ইন্ডিয়ান সুপার লিগে (ISL) ধারাবাহিক ব্যর্থতার পর অবশেষে রক্ষণভাগে শক্তি বাড়াতে বড়সড় পদক্ষেপ নিতে চলেছে ইস্টবেঙ্গল (East Bengal)। রাজস্থান ইউনাইটেডের (Rajasthan United) প্রতিভাবান ও ফর্মে থাকা সেন্টার-ব্যাক মার্তন্ড রায়নাকে (Martand Raina) ২৫ লক্ষ টাকার বিনিময়ে দলে টানতে চূড়ান্ত পর্যায়ে মশাল ব্রিগেড। পারফরম্যান্সের উপর নির্ভরশীল কিছু অতিরিক্ত বোনাস যুক্ত থাকায় এই ট্রান্সফার ডিলের আর্থিক মূল্য আরও বাড়তে পারে।
মাত্র ২৪ বছর বয়সী এই ডিফেন্ডার ২০২৪-২৫ মরসুমে আইলিগে নজরকাড়া পারফরম্যান্স দেখিয়ে ইতিমধ্যেই আলোচনার কেন্দ্রে উঠে এসেছেন। রাজস্থান ইউনাইটেডের হয়ে ২১টি ম্যাচে অংশগ্রহণ করে, তিনি চারটি গোলকরেছেন। এক্ষেত্রে এক ব্যতিক্রমী অর্জন যা একজন ডিফেন্ডারের জন্য। তার দৃষ্টান্তমূলক ইনসেপশন, হেডিং দক্ষতা ও সেট-পিসে গোল করার ক্ষমতা তাঁকে আলাদা করে তোলে। এই পারফরম্যান্সই ইস্টবেঙ্গল কর্তৃপক্ষের নজরে পড়ে এবং তাকে দলে নেওয়ার প্রক্রিয়া দ্রুত এগিয়ে যায়।
ইস্টবেঙ্গলের রক্ষণভাগে নতুন অধ্যায়
গত মরসুমে ইস্টবেঙ্গলের সবচেয়ে বড় দুর্বলতা ছিল রক্ষণভাগ। হেক্টর ইউস্তে ও হিজাজি মাহেরের চোট, আনোয়ার আলির ফর্মে ওঠানামা—সব মিলিয়ে রক্ষণভাগে কোনো নিরবিচ্ছিন্নতা ছিল না। ফলে ম্যাচের পর ম্যাচ গোল হজম করে দলকে ভুগতে হয়েছে। এই পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসতেই ক্লাব নতুন করে রক্ষণভাগ সাজাতে মরিয়া হয়ে ওঠে।
নির্বাচন ‘বাতিল’ করে পালতোলা নৌকার আসন ভাগাভাগির সম্ভাবনা বাগানকর্তাদের
মার্তন্ড রায়নার আগমনে ইস্টবেঙ্গলের রক্ষণভাগে নতুন প্রাণ আসবে বলেই মনে করা হচ্ছে। তার খেলার ধরণ, সামনে গিয়ে বল কভার করার ক্ষমতা এবং প্রতিপক্ষের আক্রমণ ভেঙে দেওয়ার দক্ষতা ক্লাবকে অনেকটা স্বস্তি দেবে। তিনি যদি আনোয়ার আলির সঙ্গে একটি মজবুত সেন্টার-ব্যাক জুটি গড়ে তুলতে পারেন, তবে আগামী সিজনে ইস্টবেঙ্গলের রক্ষণ আগের চেয়ে অনেক বেশি নির্ভরযোগ্য হতে পারে।
ব্রেকআউট মরসুম : আইলিগে রায়নার উত্থান
২০২৪-২৫ আইলিগ সিজন ছিল মার্তন্ড রায়নার পেশাদার জীবনের টার্নিং পয়েন্ট। রাজস্থান ইউনাইটেডের জার্সিতে তিনি শুধু রক্ষণ সামলাননি, বরং প্রতিপক্ষের ডি-বক্সেও ছিলেন বড়সড় হুমকি। বিশেষ করে কর্নার ও ফ্রি-কিক থেকে তাঁর গোল করার ক্ষমতা তাঁকে আলাদা মর্যাদা দেয়। বল পায়ে তাঁর আত্মবিশ্বাস ও মিডফিল্ড পর্যন্ত বল এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার স্কিলও কোচেদের নজর কেড়েছে।
মাঠে উপস্থিতির পাশাপাশি রায়নার মানসিক দৃঢ়তা ও ম্যাচ রিডিং ক্ষমতা তাঁকে আরও পরিণত খেলোয়াড়ে পরিণত করেছে। এই গুণগুলিই ইস্টবেঙ্গলের নতুন কোচিং স্টাফের পরিকল্পনায় তাকে এক গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে পরিণত করেছে।
বাজারে লড়াই: মুম্বই সিটির সামনে থেকে বাজিমাত
মার্তন্ড রায়নার প্রতি আগ্রহ ছিল মুম্বই সিটি এফসির মতো বড় ক্লাবেরও। তারা কয়েক সপ্তাহ ধরে আলোচনায় থাকলেও শেষ পর্যন্ত কোনও চুক্তিতে পৌঁছতে পারেনি। এই সুযোগের সদ্ব্যবহার করে ইস্টবেঙ্গল দ্রুত পদক্ষেপ নিয়ে তাকে দলে টানতে কার্যত চূড়ান্ত করে ফেলেছে।
ইস্টবেঙ্গলের এই সাইনিং নিঃসন্দেহে ভবিষ্যতের জন্য একটি ইতিবাচক বার্তা। দীর্ঘদিন ধরে রক্ষণভাগে অস্থিরতা আর ফর্মের অভাবে ভুগছে কলকাতার ঐতিহ্যবাহী ক্লাব। মার্তন্ড রায়নার মতো তরুণ, উদ্যমী ও কার্যকরী ডিফেন্ডার এই পরিস্থিতি বদলাতে বড় ভূমিকা রাখতে পারেন। যদি তিনি নিজের ফর্ম ধরে রাখতে পারেন এবং নতুন কোচের পরিকল্পনার সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারেন, তাহলে ইস্ট বেঙ্গল আগামী সিজনে এক নতুন রূপে আত্মপ্রকাশ করতে পারে।