‘পাহাড়ি বিছে’র কামড়ে বিদ্ধ ফুটবল ফেডারেশন চেয়ারম্যান কল্যাণ!

ভারতীয় ফুটবল দলের এএফসি এশিয়ান কাপ ২০২৭ কোয়ালিফায়ারে নিম্ন-র‍্যাঙ্কযুক্ত হংকংয়ের কাছে ০-১ গোলে হারের পর প্রাক্তন অধিনায়ক ‘পাহাড়ি বিছে’ ভাইচুং ভূটিয়া (Bhaichung Bhutia) অল ইন্ডিয়া…

Bhaichung Bhutia, Kalyan Chaubey

ভারতীয় ফুটবল দলের এএফসি এশিয়ান কাপ ২০২৭ কোয়ালিফায়ারে নিম্ন-র‍্যাঙ্কযুক্ত হংকংয়ের কাছে ০-১ গোলে হারের পর প্রাক্তন অধিনায়ক ‘পাহাড়ি বিছে’ ভাইচুং ভূটিয়া (Bhaichung Bhutia) অল ইন্ডিয়া ফুটবল ফেডারেশনের (AIFF) বিরুদ্ধে তীব্র সমালোচনা করেছেন। এই পরাজয় ভারতের কোয়ালিফিকেশনের সম্ভাবনাকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে এবং দেশের ফুটবল ব্যবস্থায় গভীর সংকটের চিত্র তুলে ধরেছে। ২০২২ সালের নির্বাচনে বর্তমান এআইএফএফ সভাপতি কল্যাণ চৌবেয়ের কাছে পরাজিত ভূটিয়া ফেডারেশনের ব্যবস্থাপনার ত্রুটি এবং সম্পূর্ণ কাঠামোগত সংস্কারের প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দিয়েছেন।

   

ম্যাচের আগে ভারত ফিফা র‍্যাঙ্কিংয়ে ১২৭তম স্থানে ছিল, যেখানে হংকং ছিল ১৫৩তম। এই হারের ফলে ভারতের র‍্যাঙ্কিং ১৩৩-এ নেমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। পিটিআই-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ভূটিয়া বলেন, “এটা দেখতে খুবই কষ্টকর… আমরা এখন এশিয়ান কাপের জন্য কোয়ালিফাই করতেও হিমশিম খাচ্ছি, যেখানে আমরা নিয়মিত কোয়ালিফাই করতাম। উজবেকিস্তান, ইন্দোনেশিয়া, জর্ডানের মতো দেশ বিশ্বকাপে কোয়ালিফাই করেছে, আর আমরা এশিয়ান কাপ নিয়ে লড়াই করছি। এটা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক।”

AIFF-এর উপর ভূটিয়ার অভিযোগ
ভূটিয়া সরাসরি এআইএফএফ সভাপতি কল্যাণ চৌবেয়ের উপর এই সংকটের দায় চাপিয়েছেন। তিনি ফেডারেশনের নেতৃত্ব এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ার সমালোচনা করে বলেন, “কল্যাণ চৌবে ভারতীয় ফুটবলকে ধ্বংস করে দিয়েছেন। তাকে পদত্যাগ করতে হবে। দুই বছরে তিনজন জেনারেল সেক্রেটারি—পুরো কাঠামোটাই বদলাতে হবে।” তিনি ইন্টার কাশি এবং চার্চিল ব্রাদার্সের মধ্যে আই-লিগ শিরোপা নিয়ে অমীমাংসিত বিতর্কের কথাও উল্লেখ করেন।তিনি বলেন “বিতর্কের পর বিতর্ক, দুর্নীতির অভিযোগ… মাসের পর মাস পেরিয়ে গেলেও আমরা জানি না আই-লিগের বিজয়ী কে।” ভূটিয়া জাতীয় দলের কোচ মানোলো মার্কুয়েজ নিয়োগ নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি বলেন, এআইএফএফ টেকনিক্যাল কমিটিকে উপেক্ষা করে মার্কুয়েজকে নিয়োগ করেছে, যিনি এফসি গোয়ার সঙ্গেও কোচিং চালিয়ে যাচ্ছেন।তিনি মন্তব্য করেন “একই ব্যক্তি ক্লাব এবং জাতীয় দলের কোচ হতে পারেন না। এটা স্বার্থের সংঘাত।”

Advertisements

ছেত্রীর প্রত্যাবর্তন নিয়ে সমালোচনা
হংকং ম্যাচের জন্য সুনীল ছেত্রীকে অবসর থেকে ফিরিয়ে আনার সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে ভূটিয়া বলেন, এটা কৌশলের পরিবর্তে হতাশার ফল। তিনি প্রশ্ন করেন “ছেত্রী ফিরেছেন, এটা ভালো, কিন্তু এটা সম্পূর্ণ ভুল সিদ্ধান্ত। মানোলোর এটা চাওয়া উচিত হয়নি, আর এখন শুনছি ফেডারেশনই এটা চাপিয়েছে। কিন্তু কী বদলেছে?” । তিনি খেলোয়াড়দের জন্য ৫০,০০০ মার্কিন ডলারের ম্যাচ বোনাসেরও সমালোচনা করে বলেন, “একটা ম্যাচের জন্য ৪২ লাখ টাকা দেওয়া হচ্ছে। কোয়ালিফিকেশনের সঙ্গে এটা যুক্ত করা উচিত ছিল। এটা ফেডারেশনের কতটা অদূরদর্শী সিদ্ধান্ত তা দেখায়।”

গৌতম সরকারের হতাশা
প্রাক্তন ভারতীয় মিডফিল্ডার গৌতম সরকার জাতীয় দলের স্থবিরতার জন্য হতাশা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, “আমরা এক ইঞ্চিও এগোইনি। সুনীল ছেত্রী যদি এখনও আপনার অপরিহার্য খেলোয়াড় হন, এর চেয়ে দুর্ভাগ্যজনক আর কী হতে পারে?” তিনি ফেডারেশনকে এই সংকটের জন্য সম্পূর্ণ দায়ী করে বলেন, “ফেডারেশন সম্পূর্ণ ব্যর্থ।”

সুব্রত ভট্টাচার্যের পরামর্শ
কিংবদন্তি কোচ সুব্রত ভট্টাচার্য বিদেশি কোচদের উপর অতিরিক্ত নির্ভরতার সমালোচনা করে ভারতীয় কোচদের উপর ভরসা রাখার পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, “বিদেশি কোচ সাফল্যের নিশ্চয়তা দেয় না। পিকে ব্যানার্জি, অমল দত্তর মতো দেশীয় কোচরা গৌরব এনেছিলেন। আইএসএলে বিদেশিরা ভারতীয় খেলোয়াড়দের উন্নতি করতে পারবে না। ভারতীয় কোচরাই আমাদের ছেলেদের বুঝতে পারেন।”