ঢাকা: বাংলাদেশের রাজনৈতিক ময়দানে ফের উত্তাল হাওয়া। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসে৷ সেই সরকার থিতু হওয়ার আগেই উঠেছে নির্বাচনের জিগির৷ কয়েক মাসের মধ্যেই বাংলাদেশে বহুল প্রতীক্ষিত জাতীয় নির্বাচন। ভোটের হাওয়া গরম হতেই রাজনৈতিক আলোচনায় ঘুরপাক খাচ্ছে একটি নাম-বেগম খালেদা জিয়া।
প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপার্সন প্রায় দুই দশক পর নির্বাচনী লড়াইয়ে নামতে চলেছেন বলেই খবর মিলছে। ৭৯ বছর বয়সী এই প্রবীণ রাজনীতিককে ঘিরে জোর চর্চা শুরু হয়েছে ঢাকার রাজনৈতিক অন্দরমহলে।
বগুড়া হোক ‘প্রত্যাবর্তনের মঞ্চ’?
বিএনপি সূত্রের খবর, বগুড়া-৬ অথবা ৭, ফেনী-১ এবং দিনাজপুর জেলার একটি আসন- এই তিনটি কেন্দ্র থেকে খালেদা জিয়াকে প্রার্থী করার কথা ভাবছে দল। বিশেষ করে বগুড়া-৭ (গাবতলী-শাহজাহানপুর) আসনে তাঁর প্রার্থী হওয়া প্রায় নিশ্চিত। এই আসনটি তাঁর প্রয়াত স্বামী, প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের জন্মভূমি হওয়ায় প্রতীকী দিক থেকেও তা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।
দলীয় এক সিনিয়র নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, “বগুড়া শুধু একটি আসন নয়, আমাদের রাজনীতির আত্মা। এখানে বেগম জিয়ার প্রার্থী হওয়া মানে, প্রতিরোধ ও প্রত্যাবর্তনের বার্তা।”
লন্ডনে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকের পর সমঝোতা Khaleda Zia Election Comeback
গত ১৩ জুন লন্ডনে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মহম্মদ ইউনূস ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের একান্ত বৈঠকের পর, আগামী বছরের রমজানের আগে (ফেব্রুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহে) নির্বাচন আয়োজনের বিষয়ে একটি যৌথ বিবৃতি প্রকাশিত হয়। তার পর থেকেই নির্বাচন ও খালেদা জিয়ার সম্ভাব্য প্রার্থী হওয়া নিয়ে আলোচনা আরও গতি পায়।
ফিরছেন তারেক ও ফখরুলও
শুধু খালেদা জিয়াই নন, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও একাধিক আসনে লড়াইয়ে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানা যাচ্ছে। তবে এবারে নির্বাচন কমিশনের নিয়ম অনুযায়ী, কোনও প্রার্থী একাধিক আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন না। তারেক রহমানের নির্দেশে ইতিমধ্যে সম্ভাব্য প্রার্থীদের তালিকাও তৈরি হয়েছে। জোটের শরিকদের জন্য প্রায় ২০টি আসন সংরক্ষিত রাখা হয়েছে।
ফিরে দেখা: খালেদা জিয়ার জয়যাত্রা
১৯৯১, ১৯৯৬, ২০০১ ও ২০০৮— টানা চারটি জাতীয় নির্বাচনে বেগম জিয়া পাঁচটি পর্যন্ত আসনে লড়ে সবগুলোতেই জয় পেয়েছেন। বিশেষ করে বগুড়া, ফেনী, ঢাকা, খুলনা ও চট্টগ্রামের বেশ কয়েকটি আসনে তাঁর বিপুল জনপ্রিয়তা আজও স্মরণীয়।
২০০৮ সালে শেষবার নির্বাচনে অংশ নেন খালেদা জিয়া। এরপর দুর্নীতির মামলায় দণ্ডিত হয়ে ২০১৮ সালের ভোট থেকে বাদ পড়েন। তবে ২০২৪ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সর্বোচ্চ আদালতের রায়ে তাঁর বিরুদ্ধে থাকা মামলা খারিজ হয়। এখন তাঁর নির্বাচনে দাঁড়াতে আর কোনও আইনি বাধা নেই।
ফিজিক্যাল ফিটনেসই এখন বড় প্রশ্ন
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান, “আইনগত বাধা আর নেই। যদি শারীরিকভাবে সক্ষম থাকেন, তাহলে বেগম জিয়া অবশ্যই নির্বাচনে দাঁড়াবেন।”
নতুন সমীকরণে বাংলাদেশের ভোটরাজনীতি
দীর্ঘদিন পর সরাসরি রাজনীতিতে ফিরে বেগম জিয়া দেশের রাজনীতির মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারেন বলে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশের অভিমত। শুধু বিরোধী শিবিরেই নয়, আওয়ামী লীগ ঘনিষ্ঠ মহলেও তাঁর প্রত্যাবর্তন নিয়ে কৌতূহল ও চাপে রয়েছেন অনেকে।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে ‘জিয়া বনাম হাসিনা’ দ্বন্দ্ব দীর্ঘদিনের। এবার শেখ হাসিনার অনুপস্থিতিতে সেই লড়াইয়ের নতুন চেহারা নিতে চলেছে-হয়তো খালেদা জিয়া বনাম ইউনূস বা তারেক বনাম অন্য কারও মাঝে। তবে একথা নিশ্চিত, ২০২৫ সালের নির্বাচন হতে চলেছে বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে নাটকীয় ও প্রতীক্ষিত ভোট যুদ্ধ।