নির্বাচন ‘বাতিল’ করে পালতোলা নৌকার আসন ভাগাভাগির সম্ভাবনা বাগানকর্তাদের

কলকাতার ময়দানে (Kolkata Football) গত এক মাস ধরে চলছিল এক টানটান উত্তেজনার রাজনীতি। খেলা নয়, এবার মাঠ দখলের লড়াই ছিল মোহনবাগান (Mohun Bagan) ক্লাবের শাসক…

Mohun Bagan Election Nomination Date Delayed as Board Prioritizes

কলকাতার ময়দানে (Kolkata Football) গত এক মাস ধরে চলছিল এক টানটান উত্তেজনার রাজনীতি। খেলা নয়, এবার মাঠ দখলের লড়াই ছিল মোহনবাগান (Mohun Bagan) ক্লাবের শাসক ও বিরোধী গোষ্ঠীর মধ্যে। দীর্ঘদিন পর মোহনবাগান নির্বাচনে (Mohun Bagan Election) এমন উত্তাপ দেখা গিয়েছে, যা রাজনৈতিক মহলের নজর কেড়েছে। একদিকে দেবাশিস দত্তের নেতৃত্বাধীন বর্তমান কমিটি, অপরদিকে সৃঞ্জয় বসুর নেতৃত্বে বিরোধী গোষ্ঠী দু’পক্ষই মাঠে নামার জন্য প্রস্তুত ছিল। কিন্তু শেষ মুহূর্তে ঘটল নাটকীয় মোড়। সম্ভবত নবান্নের হস্তক্ষেপে বন্ধ হতে পারে বহুল প্রতীক্ষিত নির্বাচন, তৈরি হল সমঝোতার ‘ম্যাজিক ফর্মুলা’।

নবান্নের কৌশল ছিল স্পষ্ট। তৃণমূল কংগ্রেস চাইছিল না মোহনবাগানের মতো ঐতিহ্যবাহী ক্লাবের নির্বাচন রাজনৈতিক সংঘাতের রূপ নিক। বিশেষ করে যখন দেখা গেল, তৃণমূল বনাম তৃণমূল দ্বন্দ্বের সুযোগে সিপিএমও ময়দানে সক্রিয় হয়ে উঠেছে। বিভিন্ন সূত্রের খবর, মুখ্যমন্ত্রীর দফতর থেকে স্পষ্ট নির্দেশ আসে, নির্বাচনের পথ পরিহার করে প্যানেল গঠন করতে হবে। সেই নির্দেশে তৈরি হয় একটি সমঝোতার পরিকাঠামো, যার রূপরেখা নির্ধারণে মধ্যস্থতা করেন রাজ্যের এক প্রভাবশালী মন্ত্রী।

   

এই সমঝোতা ফর্মুলা অনুযায়ী, ক্লাবের বর্তমান সচিব দেবাশিস দত্ত হবেন সভাপতি, আর বিরোধী গোষ্ঠীর মুখ সৃঞ্জয় বসু হবেন সচিব। ২১ সদস্যের কার্যনির্বাহী কমিটির মধ্যে দুটি পদ আগে থেকেই নির্দিষ্ট—ফুটবল সচিব স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায় (মুখ্যমন্ত্রীর ভাই) এবং টেনিস সচিব পিন্টু বিশ্বাস (ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসের আত্মীয়)। বাকি পদ ভাগাভাগি হবে ১০-১০-২ ফর্মুলায়, যেখানে উভয় পক্ষ পাবে ১০টি করে পদ এবং ২টি পদ থাকবে রিজার্ভ।

আইএসএল মরসুমের সেরা গোলের খেতাব বাগান-তারকা জেসনের দখলে

তবে এই ফর্মুলা ঘোষণার পরও শান্ত হয়নি দুই পক্ষ। পদের বিভাজন নিয়ে শুরু হয়েছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। কোন পদ লাভজনক, কোনটি প্রভাব বিস্তারের ক্ষেত্র—তা নিয়ে চলছে হিসেবনিকেশ। সহ-সচিব, কোষাধ্যক্ষ, মাঠ সচিব, অর্থ সচিব, ক্রিকেট সচিব—এই পদগুলির ভাগ নিয়ে টানাপড়েন চরমে। আর সবচেয়ে বড় প্রশ্ন—কো-অপ্ট সদস্যদের মধ্যে কে কার হয়ে থাকবেন? শোনা যাচ্ছে, শাসক গোষ্ঠী চাইছে তিনটি কো-অপ্ট পদের মধ্যে দু’টি নিজের দখলে রাখতে।

Advertisements

অন্যদিকে বিরোধী গোষ্ঠীতেও ক্ষোভ কম নয়। গত সাড়ে তিন বছরে ক্লাবের ক্ষমতায় ফিরতে যাঁরা দিনরাত লড়েছেন, তাঁদের সবাইকে জায়গা দেওয়া সম্ভব নয় আট-দশটি পদে। ফলে দলীয় অভ্যন্তরেই শুরু হয়েছে ক্ষোভ-বিক্ষোভ। কেউ কেউ মনে করছেন, তাঁদের ত্যাগ-পরিশ্রম মূল্য পেল না।

এই পরিস্থিতিতে শোনা যাচ্ছে, পার্ক স্ট্রিটের এক অভিজাত ক্লাবে দুই পক্ষের মধ্যে মধ্যস্থতাকারীদের মাধ্যমে বৈঠক হয়। ‘অদৃশ্য শক্তি’র ইঙ্গিতেই চূড়ান্ত হয় সমঝোতার রূপরেখা। রবিবার ফের বসেছে বৈঠক, স্থির হয়েছে কে কোন পদে থাকবে। সোমবার সেই অনুযায়ী মনোনয়ন জমা দেওয়া হবে।

এই গোটা ঘটনাপ্রবাহে বড় প্রশ্ন উঠে আসে, এই সমঝোতা কি মোহনবাগান ক্লাবের গণতান্ত্রিক পরম্পরাকে প্রশ্নের মুখে দাঁড় করায়? না কি এটা বাস্তব রাজনীতির সঙ্গে খেলার মেলবন্ধন? যে যাই বলুক, স্পষ্টত ইঙ্গিত নবান্ন চায় না ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে রাজ্যের কোনও বড় ক্রীড়া সংস্থা থেকে বিরোধী রাজনীতির বার্তা যাক। আর মোহনবাগানের মতো এক ঐতিহাসিক ক্লাব, যার ছায়ায় রাজনীতি বরাবরই থেকেছে, তার নির্বাচন হয়ে উঠেছিল এক ‘পাওয়ার প্লে’র মঞ্চ।