তৃণমূলের বিজয় মিছিল থেকে বেলাগাম বোমাবাজি, প্রাণ গেল নিরীহ শিশুর

নদিয়ার কালীগঞ্জে উপনির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই এক ভয়াবহ ঘটনায় এলাকায় চরম উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। সিপিএম সমর্থকের বাড়িতে বোমা হামলার ঘটনায় ৯ বছরের এক…

Bomb-Attack in kaliganj

নদিয়ার কালীগঞ্জে উপনির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই এক ভয়াবহ ঘটনায় এলাকায় চরম উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। সিপিএম সমর্থকের বাড়িতে বোমা হামলার ঘটনায় ৯ বছরের এক শিশুকন্যার মৃত্যু হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, তৃণমূল কংগ্রেসের বিজয় মিছিলের সময় এলোপাথাড়ি বোমা নিক্ষেপের ফলে এই দুর্ঘটনা ঘটেছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, হাত বোমা এবং সকেট বোমা ব্যবহার করা হয়েছিল, (Bomb-Attack) যার ফলে শিশুটির মর্মান্তিক মৃত্যু হয়। এই ঘটনায় রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে তীব্র বাকযুদ্ধ শুরু হয়েছে, এবং পুলিশ ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে।

   

ঘটনাটি ঘটেছে কালীগঞ্জের মেলেন্দি এলাকায়। (Bomb-Attack) সোমবার কালীগঞ্জ উপনির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার পর তৃণমূল প্রার্থী আলিফা আহমেদ জয়ী হন। এই জয়ের পর তৃণমূল সমর্থকরা বিজয় মিছিল বের করে। অভিযোগ, মিছিলের সময় এলোপাথাড়ি বোমা নিক্ষেপ করা হয়, এবং এই বোমাগুলোর মধ্যে একটিতে সেই শিশুর মৃত্যু হয়েছে।

বিস্ফোরণের ফলে আব্দুল হকের ৯ বছরের মেয়ে আফরিন পারভিন গুরুতর আহত হয়। রক্তাক্ত অবস্থায় তাকে স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলেও চিকিৎসকরা তাকে বাঁচাতে পারেননি। আফরিন চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী ছিল বলে জানা গেছে।

সিপিএম নেতৃত্ব এই ঘটনাকে (Bomb-Attack) “পরিকল্পিত হামলা” হিসেবে অভিহিত করে তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। সিপিএমের নদিয়া জেলা সম্পাদক সুমিত ঘোষ বলেন, “তৃণমূলের বিজয় মিছিলের নামে এলোপাথাড়ি বোমাবাজি করা হয়েছে। আব্দুল হক আমাদের দলের একজন সক্রিয় সমর্থক। তাকে ভয় দেখাতে এবং আমাদের দলকে দুর্বল করতে এই হামলা চালানো হয়েছে। একটি নিরীহ শিশুকে এভাবে হত্যা করা অমানবিক। আমরা এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি এবং দোষীদের কঠোর শাস্তির দাবি করছি।”

তৃণমূল কংগ্রেস এই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে। তৃণমূলের স্থানীয় নেতা সেলিম মণ্ডল বলেন, “আমাদের বিজয় মিছিল শান্তিপূর্ণ ছিল। এই বোমা হামলার সঙ্গে আমাদের দলের কোনও সম্পর্ক নেই। সিপিএম তাদের রাজনৈতিক ব্যর্থতা ঢাকতে আমাদের উপর মিথ্যা দোষ চাপাচ্ছে। আমরা এই ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত চাই।” তিনি আরও বলেন, “একটি শিশুর মৃত্যু আমাদের সকলের জন্যই দুঃখজনক। দোষীদের খুঁজে বের করে শাস্তি দেওয়া হোক।”

বিধানসভায় বিক্ষোভ, সাসপেন্ড ৪ বিজেপি বিধায়ক, মার্শাল ডেকে বার করলেন স্পিকার

Advertisements

রাজনৈতিক মহলে তীব্র সমালোচনা শুরু হয়েছে ইতিমধ্যেই(Bomb-Attack)। সবথেকে বড় কথা রাজনৈতিক বিজয় উল্লাসে কেন এই ধরণের বোমা ব্যবহার হল এবং একটি নিরীহ শিশু যে রাজনীতির কিছুই বোঝেনা তার প্রাণ গেল। ইতিমধ্যেই সকলে দাবি করেছেন যেন দ্রুত দোষীদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা হয়।”

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ঘটনাস্থল থেকে হাত বোমা এবং সকেট বোমার অবশিষ্টাংশ উদ্ধার করা হয়েছে। প্রাক্তন পুলিশ করতে নজরুল ইসলাম বলেন এই ঘটনা বার বার দেখতে হবে কারণ এখানে শাসকের আইন চলছে। এই ঘটনার পরেই স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে দুষ্কৃতীদের শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে। এটি একটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হামলা বলে মনে হচ্ছে।” তিনি আরও জানান, এলাকায় শান্তি বজায় রাখতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

ঘটনার পর সিপিএম সমর্থকরা কালীগঞ্জে প্রতিবাদ মিছিল বের করে এবং দোষীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে বাজার এলাকায় রাস্তা অবরোধ করে। মিছিলে অংশ নেওয়া সিপিএম নেতা রেজাউল করিম বলেন, “এই হামলা কেবল আব্দুল হকের পরিবারের উপর নয়, গোটা কালীগঞ্জের শান্তি ও গণতন্ত্রের উপর আঘাত। আমরা এর বিরুদ্ধে রাস্তায় নামব এবং ন্যায়বিচারের জন্য লড়াই চালিয়ে যাব।”

আফরিনের মৃত্যুতে তার পরিবারে শোকের ছায়া নেমে এসেছে(Bomb-Attack)। আব্দুল হক বলেন, “আমার মেয়ে কোনও রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিল না। সে মায়ের সাথে পুকুরে স্নান করতে যাচ্ছিল। কেন তাকে এভাবে মরতে হলো? আমি আমার মেয়ের জন্য ন্যায়বিচার চাই।” স্থানীয়রা পরিবারটির প্রতি সমবেদনা জানিয়ে তাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, কালীগঞ্জ উপনির্বাচনে তৃণমূলের জয়ের পর এই ঘটনা রাজনৈতিক হিংসার একটি নতুন মাত্রা যোগ করেছে। সিপিএম এবং তৃণমূলের মধ্যে দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব এই ঘটনায় আরও তীব্র হয়েছে। বিজেপির স্থানীয় নেতা অমিত সরকার বলেন, “এই ধরনের হিংসা কালীগঞ্জের মানুষের জন্য কলঙ্ক। আমরা এই ঘটনার নিন্দা জানাই এবং নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি করছি।”

এই ঘটনা পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক হিংসার (Bomb-Attack) একটি কালো অধ্যায় হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। আগামী দিনে এই ঘটনা রাজ্যের রাজনীতিতে কী প্রভাব ফেলবে, তা নিয়ে জল্পনা চলছে। তবে, একটি নিরীহ শিশুর মৃত্যু এলাকার মানুষের মনে গভীর ক্ষত রেখে গেছে, এবং ন্যায়বিচারের দাবি ক্রমশ জোরালো হচ্ছে।