খিদিরপুর বাজারে ঘটে গেল এক মর্মান্তিক দুর্ঘটনা। রবিবার মধ্যরাতে হঠাৎ করে ভয়াবহ আগুনে ভস্মীভূত হয়ে গেল প্রায় ৪০০-রও বেশি দোকান। আগুনের তীব্রতা এতটাই বেশি ছিল যে গোটা এলাকা মুহূর্তেই ধোঁয়ার চাদরে ঢেকে যায়। আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে গোটা বাজার এলাকায়। আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয় দমকল বিভাগের ২০টি ইঞ্জিন। আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে দীর্ঘক্ষণ ধরে চেষ্টা চালালেও এখনও পুরোপুরি আগুন নিভিয়ে ফেলা সম্ভব হয়নি।
প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, রবিবার রাত ২টো ৫ মিনিট নাগাদ আগুনের প্রথম শিখা চোখে পড়ে। খিদিরপুর বাজার এলাকাটি অত্যন্ত ঘিঞ্জি এবং দোকানগুলি একে অপরের ঘেঁষাঘেঁষি হওয়ায় অল্প সময়ের মধ্যেই আগুন এক দোকান থেকে অন্য দোকানে ছড়িয়ে পড়ে। আগুনের গ্রাসে পুড়ে যায় অসংখ্য দোকান। মালপত্রে ঠাসা দোকানগুলিতে দাহ্য বস্তু বেশি থাকায় আগুন দ্রুত ভয়াবহ রূপ নেয়।
দমকল বিভাগের কর্মীরা জানান, রাতের অন্ধকারে এবং এলাকাজুড়ে ছড়িয়ে থাকা ঘন ধোঁয়ার কারণে আগুন নেভানোর কাজ আরও কঠিন হয়ে পড়ে। এখনও এলাকাজুড়ে ধিকিধিকি আগুন জ্বলছে। বিভিন্ন জায়গায় পকেট ফায়ার রয়েছে, যার ফলে আগুন আবারও জ্বলে উঠতে পারে। ধোঁয়ার কারণে দমকল কর্মীদের অক্সিজেন মাস্ক ব্যবহার করে আগুন নেভাতে হচ্ছে।
ঘটনাস্থলে দ্রুত পৌঁছান রাজ্যের দমকলমন্ত্রী সুজিত বসু। তিনি জানান, “এই অগ্নিকাণ্ড অত্যন্ত ভয়াবহ। ক্ষয়ক্ষতি অনেক। আমরা আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সমস্তরকম চেষ্টা চালাচ্ছি। দমকলের ২০টি ইঞ্জিন কাজ করছে। পরিস্থিতি পর্যালোচনার জন্য প্রশাসনের উচ্চপদস্থ আধিকারিকদের সঙ্গে আলোচনা চলছে।”
এদিকে, দোকান পুড়ে যাওয়া ব্যবসায়ীদের মধ্যে তীব্র অসন্তোষ ও দুশ্চিন্তা দেখা দিয়েছে। অনেকেই জানান, তাঁদের জীবনের সম্বল ছিল এই দোকানগুলো। আগুনে সব কিছু পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছে। এক ব্যবসায়ী বলেন, “আমার দোকানে নতুন মাল এসেছিল। কয়েক লক্ষ টাকার জিনিস পুড়ে গেল। এখন আমি পথে বসে গেছি।”
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, খিদিরপুর বাজারে আগেও ছোটখাটো অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। তবে এত বড় অগ্নিকাণ্ড আগে কখনও দেখা যায়নি। পুরসভার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বাজার এলাকাগুলিতে অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা খুবই দুর্বল। বাজারে পর্যাপ্ত ফায়ার এক্সটিংগুইশার বা অ্যালার্ম সিস্টেম ছিল না। আগুন লাগার পর স্থানীয় বাসিন্দারা প্রথমে নিজেরাই জলের পাইপ ও বালতির সাহায্যে আগুন নেভানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যাওয়ায় বাধ্য হয়ে দমকলকে খবর দেওয়া হয়।
ঘটনার পর বাজার এলাকায় মোতায়েন করা হয়েছে বিশাল পুলিশ বাহিনী। আগুন সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে না আসা পর্যন্ত এলাকার সাধারণ মানুষকে বাজার চত্বরের ভিতরে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। পাশাপাশি, আশেপাশের বাসিন্দাদের নিরাপত্তার কারণে অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
এই ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় এখনও পর্যন্ত কোনো প্রাণহানির খবর নেই, তবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কয়েক কোটি টাকার বলে অনুমান করা হচ্ছে। প্রশাসনের তরফ থেকে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসনের বিষয়ে চিন্তাভাবনা শুরু হয়েছে। তবে কবে স্বাভাবিক হবে বাজার, আবার কবে দোকান খুলবে—সে প্রশ্নের উত্তর আপাতত অজানা।
খিদিরপুরের এই ঘটনা শহরবাসীকে আবারও চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল, বাজার ও জনবহুল এলাকায় অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা কতটা দুর্বল। প্রয়োজনীয় সাবধানতা ও প্রস্তুতি না থাকলে, এই ধরনের দুর্ঘটনা ভবিষ্যতেও ঘটতে পারে। এখন সময় এসেছে, পুরসভা এবং রাজ্য সরকার যৌথভাবে এই বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখার।