ্যন্তরীণ অশান্তির কারণে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেন। এই জরুরি অবস্থা ঘোষণার পটভূমিতে রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং বিচারিক উন্নয়ন ছিল, যা শাসক নেতৃত্বের বৈধতাকে ক্ষুণ্ণ করেছিল।

বিজেপির প্রতিক্রিয়া এবং সমালোচনা (Congress-Leader)

বিজেপি (Congress-Leader) এই অভিযোগগুলোকে একটি রাজনৈতিক প্রচার হিসেবে প্রত্যাখ্যান করেছে। তারা দাবি করে যে তারা গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করেছে এবং সংবিধানের প্রতি তাদের অঙ্গীকার অটুট রয়েছে। বিজেপি নেতারা ইন্দিরা গান্ধীর আমলের জরুরি অবস্থার সমালোচনা করে বলেন, সেই সময়ে গণতান্ত্রিক অধিকার এবং স্বাধীনতা ব্যাপকভাবে ক্ষুণ্ণ হয়েছিল। তারা কংগ্রেসের অভিযোগকে বিভ্রান্তিকর এবং ইতিহাসের বিকৃতি হিসেবে উড়িয়ে দিয়েছে।

প্রতিষ্ঠানগুলোর উপর অভিযোগ

ঠাকুর (Congress-Leader) এবং রমেশের অভিযোগে নির্বাচন কমিশন, বিচারব্যবস্থা এবং রাজ্যপালদের ভূমিকা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন উঠেছে। তারা দাবি করেন যে নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষতা হারিয়েছে এবং বিজেপির স্বার্থে কাজ করছে। একইভাবে, তারা অভিযোগ করেন যে রাজ্যপালরা বিরোধী দল শাসিত রাজ্যগুলোতে কেন্দ্রের এজেন্ট হিসেবে কাজ করছে, যা সংবিধানের ফেডারেল কাঠামোর উপর আঘাত।

বৃষ্টির ছুতোয় মহার্ঘ্য আনাজপত্র! ঢ্যাঁড়স-কুমড়ো সবই ছুঁইছুঁই করছে অর্ধশতক

গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগ

কংগ্রেস নেতারা তাদের বক্তব্যে জোর দিয়েছেন যে এই লড়াই কোনো রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে নয়, বরং গণতন্ত্র ও স্বৈরাচারের মধ্যে একটি সংঘাত। তারা বলছেন, ভারতের সংবিধান এবং আম্বেদকরের আদর্শ রক্ষা করা এখন সময়ের দাবি। তাদের মতে, বিজেপির শাসন ভারতের গণতান্ত্রিক কাঠামোকে দুর্বল করছে এবং এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা জরুরি।

কংগ্রেসের এই তীব্র সমালোচনা এবং বিজেপির প্রতিক্রিয়া ভারতের রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে আরও উত্তপ্ত করেছে। যখন একদিকে কংগ্রেস ‘অঘোষিত জরুরি অবস্থা’র অভিযোগ তুলছে, তখন বিজেপি তাদের গণতান্ত্রিক অঙ্গীকারের কথা পুনর্ব্যক্ত করছে। এই বিতর্ক ভারতের গণতন্ত্র, সংবিধান এবং প্রতিষ্ঠানগুলোর ভবিষ্যৎ নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন তুলেছে। আগামী দিনে এই রাজনৈতিক সংঘাত কোন দিকে যায়, তা দেশের রাজনীতির গতিপথ নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।