গাজা ও ইরানে ইসরায়েলের সাম্প্রতিক হামলা ও ধ্বংসযজ্ঞের ঘটনায় ভারত সরকারের নীরবতা নিয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করলেন কংগ্রেস পার্লামেন্টারি পার্টির চেয়ারপারসন সোনিয়া গান্ধী। শনিবার ‘দ্য হিন্দু’ পত্রিকায় প্রকাশিত এক নিবন্ধে তিনি বলেন, “এ কেবল ভারতের কণ্ঠ হারানো নয়, বরং মূল্যবোধের আত্মসমর্পণ।”
নিবন্ধের শিরোনাম ছিল-“It is still not too late for India’s voice to be heard”, যার বাংলা মানে দাঁড়ায়—”এখনও দেরি হয়নি৷ ভারত কণ্ঠ তুলুক”। তিনি কেন্দ্রীয় মোদী সরকারকে অভিযুক্ত করে বলেন, যে তারা ভারতের দীর্ঘদিনের নীতিগত অবস্থান দ্বি-রাষ্ট্রভিত্তিক শান্তিপূর্ণ সমাধান থেকে সরে এসেছে।
“ভারত তার কণ্ঠ ও মূল্যবোধ হারাচ্ছে”
সোনিয়া গান্ধী লেখেন, “নয়াদিল্লির এই নীরবতা শুধু গাজা নয়, ইরানের ওপর বিনা উসকানিতে চালানো হামলার প্রতিক্রিয়াতেও স্পষ্ট। এটি ভারতের নৈতিক ও কূটনৈতিক ঐতিহ্য থেকে এক দুঃখজনক বিচ্যুতি।”
তিনি বলেন, “এখনও সময় আছে। ভারতকে অবশ্যই স্পষ্টভাবে কথা বলতে হবে, দায়িত্ব নিয়ে আচরণ করতে হবে, এবং পশ্চিম এশিয়ায় উত্তেজনা প্রশমন ও আলোচনার পথ খোলার জন্য সব ধরনের কূটনৈতিক চ্যানেল ব্যবহার করতে হবে।”
ইসরায়েলের বিরুদ্ধে কড়া ভাষায় সমালোচনা Sonia Gandhi India Middle East Policy
১৩ জুন, ২০২৫-এ ইসরায়েল ইরানে যে হামলা চালিয়েছে, তাকে তিনি “একতরফা সামরিক আগ্রাসন” বলে আখ্যা দেন। তার মতে, এটি ছিল ইরানের সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে একটি অবৈধ ও বিপজ্জনক হামলা।
সোনিয়া বলেন, “এই হামলা শুধু আঞ্চলিক অস্থিরতা বাড়াবে না, বরং বিশ্বব্যাপী শান্তির ক্ষেত্রেও বিপদের বার্তা বয়ে আনবে।”
গাজায় ইসরায়েলের “নৃশংস ও অসম সামরিক অভিযান”-এর কথাও তিনি উল্লেখ করেন এবং বলেন, “নাগরিক জীবনের প্রতি সম্পূর্ণ উপেক্ষা ও আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার প্রতি অবজ্ঞাই প্রতিফলিত হয়েছে এইসব অভিযানে।”
নেতানিয়াহু ও ট্রাম্পকেও তুলোধোনা
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে সরাসরি আক্রমণ করে সোনিয়া গান্ধী বলেন, “শান্তি প্রতিষ্ঠার পরিবর্তে সংঘাতকেই বরাবর বেছে নিয়েছে এই নেতৃত্ব, যাদের অতীতেই রয়েছে উগ্রবাদ পোষণ ও শান্তি প্রক্রিয়া নস্যাৎ করার রেকর্ড।”
তবে শুধু ইসরায়েল নয়, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকেও ছাড় দেননি তিনি। ১৭ জুন ট্রাম্পের দেওয়া এক বিবৃতিতে, যেখানে তিনি নিজ দেশের গোয়েন্দা সংস্থার মূল্যায়ন অস্বীকার করে দাবি করেন যে “ইরান খুব শীঘ্রই পারমাণবিক অস্ত্র অর্জন করতে চলেছে”, তা নিয়ে সোনিয়া বলেন, “এমন বক্তব্য হতাশাজনক ও সত্যনির্ভর নেতৃত্বের ঘাটতির ইঙ্গিত দেয়।”
“দ্বি-রাষ্ট্র সমাধান ত্যাগ করেছে মোদী সরকার”
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অভিযোগটি ছিল, ভারত এখন আর স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের পক্ষে জোরালো অবস্থান নিচ্ছে না। সোনিয়ার ভাষায়, “মোদী সরকার কার্যত ভারতের নীতিগত অবস্থান থেকে পিছু হটেছে, যেখানে ফিলিস্তিন ও ইসরায়েল উভয়ের জন্য শান্তিপূর্ণ ও নিরাপদ সহাবস্থানের ভাবনা ছিল।”
ভারতের অবস্থান পুনর্বিবেচনার আহ্বান
নিবন্ধের শেষে তিনি জোর দিয়ে বলেন, “ভারতের উচিত এখনই নীরবতা ভেঙে, স্পষ্ট বার্তা দেওয়া মানবাধিকার, আন্তর্জাতিক আইন ও কূটনৈতিক দায়িত্বের পক্ষে।” এই মুহূর্তে ভারতের অবস্থান শুধু কূটনৈতিকভাবে নয়, আন্তর্জাতিক মহলেও গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারে বলেই মনে করছেন কংগ্রেস নেত্রী।