নয়াদিল্লি: স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউট (SIPRI)-এর সদ্য প্রকাশিত বার্ষিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, পারমাণবিক অস্ত্রের সংখ্যায় পাকিস্তানকে ছাড়িয়ে গিয়েছে ভারত। ২০২৫ সালের হিসাবে ভারতের হাতে রয়েছে ১৮০টি পারমাণবিক ওয়ারহেড, যেখানে পাকিস্তানের সংখ্যা অপরিবর্তিত থেকে ১৭০-তেই রয়েছে।
এক বছরের মধ্যে বেড়েছে ৮টি ওয়ারহেড
সিপ্রির মতে, ২০২৪ সালে ভারতের কাছে ছিল ১৭২টি পারমাণবিক ওয়ারহেড, যা এক বছরের মধ্যে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৮০-তে। এই ওয়ারহেডগুলো ভারতের স্টকপাইলে রয়েছে, অর্থাৎ এগুলো প্রয়োজনে ব্যবহারের জন্য প্রস্তুত। পাকিস্তানও তার অস্ত্রভাণ্ডার বজায় রাখলেও, গত এক বছরে এর পরিমাণে কোনো বৃদ্ধি ঘটেনি।
সিপ্রি ১৯৬৬ সালে প্রতিষ্ঠিত একটি স্বাধীন গবেষণা প্রতিষ্ঠান, যা বৈশ্বিক অস্ত্র প্রতিযোগিতা, সংঘাত ও নিরস্ত্রীকরণ নিয়ে কাজ করে। তাদের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারত সম্প্রতি নতুন ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা, বিশেষ করে ক্যানিস্টারযুক্ত মিসাইল, যা একাধিক ওয়ারহেড বহনে সক্ষম, এর উন্নয়ন করছে। এইসব ক্ষেপণাস্ত্র শান্তিকালেও প্রস্তুত অবস্থায় রাখা যায়।
পাকিস্তানের ওয়ারহেডে কোনও পরিবর্তন আসেনি India Nuclear Weapons SIPRI
অন্যদিকে, পাকিস্তানও নতুন ডেলিভারি সিস্টেম এবং ফিসাইল উপাদান সংগ্রহের চেষ্টা চালালেও, মোট ওয়ারহেডের সংখ্যায় কোনও পরিবর্তন আনতে পারেনি।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ভারত স্থল, জল ও আকাশ-তিনটি মাধ্যমেই পারমাণবিক অস্ত্র পরিবহণের ক্ষমতা দ্রুত বাড়াচ্ছে, যা পাকিস্তানের তুলনায় অধিক টেকসই এবং বিশ্বাসযোগ্য দ্বিতীয় পর্যায়ের প্রতিশোধমূলক হামলার (second-strike) সক্ষমতা গড়ে তুলছে।
পরমাণু হামলার হুমকি
এই তথ্য সামনে আসে ভারতের ঐতিহাসিক “অপারেশন সিঁদুর”-এর এক মাসেরও বেশি সময় পরে। ২২ এপ্রিলের পহেলগাঁও হত্যাকাণ্ডে পাকিস্তান-সমর্থিত জঙ্গিদের হাতে ২৬ জন সাধারণ নাগরিক নিহত হওয়ার পর ভারতের এই প্রতিক্রিয়া আসে। সেই অভিযানে ভারত পাকিস্তান এবং পাক-অধিকৃত কাশ্মীরে মোট ৯টি জঙ্গি ঘাঁটি ধ্বংস করে। পাকিস্তানের পরমাণু হামলার হুমকি সত্ত্বেও, ভারত ওই অভিযানে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ পাক এয়ারবেসও আঘাত করে, যেগুলোর কথা পরে ইসলামাবাদ স্বীকারও করে।
পারমাণবিক হুমকি সহ্য নয়
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে বলেন, “পারমাণবিক ব্ল্যাকমেইলের আড়ালে পরিচালিত সন্ত্রাসবাদী পরিকাঠামো ভারতের নিশানায় থাকবে। দেশ হিসেবে আমরা আর কোনও রকম পারমাণবিক হুমকি সহ্য করব না।”
সিপ্রি-র প্রতিবেদন আরও উল্লেখ করেছে, ভারত ও পাকিস্তান দু’জনেই আনুষ্ঠানিক পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ চুক্তির বাইরে থাকলেও, ভারতের ‘নো ফার্স্ট ইউজ’ (প্রথমে ব্যবহার না করার) নীতির ফলে তার পরমাণু নীতিকে তুলনামূলকভাবে অধিক স্থিতিশীল বলে মনে করা হয়।
বিশ্বে বর্তমানে মোট ১২,২৪১টি পারমাণবিক ওয়ারহেড রয়েছে, যার মধ্যে ৯,৬১৪টি স্টকপাইলে এবং ৩,৯১২টি মোতায়েন করা হয়েছে। এর ৯০ শতাংশই যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার হাতে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে চীন ও ভারত দুই দেশই দ্রুত পরমাণু শক্তি বৃদ্ধির পথে এগোচ্ছে। চীনের হাতে বর্তমানে ৬০০টি পরমাণু ওয়ারহেড রয়েছে, যার মধ্যে মাত্র ২৪টি মোতায়েন করা হয়েছে।