২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য আয়কর রিটার্ন (ITR) দাখিলের মৌসুম শুরু হয়ে গেছে, এবং করদাতাদের জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়। চাকরিজীবী, ফ্রিল্যান্সার কিংবা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী—সবাইকে এবার সতর্ক হয়ে রিটার্ন ফাইল করতে হবে, নইলে হতে পারে বিপদ। ডিজিটাল মাধ্যমে রিটার্ন দাখিল সহজ হলেও সামান্য ভুলও জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে—যেমন, নোটিশ আসা, রিফান্ডে দেরি বা জরিমানা।
বর্তমানে করদাতাদের আর্থিক তথ্য যেমন আরও বেশি আন্তঃসংযুক্ত হয়েছে, তেমনই প্রি-ফিলড ফর্মের ব্যবহারও বেড়েছে। ফলে যেকোনো গরমিল খুব সহজেই ধরা পড়ে যাচ্ছে। আয়কর দফতর এখন বার্ষিক তথ্য বিবরণী (Annual Information Statement বা AIS) এবং ফর্ম ২৬এএস (Form 26AS)-এর মতো উন্নত ট্র্যাকিং টুল ব্যবহার করছে, যা যেকোনো ভুল বা লুকোনো তথ্য ধরতে পারছে অনায়াসেই।
এই বছর করদাতারা যেসব সাধারণ ভুল এড়িয়ে চললে ভালো হয়, তা নিচে তুলে ধরা হলো—
১. ব্যক্তিগত তথ্যে ভুল
অনেক সময় নাম, প্যান (PAN), আধার (Aadhaar), ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নম্বর বা ঠিকানায় ভুল থাকলে রিটার্ন বাতিল বা স্থগিত হয়ে যায়। রিটার্ন ফাইল করার আগে নিশ্চিত হয়ে নিন যে এই তথ্যগুলো সব সরকারি রেকর্ডের সঙ্গে মিলে যাচ্ছে।
২. ফর্ম ১৬ ও AIS/ফর্ম ২৬এএস-এ গরমিল
চাকরিজীবীরা সাধারণত তাদের কোম্পানি প্রদত্ত ফর্ম ১৬-এর উপর নির্ভর করেন। কিন্তু সেটা AIS ও ফর্ম ২৬এএস-এর সঙ্গে মিলিয়ে দেখা অত্যন্ত জরুরি, যাতে কোনো আয়, কর কর্তন বা ট্যাক্স ক্রেডিটে গরমিল না থাকে। সামান্য গরমিল থেকেও অনিচ্ছাকৃত আয় লুকানোর অভিযোগ আসতে পারে।
৩. সব উৎসের আয় রিপোর্ট না করা
সঞ্চয়ী অ্যাকাউন্টের সুদ, ফিক্সড ডিপোজিট, শেয়ার বা মিউচুয়াল ফান্ড থেকে প্রাপ্ত ক্যাপিটাল গেইন, ডিভিডেন্ড, ভাড়াবাড়ির আয় কিংবা বিদেশ থেকে আয়—সব রিপোর্ট করতে হবে। ফ্রিল্যান্সার বা ব্যবসায়ীদের সব রসিদ দেখাতে হবে, এমনকি যদি তার উপর ট্যাক্স কাটা না হয়ে থাকে, তবুও।
৪. ভুল ITR ফর্ম নির্বাচন
যথাযথ ফর্ম না ব্যবহার করলে রিটার্ন ‘ডিফেকটিভ’ হিসেবে গণ্য হতে পারে। যেমন, যাঁদের বিদেশি সম্পদ বা ক্যাপিটাল গেইন আছে, তাঁদের ITR-১ ব্যবহার করা চলবে না। প্রতিটি ফর্মের উপযোগিতা দেখে নির্বাচন করুন।
৫. কর ছাড় ও ছাড়পত্র দাবির ভুলে যাওয়া
৮০সি (LIC, PPF, EPF ইত্যাদি), ৮০ডি (স্বাস্থ্য বীমা), ৮০টিটিএ (সঞ্চয়ী অ্যাকাউন্টের সুদ), ২৪(বি) (গৃহঋণের সুদ) এর মতো ধারা অনুযায়ী ট্যাক্স ছাড় পাওয়া যায়। এগুলো দাবী না করলে অপ্রয়োজনীয় কর দিতে হতে পারে।
৬. রিটার্ন যাচাই না করা
রিটার্ন ফাইল করলেই কাজ শেষ নয়। সেটি যাচাই করাও বাধ্যতামূলক। আধার OTP, নেট ব্যাংকিং বা ITR-V ফর্ম সেন্টারে পাঠিয়ে ই-ভেরিফিকেশন করতে হবে। না করলে রিটার্নটি ‘দাখিল না হওয়া’ হিসেবে ধরা হবে।
৭. অগ্রিম কর বা স্ব-মূল্যায়ন কর জমা না দেওয়া
যাঁরা ব্যবসা করেন, ফ্রিল্যান্সার বা ক্যাপিটাল গেইনের মাধ্যমে আয় করেন, তাঁদের বার্ষিক করের পরিমাণ ১০,০০০ টাকার বেশি হলে ‘অগ্রিম কর’ জমা দিতে হবে। না হলে ২৩৪বি এবং ২৩৪সি ধারায় সুদ ও জরিমানা বসতে পারে।
রিটার্ন সংশোধনের সুযোগ
যদি আপনি ইতিমধ্যেই রিটার্ন জমা দিয়ে কোনো ভুল খুঁজে পান, চিন্তার কিছু নেই। আয়কর দফতর সংশোধিত রিটার্ন (Revised Return) জমা দেওয়ার সুযোগ দেয়। চলতি বছর অর্থাৎ ২০২৫-২৬ অর্থবছরের সংশোধিত রিটার্ন জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ৩১ ডিসেম্বর, ২০২৫। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সংশোধন করলে জরিমানাও এড়ানো যাবে।
এই বছর ব্যক্তিগত করদাতাদের জন্য আয়কর রিটার্ন দাখিলের শেষ দিন হলো ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৫। কিন্তু শেষ সময় পর্যন্ত অপেক্ষা না করে আগেই রিটার্ন জমা দেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ।
উপসংহার: রিটার্ন ফাইল করা শুধুমাত্র আইনগত দায়িত্ব নয়, এটি আর্থিক শৃঙ্খলার প্রতীকও। যাঁরা সময়মতো সঠিকভাবে রিটার্ন দাখিল করেন, তাঁদের রিফান্ডও দ্রুত মেলে এবং ভবিষ্যতে ঋণ, ভিসা ইত্যাদিতে সুবিধা হয়। সুতরাং, সতর্ক থেকে, তথ্য মিলিয়ে নিয়ে, যথাযথ ছাড় দাবী করে এবং রিটার্ন যাচাই করে ফাইল করুন—তাহলেই এই কর মৌসুম হবে নির্ভার ও জটিলতামুক্ত।