ভারতের দারিদ্র্য বিমোচনের ক্ষেত্রে এক ঐতিহাসিক সাফল্যের খবর দিল বিশ্ব ব্যাঙ্ক (World Bank Report)। তাদের সাম্প্রতিক রিপোর্টে জানানো হয়েছে, ২০২২-২৩ অর্থবর্ষে ভারতের চরম দারিদ্র্যের হার কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ৫.৩ শতাংশ। যেখানে ২০১১-১২ সালে এই হার ছিল ২৭.১ শতাংশ। অর্থাৎ প্রায় ২২ শতাংশ পয়েন্ট হ্রাস — যা এক যুগান্তকারী মাইলফলক বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা।
বিশ্ব ব্যাঙ্কের হিসাব অনুযায়ী, মোদী সরকারের আমলে প্রায় ২৬৯ মিলিয়ন বা ২৬.৯ কোটি মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচ থেকে উঠে এসেছেন। বিশেষ করে গ্রামীণ ভারতের উন্নয়ন চোখে পড়ার মতো। রিপোর্টে বলা হয়েছে, গ্রামীণ অঞ্চলে দারিদ্র্যের হার ৭.২ শতাংশে নেমে এসেছে, যা এক দশক আগে ছিল ৩৩ শতাংশেরও বেশি।
মোদীনমিক্সের সাফল্য?
এই সাফল্যের পেছনে মূল কৃতিত্ব বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকারের নানা প্রকল্প এবং “মোদীনমিক্স” অর্থাৎ মোদী সরকারের অর্থনৈতিক নীতি ও পরিকল্পনাগুলিরই, বলেই দাবি করা হচ্ছে। অর্থনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, জন ধন যোজনা, প্রধানমন্ত্রী গরিব কল্যাণ অন্ন যোজনা, উজ্বলা যোজনা, আবাস যোজনা, এবং ডিজিটাল লেনদেনের প্রসার—এই সমস্ত উদ্যোগ দারিদ্র্য হ্রাসে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছে।
বিশেষ করে কোভিড-পরবর্তী সময়ে সরকার যে হারে বিনামূল্যে রেশন এবং নগদ সহায়তা দিয়েছে, তা বহু নিম্নবিত্ত পরিবারকে দারিদ্র্যের গভীর খাদ থেকে টেনে তুলতে সাহায্য করেছে বলে রিপোর্টে উল্লেখ।
অতীত বনাম বর্তমান
স্বাধীনতার পর থেকে দারিদ্র্য বিমোচন ভারতীয় অর্থনীতির এক অন্যতম চ্যালেঞ্জ। ইন্দিরা গান্ধীর “গরিবি হটাও” স্লোগান থেকে শুরু করে মনমোহন সিং সরকারের ১০০ দিনের কাজ (MGNREGA), মিড-ডে মিল, খাদ্য সুরক্ষা আইন ইত্যাদির মাধ্যমে দারিদ্র্য হ্রাসের চেষ্টা করা হয়েছিল।
তবে বিশ্ব ব্যাঙ্কের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১১-১২ থেকে ২০২২-২৩ পর্যন্ত সময়ে দারিদ্র্যের যে মাত্রা কমেছে, তা আগের কোনও দশকে দেখা যায়নি। অর্থাৎ মোদী জমানার এই দশ বছরেই সর্বাধিক উন্নতি হয়েছে।
রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া
এই রিপোর্ট প্রকাশের পরই বিজেপি নেতৃত্ব তা রাজনৈতিক সাফল্য হিসেবে তুলে ধরেছে। কেন্দ্রের অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ বলেন, “এই তথ্য প্রমাণ করে, মোদীজি যে উন্নয়নের মডেল চালু করেছেন, তা বাস্তবেই দরিদ্রদের জীবনে পরিবর্তন এনেছে।”
অন্যদিকে বিরোধীরা বলছে, দারিদ্র্যের সংজ্ঞা ও মাপকাঠি নিয়েই বিতর্ক রয়েছে। কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ বলেন, “সরকার আত্মতুষ্টিতে ভুগছে। বাস্তব পরিস্থিতি এর চেয়ে অনেক কঠিন। চাকরি, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় আরও বেশি বিনিয়োগ জরুরি।”
আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি
বিশ্ব ব্যাঙ্কের এই রিপোর্ট শুধু ভারতের জন্যই নয়, বিশ্বের অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশের জন্যও এক ইতিবাচক উদাহরণ হয়ে উঠেছে। উন্নয়নের পথে ভারত যে কতটা অগ্রসর হয়েছে, তার প্রমাণ এই প্রতিবেদন।
মোদী জমানায় দারিদ্র্য হ্রাসের এই সাফল্য নিঃসন্দেহে একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা। যদিও এটি কেবল শুরু—দারিদ্র্য মুক্ত ভারতের লক্ষ্যে পৌঁছাতে এখনো অনেকটা পথ পাড়ি দিতে হবে। তবে এই রিপোর্ট নিঃসন্দেহে এক আশাব্যঞ্জক বার্তা নিয়ে এসেছে ভারতের অর্থনৈতিক ভবিষ্যতের জন্য।