বেঙ্গালুরুর এম চিন্নাস্বামী (Chinnaswamy) স্টেডিয়ামের বাইরে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু (আরসিবি) দলের সম্মাননা অনুষ্ঠানের সময় সংঘটিত ভয়াবহ পদপিষ্ট হওয়ার ঘটনায় ১১ জনের মৃত্যু এবং প্রায় ৫৬ জন আহত হওয়ার তিন দিন পর একটি সরকারি চিঠি প্রকাশ্যে এসেছে। এই চিঠিতে দেখা গেছে, পুলিশ এই ঘটনার আগেই ভিড় নিয়ন্ত্রণ এবং নিরাপত্তা কর্মীদের ঘাটতি নিয়ে গুরুতর সতর্কতা জারি করেছিল। তবে, এই সতর্কতা উপেক্ষিত হওয়ায় এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে মনে করা হচ্ছে।
৪ জুন, ঘটনার দিনে, ডেপুটি কমিশনার অফ পুলিশ (লেজিসলেচার সিকিউরিটি) এম.এন. করিবাসভানা গৌড়া বিভাগীয় ও প্রশাসনিক সংস্কার বিভাগের সচিব জি. সত্যবতী এবং অন্যান্য শীর্ষ কর্মকর্তাদের উদ্দেশে একটি চিঠি লিখেছিলেন। এই চিঠিতে তিনি ভিড় নিয়ন্ত্রণ এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থার ঘাটতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন(Chinnaswamy)।
গৌড়া (Chinnaswamy) লিখেছিলেন, “লক্ষাধিক ক্রিকেট ভক্তের বিধান সৌধায় সমবেত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। নিরাপত্তা কর্মীদের ঘাটতির কারণে ভিড় নিয়ন্ত্রণ একটি বড় চ্যালেঞ্জ হবে।” গৌড়া উল্লেখ করেছেন যে, “আরসিবি ক্রিকেট দলের সারা দেশে বিপুল ভক্ত রয়েছে।” তিনি সতর্ক করে বলেছিলেন যে, বিধান সৌধায় এই ধরনের একটি অনুষ্ঠান আয়োজন করা হলে “লক্ষাধিক ভক্ত” সমবেত হতে পারে, যা বিধান সৌধা সিকিউরিটি ডিভিশনের কর্মী সংকটের কারণে একটি “বড় চ্যালেঞ্জ” হয়ে দাঁড়াবে।
তিনি (Chinnaswamy) পরামর্শ দিয়েছিলেন যে, ৪ জুন তারিখে সমস্ত অনলাইন এবং অফলাইন পাবলিক এন্ট্রি পাস স্থগিত রাখা উচিত। এছাড়াও, সরকারি কর্মচারীদের পরিবারের সদস্যদের সেদিন সচিবালয়ে প্রবেশের অনুমতি না দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। ভিড় কমানোর জন্য তিনি দুপুরের পর ছুটি ঘোষণার প্রস্তাবও দিয়েছিলেন।
মোদির ‘কৃতিত্ব’ কেড়ে নিলেন মমতা! কাশ্মীর রেল প্রকল্পের সূচনা ছিল মমতারই, দাবি তৃণমূলের
বিধান সৌধ (Chinnaswamy)একটি গুরুত্বপূর্ণ এবং ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা। গৌড়া উল্লেখ করেছেন যে, এই স্থানে পর্যাপ্ত নজরদারি ব্যবস্থার অভাব রয়েছে। যদিও পূর্বে সিসিটিভি কভারেজের জন্য অনুরোধ করা হয়েছিল, তা এখনও সম্পূর্ণ হয়নি। এই ঘাটতি বড় ধরনের জনসমাগমের সময় নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি করতে পারে বলে তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন।
অনুষ্ঠানের জন্য (Chinnaswamy) একটি মঞ্চ তৈরি করা হচ্ছিল, এবং গৌড়া জোর দিয়ে বলেছিলেন যে, পাবলিক ওয়ার্কস ডিপার্টমেন্ট (পিডব্লিউডি) দ্বারা এই মঞ্চের কাঠামোগত এবং বৈদ্যুতিক নিরাপত্তা পরীক্ষা করা অত্যন্ত প্রয়োজন। তিনি অনুষ্ঠানের কমপক্ষে দুই ঘণ্টা আগে অ্যান্টি-সাবোটাজ পরীক্ষা এবং একটি কার্যকরী অ্যান্টি-ড্রোন সিস্টেমের প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দিয়েছিলেন। তিনি সতর্ক করে বলেছিলেন যে, এই ধরনের বড় সমাবেশে ড্রোন ব্যবহারের সম্ভাবনা থাকে, যা নিরাপত্তার জন্য হুমকি হতে পারে।
গৌড়া (Chinnaswamy) আরও জানিয়েছেন যে, শহরের বাইরে থেকে অতিরিক্ত পুলিশ কর্মী নিয়োগের জরুরি প্রয়োজন। তিনি উল্লেখ করেছেন যে, আইন-শৃঙ্খলা এবং ট্রাফিক পুলিশের সঙ্গে সমন্বয় করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, তবে স্বল্প সময়ের নোটিশের কারণে এটি কঠিন হবে। তিনি পুনরায় জোর দিয়ে বলেছেন যে, সরকারের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত মেনে চলা হলেও, স্থান এবং উপস্থিত ব্যক্তিদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কঠোর নিরাপত্তা প্রোটোকল মানা অত্যন্ত জরুরি।
এই চিঠি প্রকাশ্যে আসার পর, অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন যে, পুলিশের এই সতর্কতা কেন গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হয়নি। বিধান সৌধর (Chinnaswamy) মতো একটি সংবেদনশীল এবং ঐতিহাসিক স্থানে এত বড় মাপের অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা করার সময় নিরাপত্তা ব্যবস্থার ঘাটতি নিয়ে কেন পর্যাপ্ত পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি, তা নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে। এই ঘটনায় ১১ জনের মৃত্যু এবং ৫৬ জনের আহত হওয়ার পর, সরকার এবং পুলিশ প্রশাসনের দায়িত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।
এই দুর্ঘটনা ক্রিকেট ভক্তদের মধ্যে শোকের ছায়া ফেলেছে। আরসিবি দলের জনপ্রিয়তা এবং বিধান সৌধার মতো গুরুত্বপূর্ণ স্থানে এই ধরনের একটি ঘটনা স্থানীয় প্রশাসনের প্রস্তুতির ঘাটতিকে সামনে এনেছে। স্থানীয়রা এবং ক্রিকেট ভক্তরা এখন এই ঘটনার তদন্ত এবং দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাচ্ছেন।
এই ঘটনা ভবিষ্যতে বড় ধরনের জনসমাগমের জন্য আরও কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং পরিকল্পনার প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দিয়েছে। সরকার এবং পুলিশ প্রশাসনের উপর এখন চাপ রয়েছে যে, এই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধ করতে তারা কী ধরনের পদক্ষেপ নেবে। এই দুর্ঘটনা শুধুমাত্র বেঙ্গালুরু নয়, সমগ্র দেশের জন্য একটি গুরুতর সতর্কবার্তা হিসেবে কাজ করছে।