শুভেন্দু অধিকারীর নেতৃত্বে বিধানসভায় বিজেপি পরিষদীয় দলের তীব্র বিক্ষোভ

পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় আজ সকাল থেকেই উত্তপ্ত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর (Suvendu-Adhikari) নেতৃত্বে বিজেপি পরিষদীয় দলের সদস্যরা বিধানসভা চত্বরে তীব্র বিক্ষোভ প্রদর্শন করছেন।…

Suvendu-Adhikari protest

পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় আজ সকাল থেকেই উত্তপ্ত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর (Suvendu-Adhikari) নেতৃত্বে বিজেপি পরিষদীয় দলের সদস্যরা বিধানসভা চত্বরে তীব্র বিক্ষোভ প্রদর্শন করছেন। এই বিক্ষোভের কেন্দ্রে ছিল রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ, যার মধ্যে ভুয়ো ভোটার তালিকা, নির্বাচনী অনিয়ম, এবং মহেশতলা ও মুর্শিদাবাদের সাম্প্রতিক হিংসার ঘটনা উল্লেখযোগ্য। বিজেপির আর ও একটি উল্লেখযোগ্য দাবি কি কারণে মনোজ ওঁরাও কে সাসপেন্ড করা হল।

বিধানসভার অধিবেশন শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই বিজেপি বিধায়করা স্লোগান দিয়ে এবং প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে তাদের প্রতিবাদ জানাতে শুরু করেন। প্রসঙ্গত আজ কালীগঞ্জ উপনির্বাচনের ফল ঘোষণা এবং ইতিমধ্যেই তৃণমূল জয়ের লক্ষে এগিয়ে চলেছে তার মধ্যেই বিজেপির এই বিক্ষোভ।

   

বিধানসভার অধিবেশন শুরু হওয়ার পর প্রশ্নোত্তর পর্বে বিজেপি বিধায়করা (Suvendu-Adhikari) রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে ভুয়ো ভোটার তালিকা তৈরির অভিযোগ তুলে আলোচনার দাবি জানান। শুভেন্দু অধিকারী (Suvendu-Adhikari) দাবি করেন, “রাজ্যে প্রায় ১৬ লক্ষ ভুয়ো ভোটারের নাম ভোটার তালিকায় রয়েছে। আমরা ইতিমধ্যেই এই তালিকা চিহ্নিত করেছি এবং আগামী বিধানসভা নির্বাচনের আগে এগুলো বাতিল করার দাবি জানাচ্ছি।” তিনি আরও অভিযোগ করেন যে, তৃণমূল কংগ্রেস সরকার নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করতে এই ভুয়ো ভোটারদের ব্যবহার করছে।

এই ইস্যুতে আলোচনার জন্য বিজেপি একটি মুলতুবি প্রস্তাব আনে, কিন্তু স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় এই প্রস্তাব খারিজ করে দেন। স্পিকারের এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে বিজেপি বিধায়করা স্পিকারের চেয়ারের সামনে গিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। শুভেন্দু অধিকারীর (Suvendu-Adhikari) নেতৃত্বে তারা ‘চোর চোর’ এবং ‘তৃণমূল হটাও, বাংলা বাঁচাও’ স্লোগান তুলে বিধানসভার কার্যক্রম ব্যাহত করেন। এই সময় কাগজ ছিঁড়ে ফেলা এবং টেবিলে চাপড়ানোর ঘটনাও ঘটে।

বিক্ষোভের আরেকটি কারণ ছিল মহেশতলা এবং মুর্শিদাবাদে সাম্প্রতিক হিংসার ঘটনা। শুভেন্দু অধিকারী(Suvendu-Adhikari) অভিযোগ করেন, “রাজ্যে তৃণমূলের পৃষ্ঠপোষকতায় হিংসার ঘটনা বাড়ছে। মহেশতলায় বিজেপি কর্মীদের উপর হামলা হয়েছে, কিন্তু পুলিশ কোনও ব্যবস্থা নেয়নি।” তিনি এই ঘটনাগুলো নিয়ে বিধানসভায় আলোচনার দাবি জানান, কিন্তু স্পিকার জানান যে এই বিষয়গুলো আদালতে বিচারাধীন থাকায় বিধানসভায় আলোচনা করা সম্ভব নয়। এই সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ হয়ে বিজেপি বিধায়করা তাদের বিক্ষোভ আরও তীব্র করে।

এদিনের বিক্ষোভের একটি অভিনব ঘটনা ছিল শুভেন্দু অধিকারীর কক্ষের সামনে পাঁচ জোড়া মহিলাদের হাওয়াই চটি পড়ে থাকা। এই ঘটনা নিয়ে বিধানসভায় বিতর্কের সৃষ্টি হয়। শুভেন্দুর ব্যক্তিগত সহায়ক মার্শাল এবং ডেপুটি মার্শালের সঙ্গে এই বিষয়ে কথা বললেও কেউ সদুত্তর দিতে পারেননি। বিজেপি এই ঘটনাকে ‘তৃণমূলের ষড়যন্ত্র’ বলে অভিহিত করে এবং এর প্রতিবাদে আরও জোরালো বিক্ষোভ শুরু করে।

বিধানসভার এই উত্তপ্ত পরিস্থিতির মধ্যে চারজন বিজেপি বিধায়ককে সাসপেন্ড করা হয়। অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় অভিযোগ করেন যে, বিজেপি বিধায়করা মাইক ভাঙচুর করেছেন এবং টেবিলে আঘাত করে বিধানসভার শৃঙ্খলা নষ্ট করেছেন। এই সাসপেনশনের প্রতিবাদে শুভেন্দু অধিকারী বলেন, “এটি গণতন্ত্রের উপর আঘাত। আমরা জনগণের সমস্যা তুলে ধরতে চাই, কিন্তু শাসক দল আমাদের কণ্ঠরোধ করছে।”

Advertisements

বিক্ষোভের পর বিজেপি বিধায়করা বিধানসভা চত্বর থেকে বেরিয়ে গিয়ে রাজভবনের দিকে যাত্রা করেন। শুভেন্দু অধিকারীর নেতৃত্বে তারা রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের সঙ্গে দেখা করে তাদের অভিযোগ জানান। বিজেপির দাবি, রাজ্যপাল তাদের অভিযোগ শুনে দিল্লিতে রিপোর্ট পাঠানোর আশ্বাস দিয়েছেন।

তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে এই বিক্ষোভকে ‘রাজনৈতিক নাটক’ বলে কটাক্ষ করা হয়। রাজ্যের প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য বলেন, “বিজেপি বিধানসভার কার্যক্রম ব্যাহত করতে চায়। তারা জনগণের সমস্যা নিয়ে কথা বলার পরিবর্তে শুধু হট্টগোল সৃষ্টি করছে।” তৃণমূলের আরেক নেতা শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় বলেন, “শুভেন্দু অধিকারী নিজের রাজনৈতিক অস্তিত্ব বাঁচাতে এই ধরনের নাটক করছেন।”

ছয় ইরানি সামরিক বিমানঘাঁটিতে হামলা ইসরায়েলের, ধ্বংস ১৫ যুদ্ধবিমান-হেলিকপ্টার

বিধানসভার (Suvendu-Adhikari) এই ঘটনা রাজ্য রাজনীতিতে নতুন করে উত্তেজনার সৃষ্টি করেছে। আগামী বিধানসভা নির্বাচনের আগে এই ধরনের বিক্ষোভ এবং পাল্টা অভিযোগ রাজ্যের রাজনৈতিক পরিবেশকে আরও উত্তপ্ত করবে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

শুভেন্দু অধিকারীর নেতৃত্বে বিজেপি যে তাদের আন্দোলন আরও জোরদার করবে, তা স্পষ্ট। অন্যদিকে, তৃণমূল কংগ্রেসও এই বিক্ষোভের জবাবে তাদের রাজনৈতিক কৌশল আরও শক্তিশালী করতে পারে। এই ঘটনার পর বিধানসভার পরবর্তী অধিবেশন কীভাবে এগোয় এবং শুভেন্দু অধিকারীর নেতৃত্বে বিজেপি কীভাবে তাদের আন্দোলন চালিয়ে যায়, তা নিয়ে সকলের নজর থাকবে।