বিশ্ব ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা ফিফা (FIFA) বুধবার উত্তর আমেরিকায় এক বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল। ২০২৬ সালের ১১ জুন শুরু হতে যাওয়া ২০২৬ ফিফা বিশ্বকাপের (Football World Cup 2026) এক বছর আগের কাউন্টডাউন উদযাপন করে। তিনটি দেশ—কানাডা (Canada), মেক্সিকো (Mexico) এবং যুক্তরাষ্ট্র (USA) জুড়ে ১৬টি শহরে আয়োজিত এই টুর্নামেন্টে প্রথমবারের মতো ৪৮টি দল অংশ নেবে, যা ইতিহাসে সবচেয়ে বড় এবং সর্বাঙ্গীণ ফিফা বিশ্বকাপ হতে চলেছে। এই আসরে প্রায় ৬৫ লাখ দর্শকের স্টেডিয়ামে সমাগমের প্রত্যাশা করা হচ্ছে। ফিফার সভাপতি জিয়ান্নি ইনফান্তিনো এই মুহূর্তকে একটি ‘বিশ্বব্যাপী সংযোগ, ঐক্য এবং উৎসাহের উৎসব’ হিসেবে অভিহিত করেছেন।
ইনফান্তিনো বলেন, “এক বছর পর, পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ফুটবল উৎসব বিশ্বকে আগের চেয়ে আরও বেশি মুগ্ধ করবে। এটি কেবল একটি টুর্নামেন্ট নয়, এটি একটি বিশ্বব্যাপী উৎসব যা সংযোগ, ঐক্য এবং আবেগের মাধ্যমে মানুষকে একত্রিত করে। বিশ্বের প্রতিটি কোণ থেকে দলগুলি যোগ্যতা অর্জন করছে এবং সমর্থকরা এই ঐতিহাসিক ইভেন্টের অংশ হওয়ার জন্য পরিকল্পনা করছে। এটি হবে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বড় ফিফা বিশ্বকাপ।”
⏳🏆 #WeAre26 | #FIFAWorldCup pic.twitter.com/OuO8iQqVj2
— FIFA World Cup (@FIFAWorldCup) June 11, 2025
এই কাউন্টডাউনের মাইলফলক উদযাপনের সময় যুক্তরাষ্ট্র ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপ ২০২৫ আয়োজনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে, যা আগামী শনিবার ফ্লোরিডার মায়ামিতে শুরু হবে। এই টুর্নামেন্টে বিশ্বের ৩২টি শীর্ষ ক্লাব দল ফিফার প্রকৃত ক্লাব বিশ্ব চ্যাম্পিয়নের খেতাব জয়ের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে। এই ইভেন্টটি বিশ্বকাপের আগে উত্তর আমেরিকায় ফুটবলের জনপ্রিয়তা আরও বাড়িয়ে তুলবে। ইনফান্তিনো এই প্রতিযোগিতাকে ‘বিশ্ব ফুটবলের জন্য একটি যুগান্তকারী ঘটনা’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
এক বছরের কাউন্টডাউন উপলক্ষে ১৬টি আয়োজক শহরে স্থানীয় সংস্কৃতি থেকে অনুপ্রাণিত কাউন্টডাউন ঘড়ি উন্মোচন করা হবে। এই ঘড়িগুলি প্রতিটি শহরের কেন্দ্রীয় ও আইকনিক স্থানে স্থাপন করা হয়েছে, যা ২০২৬ সালের ১১ জুন মধ্যরাত পর্যন্ত সময় গণনা করবে। প্রতিটি শহর একটি ভিডিও প্রকাশ করবে, যেখানে স্থানীয় সেলিব্রিটি বা ব্যক্তিত্ব তাদের শহরের অনন্য বৈশিষ্ট্য তুলে ধরবেন। ইনফান্তিনো বলেন, “১৬টি আয়োজক শহরের ঐশ্বর্য, সংস্কৃতি এবং অনন্য স্বাদ ফিফা বিশ্বকাপের মাধ্যমে বিশ্বের সামনে প্রকাশিত হবে। আমরা প্রতিটি মহাদেশ থেকে দল এবং অতিথিদের স্বাগত জানাতে উন্মুখ, যারা ফুটবলের সবচেয়ে মহিমান্বিত মঞ্চে এই সুন্দর খেলাটি উদযাপন করবে।”
বর্তমানে আয়োজক দেশ কানাডা, মেক্সিকো এবং যুক্তরাষ্ট্রের পাশাপাশি আরও ১০টি দল ফাইনালের জন্য যোগ্যতা অর্জন করেছে, যার মধ্যে রয়েছে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনা, প্রথমবারের মতো যোগ্যতা অর্জনকারী জর্ডান ও উজবেকিস্তান এবং ফুটবলের পরাশক্তি অস্ট্রেলিয়া, ব্রাজিল, ইকুয়েডর, ইরান, জাপান, কোরিয়া রিপাবলিক এবং নিউজিল্যান্ড। বাকি ৩৫টি দল ২০২৬ সালের মার্চের মধ্যে নিশ্চিত হবে এবং গ্রুপ পর্বের ম্যাচ নির্ধারণের জন্য ২০২৫ ডিসেম্বর ফাইনাল ড্র অনুষ্ঠিত হবে।
এই বিশ্বকাপটি শুধুমাত্র খেলার মাঠের প্রতিযোগিতার জন্য নয়, বরং সাংস্কৃতিক বিনিময় এবং বিশ্বব্যাপী ঐক্যের একটি মঞ্চ হিসেবে কাজ করবে। ইনফান্তিনোর দৃষ্টিভঙ্গি হলো ফুটবলের মাধ্যমে তরুণ প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করা এবং আয়োজক শহরগুলোতে দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলা। তিনি বলেন, “এই টুর্নামেন্টের প্রভাব গভীর এবং দীর্ঘস্থায়ী হবে। ফিফা বিশ্বকাপ সবসময় তরুণদের অনুপ্রাণিত করে, কিন্তু ২০২৬ আমরা পরবর্তী প্রজন্মের জন্য বাস্তব পথ তৈরি করছি। বিনিয়োগ এবং দৃশ্যমানতার মাত্রা গ্রাসরুট প্রোগ্রামকে ত্বরান্বিত করবে, অবকাঠামো উন্নত করবে এবং তরুণ খেলোয়াড়দের বড় স্বপ্ন দেখতে উৎসাহিত করবে।”
তবে, এই বিশ্বকাপের পথে চ্যালেঞ্জও রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর অভিবাসন নীতি নিয়ে উদ্বেগ উঠেছে, যা সমর্থকদের অংশগ্রহণে প্রভাব ফেলতে পারে। ইনফান্তিনো যদিও আশ্বাস দিয়েছেন যে তিনি মার্কিন সরকারের সঙ্গে কাজ করছেন যাতে সমর্থক, খেলোয়াড় এবং সাংবাদিকদের নিরাপদ অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা যায়। উত্তর আমেরিকার এই বিশ্বকাপ শুধু ফুটবলের উৎসবই নয়, বরং একটি ঐতিহাসিক ঘটনা হিসেবে বিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষণ করবে।