অয়ন দে, উত্তরবঙ্গ: জলপাইগুড়ি জেলার চালসা ব্লকের দক্ষিণ ধুপঝড়া এলাকায় আচমকাই ঘটল এক মর্মান্তিক ঘটনা। বুধবার সকালে এলাকাবাসী চোখে পড়ে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্য—একটি কৃষিজমিতে পড়ে রয়েছে শতাধিক মৃত পাখি (Birds)। দৃশ্যটি দেখে প্রথমে অনেকেই অবাক হলেও পরে বিষয়টি জানাজানি হতেই গোটা এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে আতঙ্ক ও চাঞ্চল্য।
প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, মৃত পাখিদের মধ্যে রয়েছে স্থানীয় প্রজাতির ঘুঘু, চড়ুই, শালিক ও আরও কিছু ছোট প্রজাতির পাখি। প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্য, সকালে মাঠে কাজ করতে গিয়ে তাঁরা দেখতে পান জমির একাংশ জুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে পাখিদের নিথর দেহ। মৃতের সংখ্যা একশোরও বেশি বলে অনুমান করা হচ্ছে।
এই জমিটি সম্প্রতি চাষের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছিল। স্থানীয়দের একাংশের ধারণা, জমিতে ছড়ানো হয়েছে কোনও বিষাক্ত কীটনাশক বা সার, যা খাওয়ার ফলে একসঙ্গে এত পাখির মৃত্যু হয়েছে। অন্যদিকে, পরিবেশপ্রেমীদের একাংশের মতে, এর পেছনে ভাইরাস, বিশেষত বার্ড ফ্লু জাতীয় রোগও থাকতে পারে।
পরিবেশকর্মী সুমন চৌধুরী জানান, “এই ধরনের ঘটনা অত্যন্ত দুঃখজনক এবং অস্বাভাবিক। একটি জমিতে একসঙ্গে এত পাখির মৃত্যু হওয়া সাধারণ কোনো ঘটনা নয়। বিষক্রিয়া কিংবা ভাইরাস—দুটো সম্ভাবনাই খতিয়ে দেখা দরকার। জমির মাটির নমুনা পরীক্ষা করলে সত্যতা জানা যেতে পারে।”
অন্যদিকে আরেক পরিবেশকর্মী অনির্বাণ মজুমদার বলেন, “এই জমিটির পাশেই গরুমারা জাতীয় উদ্যান এবং চাপড়ামারি জঙ্গল। এরকম ঘটনায় জঙ্গল এলাকার পক্ষী প্রজাতির উপর প্রভাব পড়তে পারে। বিষয়টি যথেষ্ট গুরুতর এবং বনদফতরের উচিত দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া।”
ঘটনার খবর পেয়ে বনদফতরের আধিকারিকেরা ঘটনাস্থলে পৌঁছেছেন। মৃত পাখিদের দেহ সংগ্রহ করে নমুনা পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। জমির মাটির নমুনাও সংগ্রহ করা হয়েছে। যদিও রিপোর্ট না আসা পর্যন্ত কিছুই নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না।
বন দফতরের এক আধিকারিক বলেন, “আমরা বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখছি। পাখিদের মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানতে নমুনা পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। রিপোর্ট এলেই আমরা পরবর্তী পদক্ষেপ নেব।”
একসঙ্গে এত পাখির মৃত্যুতে স্বাভাবিকভাবেই আতঙ্কে রয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। অনেকে শিশুরা বা পোষ্য প্রাণীদের এই জমির কাছে নিয়ে যেতে ভয় পাচ্ছেন। একইসঙ্গে প্রশ্ন উঠেছে—যদি বিষক্রিয়াই হয়, তাহলে মানুষ বা গবাদি পশুর উপরও কি প্রভাব পড়তে পারে?
এই মুহূর্তে এলাকায় এক অনিশ্চয়তার বাতাবরণ। পাখিদের এই আকস্মিক মৃত্যু শুধু পরিবেশের ভারসাম্য নয়, মানুষের মনেও উদ্বেগের ছায়া ফেলেছে। রিপোর্ট না আসা পর্যন্ত নিশ্চিত কিছু বলা না গেলেও, যত দ্রুত সম্ভব প্রকৃত কারণ জানা জরুরি, নইলে ধুপঝড়ার এই মৃত্যু মিছিল প্রকৃতির আরও বড় সংকেত হয়ে উঠতে পারে।