ভারতের শীর্ষস্থানীয় ফুটবল (Indian Football) লিগ তথা ইন্ডিয়ান সুপার লিগ (ISL) বড় পরিবর্তনের মুখোমুখি হতে চলেছে। ফুটবল স্পোর্টস ডেভেলপমেন্ট লিমিটেড (FSDL) সম্প্রতি সর্ব ভারতীয় ফুটবল সংস্থার (AIFF) কাছে এক নতুন প্রস্তাব পেশ করেছে। যার মাধ্যমে দেশের শীর্ষস্থানীয় লিগ পরিচালনার একটি সম্পূর্ণ নতুন কাঠামো গড়ে তোলার পরিকল্পনা করা হয়েছে।
FSDL ও ফেডারেশনের মধ্যে মাস্টার রাইটস অ্যাগ্রিমেন্ট (MRA) ২০২৫ সালের ডিসেম্বর মাসে শেষ হতে চলেছে। ২০১০ সালে স্বাক্ষরিত এই চুক্তির মাধ্যমে FSDL প্রতি বছর ৫০ কোটি টাকা ফেডারেশনকে দিত সম্প্রচার এবং ব্যবস্থাপনার অধিকার নিয়ে, যার মধ্যে জাতীয় দলের ম্যাচও অন্তর্ভুক্ত ছিল।
নতুন প্রস্তাব অনুযায়ী, FSDL একটি নতুন কোম্পানি গঠনের প্রস্তাব দিয়েছে, যার নাম ‘ISL NewCo JV’। এই কোম্পানি ইন্ডিয়ান সুপার লিগ পরিচালনা, বাণিজ্যিকীকরণ ও অর্থায়নের দায়িত্ব নেবে। এতে সর্ব ভারতীয় ফুটবল সংস্থার মালিকানা থাকবে ১৪ শতাংশ, অংশগ্রহণকারী ক্লাবগুলির থাকবে ৬০ শতাংশ এবং FSDL অংশীদারিত্ব হবে ২৬ শতাংশ। উল্লেখযোগ্যভাবে, FSDL কিছু “মূল সিদ্ধান্ত”-এর ক্ষেত্রে ভেটো ক্ষমতা ধরে রাখবে।
বাইচুং ভুটিয়ার দুর্নীতির অভিযোগ খারিজ করে বিবৃতি ফেডারেশন সভাপতির
তবে এই প্রস্তাবের সবচেয়ে বিতর্কিত দিকটি হল, আগামী ১০ বছর আইএসএলে কোনো রকম রেলিগেশন বা প্রোমোশন থাকবে না। অর্থাৎ আইএসএলে নতুন দল আসতে পারবে না এবং অন্য লিগ থেকে কোনও ক্লাব উঠে আসবে না, যতক্ষণ না সমস্ত স্টেকহোল্ডার একসঙ্গে এই বিষয়ে সম্মত হয়।
এই সিদ্ধান্ত এএফসি তথা এশিয়ান ফুটবল কনফেডারেশনের সুপারিশের বিরুদ্ধে যায়। এএফসি অনেক আগেই ভারতের জন্য প্রোমোশন-রেলিগেশন মডেল চালুর পরামর্শ দিয়েছিল। ফেডারেশন তাদের নির্বাহী কমিটির মাধ্যমে ২০২৪-২৫ মরসুম থেকে সেই পথ অনুসরণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। ইতিমধ্যেই পাঞ্জাব এফসি ও মহামেডান স্পোর্টিং আইএসএলে প্রোমোশন পেয়েছে। ফলে এই নতুন প্রস্তাব গ্রহণ করা মানে হবে সেই রোডম্যাপ থেকে সরে আসা।
এছাড়াও, নতুন প্রস্তাব অনুসারে, পুরনো MRA বাতিল করা হবে। ফেডারেশন আগের মতো বার্ষিক ৫০ কোটি টাকা পাবে না। পরিবর্তে তারা কোম্পানির লাভ-লোকসান অনুসারে ডিভিডেন্ড পাবে এবং ভবিষ্যতে লিগ সম্প্রসারণ হলে তার থেকে আয় পাবে।
ফেডারেশন শুধু নন-ISL টুর্নামেন্ট ও নন-ন্যাশনাল টিম প্রতিযোগিতা থেকে রাজস্ব পাবে। তবে AIFF-কে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকার করতে হবে যে ISL NewCo JV-ই দেশের শীর্ষ লিগ ও জাতীয় দলের সম্প্রচারের মালিক।
FSDL এই মডেলকে সঠিক প্রমাণ করতে ইউরোপ ও এশিয়ার নানা উদাহরণ দিয়েছে। যেমন ইংল্যান্ডের প্রিমিয়ার লিগ, স্পেনের লা লিগা এবং জাপানের জে-লিগ, যেখানে বেসরকারি সংস্থা দ্বারা পরিচালিত লিগ সিস্টেম সফলভাবে চলে আসছে।
তবে প্রশ্ন উঠছে ভারতের মতো এক উন্নয়নশীল ফুটবল দেশের ক্ষেত্রে, এই বেসরকারিকরণ কি আদৌ সঠিক পথে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবে? নাকি এটি দেশের ফুটবলের অগ্রগতিকে থামিয়ে দেবে, বিশেষ করে সেই সব ঐতিহ্যবাহী ক্লাবগুলোর জন্য যারা বহু বছর ধরে নিজেদের উন্নতি করে শীর্ষ স্তরে পৌঁছাতে চেয়েছে?
ফেডারেশন এখন এক কঠিন সিদ্ধান্তের সামনে দাঁড়িয়ে। ১৮ জুলাই সুপ্রিম কোর্ট সর্ব ভারতীয় ফুটবল সংস্থার নতুন সংবিধান নিয়ে রায় দেবে। এরপরই স্থির হবে ভারতের ফুটবলের ভবিষ্যৎ পথ।
No promotion and relegation for 10 years in ISL
