পদপিষ্টের ঘটনায় বড় পদক্ষেপ রাজ্যের ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের শীর্ষকর্তাদের

আইপিএল ২০২৫ (IPL 2025) রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর (RCB) প্রথমবারের মত শিরোপা জয়ের পর, পুরো শহর জুড়ে ছিল উৎসবের আমেজ। তবে সেই আনন্দ মুহূর্তেই রূপ নেয়…

RCB Official Among 4 Arrested After Bengaluru Stampede Kills 11

আইপিএল ২০২৫ (IPL 2025) রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর (RCB) প্রথমবারের মত শিরোপা জয়ের পর, পুরো শহর জুড়ে ছিল উৎসবের আমেজ। তবে সেই আনন্দ মুহূর্তেই রূপ নেয় গভীর শোকে, বেঙ্গালুরুর চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামের (Chinnaswamy Stadium) বাইরে ভিড়ের চাপে পদদলিত হয়ে মারা যান ১১ জন। আহত হন আরও অনেকে। এই মর্মান্তিক ঘটনার জেরে কর্নাটক স্টেট ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের (Karnataka State Cricket Association) সচিব (Secretary) এ শঙ্কর এবং কোষাধ্যক্ষ (Treasurer) ই এস জয়রাম নিজেদের পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন।

এই পদদলনের ঘটনা ঘটে আইপিএল ফাইনালের ঠিক পরদিন, যেখানে আরসিবি ছয় রানে পাঞ্জাব কিংসকে হারিয়ে তাদের বহু কাঙ্ক্ষিত প্রথম ট্রফি জেতে। দলের এই ঐতিহাসিক জয়ের পর একটি বিজয় মিছিল ও সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। আরসিবির পক্ষ থেকে সোশ্যাল মিডিয়ায় সমর্থকদের চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে আমন্ত্রণ জানানো হয়, যা পরে মুছে ফেলা হয়। তবে ততক্ষণে লক্ষাধিক মানুষ স্টেডিয়ামের আশপাশে ভিড় করে ফেলেন। অতিরিক্ত ভিড়, বিশৃঙ্খল ব্যবস্থাপনা এবং নিরাপত্তা ঘাটতির কারণে ঘটে যায় এই ভয়াবহ দুর্ঘটনা।

   

থাইল্যান্ডের হার থেকে শিক্ষা নিয়ে হংকং ম্যাচে নজর মার্কুয়েজের

সবচেয়ে হতাশাজনক বিষয় ছিল, যখন স্টেডিয়ামের বাইরে মৃতদেহ ও আহত মানুষদের কান্না-মিশ্রিত দৃশ্য চলছিল, তখন স্টেডিয়ামের ভিতরে অনুষ্ঠান প্রায় স্বাভাবিকভাবেই চলতে থাকে। এই অসংবেদনশীলতার জন্য রীতিমতো ক্ষুব্ধ হয়েছেন সমর্থক ও সাধারণ মানুষ।

ঘটনার দায় স্বীকার করে না নিলেও, শঙ্কর ও জয়রাম এক যৌথ বিবৃতিতে বলেন, “ঘটে যাওয়া অনাকাঙ্ক্ষিত ও দুঃখজনক ঘটনার প্রেক্ষিতে, যদিও আমাদের ভূমিকা অত্যন্ত সীমিত ছিল, আমরা নৈতিক দায়বদ্ধতা থেকে আমাদের পদ থেকে পদত্যাগ করেছি।” তারা জানান, রাজ্যের ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি রঘুরাম ভাট-এর কাছে তারা বৃহস্পতিবার রাতে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন।

ঘটনার তদন্তে নেমে পুলিশ এখন পর্যন্ত আরসিবির চারজন কর্মকর্তাকে গ্রেফতার করেছে, যাদের মধ্যে রয়েছেন দলের মার্কেটিং প্রধান নিখিল সোসালে। তাকে বেঙ্গালুরু বিমানবন্দর থেকে গ্রেফতার করা হয়, যখন তিনি মুম্বই যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন।

Advertisements

প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে, কেএসসিএ এবং রাজ্য সরকার উভয়ই আরসিবিকে এই উদযাপনের আয়োজন করতে সহায়তা করেছিল। তবে কেএসসিএ হাইকোর্টে জমা দেওয়া এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ভিড় নিয়ন্ত্রণ ও গেট ব্যবস্থাপনা তাদের দায়িত্ব ছিল না। তারা দাবি করেছে, বিজয় উদযাপনের মূল অনুষ্ঠানটি বিধান সৌধে আয়োজনের জন্য অনুমতি চাওয়া হয়েছিল, যেখানে অনুষ্ঠানটি নির্বিঘ্নেই সম্পন্ন হয়। চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে যে বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়েছিল, তা ছিল সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে আহ্বান জানানো ভিড়ের জন্য।

১৬ বছর পর হংকংয়ে ইতিহাস বদলাতে মরিয়া সুনীলরা, গাওলি উসকে দিলেন পুরনো স্মৃতি

ঘটনার পর কর্ণাটকের মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়া এবং আরসিবির পক্ষ থেকে নিহত প্রত্যেকের পরিবারকে ১০ লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। আরসিবি আহতদের সহায়তার জন্য ‘RCB Cares’ নামক একটি ফান্ড তৈরিরও ঘোষণা দিয়েছে।

ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে দেশের ক্রীড়ামহলে নানান প্রশ্ন উঠেছে এমন বড় আয়োজনে কেন পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা রাখা হয়নি? কে বা কারা এই চূড়ান্ত ব্যর্থতার জন্য দায়ী?

যদিও শঙ্কর ও জয়রাম তাদের দায় সীমিত বলে উল্লেখ করেছেন, তবুও নৈতিক দায় স্বীকার করে পদত্যাগ করাটা প্রশাসনিক শুদ্ধতার একটি দৃষ্টান্ত হিসেবেই দেখা হচ্ছে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে—তদন্ত কতদূর যায় এবং ভবিষ্যতে এমন ঘটনা রোধে কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়।