হাইকোর্টের নির্দেশে রাজ্যে ফের চালু একশো দিনের কাজ

পশ্চিমবঙ্গে মহাত্মা গান্ধী জাতীয় গ্রামীণ কর্মসংস্থান গ্যারান্টি প্রকল্প (MGNREGA) বা একশো দিনের কাজের প্রকল্প আবার শুরু করার নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা হাই কোর্ট (High-Court) । এই…

High-Court order for 100 days work

পশ্চিমবঙ্গে মহাত্মা গান্ধী জাতীয় গ্রামীণ কর্মসংস্থান গ্যারান্টি প্রকল্প (MGNREGA) বা একশো দিনের কাজের প্রকল্প আবার শুরু করার নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা হাই কোর্ট (High-Court) । এই নির্দেশ গ্রামীণ অর্থনীতির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে, যা রাজ্যের লক্ষ লক্ষ গ্রামীণ শ্রমিকের জীবিকার প্রধান ভিত্তি।

এই প্রকল্পটি বন্ধ থাকার ফলে গ্রামীণ জনগণের মধ্যে ব্যাপক অসন্তোষ এবং অর্থনৈতিক সংকট দেখা দিয়েছিল। কলকাতা হাই কোর্টের এই রায় গ্রামীণ শ্রমিকদের জন্য এটি নতুন আশার সঞ্চার করেছে। প্রসঙ্গত রাজ্যসরকার বার বার দাবি করেছে কেন্দ্রীয় সরকার একশো দিনের কাজের টাকা দেয়না। এই নির্দেশে (High-Court) এবার এগিয়ে আসতে হবে কেন্দ্রীয় সরকারকেও।

   

পটভূমি: একশো দিনের কাজের সমস্যা 

একশো দিনের কাজের প্রকল্প, যা MGNREGA নামে পরিচিত, ভারতের গ্রামীণ এলাকায় বসবাসকারী পরিবারগুলির জন্য প্রতি বছর ১০০ দিনের নিশ্চিত কর্মসংস্থান প্রদানের লক্ষ্যে ২০০৫ সালে চালু হয়েছিল। পশ্চিমবঙ্গে এই প্রকল্পটি গ্রামীণ দারিদ্র্য হ্রাস এবং পরিকাঠামো উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তবে, গত কয়েক বছর ধরে রাজ্যে এই প্রকল্পের তহবিল বরাদ্দ এবং বাস্তবায়ন নিয়ে বিতর্ক চলছে (High-Court)।

২০২২ সালের শেষের দিকে, কেন্দ্রীয় সরকার পশ্চিমবঙ্গে MGNREGA-র তহবিল বন্ধ করে দেয়, অভিযোগ করে যে রাজ্য সরকার প্রকল্পের তহবিলের অপব্যবহার করেছে এবং স্বচ্ছতার অভাব রয়েছে। এর ফলে রাজ্যের লক্ষ লক্ষ শ্রমিক তাদের মজুরি থেকে বঞ্চিত হন, এবং প্রকল্পের কাজ প্রায় স্থগিত হয়ে পড়ে। এই পরিস্থিতি রাজ্যের গ্রামীণ অর্থনীতিতে মারাত্মক প্রভাব ফেলে, এবং শ্রমিকরা জীবিকার জন্য বিকল্প পথ খুঁজতে বাধ্য হন।

কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশ (High-Court)

সম্প্রতি, কলকাতা হাই কোর্টে (High-Court) এই বিষয়ে একটি জনস্বার্থ মামলা দায়ের করা হয়, যেখানে দাবি করা হয় যে একশো দিনের কাজ বন্ধ থাকার ফলে গ্রামীণ শ্রমিকদের সাংবিধানিক অধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে। মামলার শুনানির সময়, বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ রাজ্য এবং কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে এই প্রকল্প বন্ধের কারণ এবং তহবিল বরাদ্দের বিষয়ে বিস্তারিত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দেন।

শুনানির পর, কলকাতা হাই কোর্ট (High-Court) রায় দেয় যে, পশ্চিমবঙ্গে অবিলম্বে একশো দিনের কাজ পুনরায় চালু করতে হবে। আদালত জানায়, গ্রামীণ শ্রমিকদের জীবিকার অধিকার সংবিধানের ২১ অনুচ্ছেদে নিশ্চিত করা হয়েছে, এবং এই প্রকল্প বন্ধ থাকার ফলে তাদের মৌলিক অধিকার ক্ষুণ্ন হচ্ছে। আদালত আরও নির্দেশ দেয় যে, কেন্দ্রীয় সরকারকে রাজ্যের জন্য তহবিল মঞ্জুর করতে হবে এবং রাজ্য সরকারকে তা স্বচ্ছভাবে ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।

আদালত বলেছে, “একশো দিনের কাজ গ্রামীণ শ্রমিকদের জন্য কেবল একটি কর্মসংস্থান প্রকল্প নয়, এটি তাদের জীবিকার অধিকারের সঙ্গে জড়িত। কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের কারণে গ্রামীণ জনগণের অধিকার ক্ষুণ্ন হতে পারে না।” আদালত রাজ্য সরকারকে তিন মাসের মধ্যে প্রকল্পের বকেয়া মজুরি পরিশোধ করার নির্দেশও দিয়েছে।

অমরনাথ যাত্রায় ‘নো ফ্লাই জোন’, বাতিল কপ্টার পরিষেবা

রাজ্য ও কেন্দ্রের প্রতিক্রিয়া

কলকাতা হাই কোর্টের (High-Court) এই রায়ের পর রাজ্য সরকার এবং তৃণমূল কংগ্রেস (টিএমসি) নেতারা দাবি করেছেন যে, কেন্দ্রীয় সরকার ইচ্ছাকৃতভাবে পশ্চিমবঙ্গকে তহবিল থেকে বঞ্চিত করেছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্যের গরিব মানুষের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ করছে। আমরা একশো দিনের কাজের জন্য বারবার তহবিল চেয়েছি, কিন্তু বিজেপি সরকার আমাদের দাবি উপেক্ষা করেছে। আদালতের এই রায় আমাদের দাবির প্রমাণ।”

Advertisements

অন্যদিকে, বিজেপি নেতারা অভিযোগ করেছেন যে, তৃণমূল সরকার MGNREGA-র তহবিলের অপব্যবহার করেছে এবং স্থানীয় স্তরে দুর্নীতির কারণে প্রকল্পটি ব্যর্থ হয়েছে। রাজ্য বিজেপি সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেন, “রাজ্য সরকার তহবিলের সঠিক হিসাব দিতে ব্যর্থ হয়েছে। তৃণমূলের দুর্নীতির কারণে গ্রামীণ শ্রমিকরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।” কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানিয়েছে, আদালতের নির্দেশ মেনে তহবিল মঞ্জুর করা হবে, তবে রাজ্য সরকারকে তহবিল ব্যবহারের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে।

গ্রামীণ শ্রমিকদের প্রতিক্রিয়া

একশো দিনের কাজ পুনরায় চালু হওয়ার খবরে গ্রামীণ শ্রমিকদের মধ্যে আশার সঞ্চার হয়েছে। মুর্শিদাবাদের একজন শ্রমিক, রহিমা বিবি, বলেন, “এই প্রকল্প বন্ধ হওয়ার পর আমাদের পরিবারের খুব কষ্ট হয়েছে। আমরা শহরে গিয়ে কাজ খুঁজেছি, কিন্তু তাতেও স্থায়ী কিছু পাইনি। আদালতের এই নির্দেশ আমাদের জন্য নতুন জীবন।”

দক্ষিণ ২৪ পরগনার একটি গ্রামের পঞ্চায়েত সদস্য বলেন, “এই প্রকল্পের মাধ্যমে শুধু শ্রমিকরাই উপকৃত হন না, গ্রামের রাস্তা, জলাশয় এবং অন্যান্য অবকাঠামোও উন্নত হয়। প্রকল্পটি চালু হলে আমাদের গ্রামের অর্থনীতি আবার গতি পাবে।”

অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক প্রভাব

একশো দিনের কাজ পুনরায় চালু হওয়া রাজ্যের গ্রামীণ অর্থনীতির জন্য একটি বড় উদ্দীপনা হিসেবে কাজ করবে। অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, এই প্রকল্প গ্রামীণ পরিবারগুলির ক্রয়ক্ষমতা বাড়াবে, যা স্থানীয় বাজার এবং ব্যবসায়ের উপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। তবে, তহবিলের স্বচ্ছ ব্যবহার এবং প্রকল্পের সঠিক বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা রাজ্য সরকারের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হবে।

রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে, এই রায় তৃণমূল এবং বিজেপির মধ্যে চলমান বিতর্ককে আরও তীব্র করতে পারে(High-Court)। ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে এই ইস্যুটি উভয় দলই তাদের প্রচারে ব্যবহার করতে পারে। তৃণমূল এই রায়কে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে তাদের অবস্থানের প্রমাণ হিসেবে উপস্থাপন করতে পারে, যেখানে বিজেপি রাজ্য সরকারের দুর্নীতির অভিযোগ তুলে পাল্টা আক্রমণ চালাতে পারে।

কলকাতা হাই কোর্টের (High-Court) নির্দেশে পশ্চিমবঙ্গে একশো দিনের কাজ পুনরায় চালু হওয়া গ্রামীণ শ্রমিকদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ জয়। এই প্রকল্পটি কেবল কর্মসংস্থানের সুযোগই নয়, গ্রামীণ পরিকাঠামোর উন্নয়ন এবং অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্যও অপরিহার্য। তবে, এই নির্দেশের সফল বাস্তবায়ন নির্ভর করবে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের সমন্বয় এবং স্বচ্ছতার উপর। গ্রামীণ জনগণ এখন আশায় বুক বেঁধে অপেক্ষা করছে যে, এই প্রকল্প তাদের জীবনে নতুন আলো আনবে।