বিলাসবহুল জীবনযাত্রার লোভে মায়ের গয়না চুরি কাণ্ডে মেয়ে গ্রেফতার

সৌরভ রায়, শিলিগুড়ি: শিলিগুড়ির (Siliguri) আগম সিং নগরে এক চাঞ্চল্যকর ঘটনায় নিজের মায়ের সোনার গয়না চুরির অভিযোগে মেয়ে মুসকান গুরুংকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এই ঘটনায়…

Daughter Steals Mother’s Gold to Fund Lavish Lifestyle

সৌরভ রায়, শিলিগুড়ি: শিলিগুড়ির (Siliguri) আগম সিং নগরে এক চাঞ্চল্যকর ঘটনায় নিজের মায়ের সোনার গয়না চুরির অভিযোগে মেয়ে মুসকান গুরুংকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এই ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে বিধান মার্কেটের এক সোনার ব্যবসায়ী উৎকর্ষ সোনিকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মুসকানের বিলাসবহুল জীবনযাপনের লোভ এবং দামি জিনিসপত্র কেনার ইচ্ছা এই চুরির পেছনে প্রধান কারণ বলে পুলিশ জানিয়েছে। এই ঘটনা শিলিগুড়ির সমাজে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে বিলাসিতার প্রতি ক্রমবর্ধমান আকর্ষণ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।

জানা গেছে, আগম সিং নগরের বাসিন্দা মঞ্জু গুরুং গত ২৬ মে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাঁকে শিলিগুড়ির একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ৩০ মে তিনি সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে আসেন। ৩ জুন তিনি তাঁর আলমারি খুলে দেখেন, দুটি সোনার মালা গায়েব। মঞ্জু প্রথমে তাঁর মেয়ে মুসকান গুরুংকে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করেন, কিন্তু মুসকান কিছুই জানে না বলে দাবি করে। এরপর ৪ জুন মঞ্জু প্রধাননগর থানায় চুরির লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।

   

অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু করে প্রধাননগর তদন্ত কেন্দ্রের পুলিশ। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ নিশ্চিত হয় যে বাড়িতে বাইরের কোনও ব্যক্তির প্রবেশের সম্ভাবনা নেই। এরপর সন্দেহের তীর পরিবারের সদস্যদের দিকে যায়। তদন্তের সময় পুলিশ জানতে পারে, মঞ্জুর মেয়ে মুসকান ঘটনার পর থেকে নিখোঁজ। গোপন সূত্রে খবর পেয়ে পুলিশ শালবাড়ি এলাকায় অভিযান চালিয়ে মুসকানকে গ্রেপ্তার করে। প্রথমে মুসকান চুরির কথা অস্বীকার করলেও, পুলিশের কড়া জেরার মুখে সে স্বীকার করে যে, মায়ের অনুপস্থিতির সুযোগে সে আলমারি থেকে দুটি সোনার মালা চুরি করে। এই গয়না সে বিধান মার্কেটের সোনার ব্যবসায়ী উৎকর্ষ সোনির কাছে বিক্রি করে।

পুলিশ এরপর উৎকর্ষ সোনিকে গ্রেপ্তার করে এবং তার শালুগাড়ার বাড়ি থেকে প্রায় ২৫ গ্রাম গলানো সোনা উদ্ধার করে। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, মুসকান বিলাসবহুল জীবনযাপনের প্রতি আকৃষ্ট ছিল। দামি জিনিসপত্র কেনা, ক্লাবে পার্টি করা এবং উচ্চবিত্তের মতো জীবনযাপন করা ছিল তার স্বপ্ন। এই বিলাসিতা পূরণের জন্যই সে নিজের মায়ের গয়না চুরি করে বিক্রি করেছে।

পুলিশ এই ঘটনায় ভারতীয় দণ্ডবিধির সুনির্দিষ্ট ধারায় মুসকান গুরুং এবং উৎকর্ষ সোনির বিরুদ্ধে মামলা রুজু করেছে। শুক্রবার ধৃতদের শিলিগুড়ি মহকুমা আদালতে পেশ করা হয়। প্রধাননগর তদন্ত কেন্দ্রের পুলিশ ঘটনার আরও বিস্তারিত তদন্ত করছে। তদন্তকারী দল জানিয়েছে, তারা এই চুরির পেছনে অন্য কোনও ব্যক্তি বা চক্র জড়িত আছে কিনা তাও খতিয়ে দেখছে।

Advertisements

এই ঘটনা শিলিগুড়ির সমাজে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে বিলাসবহুল জীবনযাপনের প্রতি ক্রমবর্ধমান আকর্ষণের একটি উদাহরণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। স্থানীয় সমাজকর্মী রীতা শর্মা বলেন, “আজকাল তরুণরা সোশ্যাল মিডিয়ার প্রভাবে বিলাসিতার পেছনে ছুটছে। এই ধরনের ঘটনা আমাদের সমাজে মূল্যবোধ শিক্ষার প্রয়োজনীয়তার কথা মনে করিয়ে দেয়।” তিনি আরও বলেন, পরিবারের মধ্যে সুস্থ যোগাযোগ এবং তরুণদের সঠিক পথে পরিচালনার জন্য অভিভাবকদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

এই ঘটনা এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে। স্থানীয় বাসিন্দা অমিত দাস বলেন, “নিজের মায়ের গয়না চুরি করা অকল্পনীয়। এই ঘটনা আমাদের সমাজে তরুণদের মানসিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে।” পুলিশের তৎপরতার প্রশংসা করলেও, স্থানীয়রা মনে করছেন, এই ধরনের ঘটনা প্রতিরোধে সামাজিক সচেতনতা এবং শিক্ষার প্রয়োজন।

এই ঘটনা শিলিগুড়ির আগম সিং নগরে শোক এবং বিস্ময়ের সৃষ্টি করেছে। পুলিশের তদন্ত এবং আদালতের রায়ের উপর নির্ভর করে এই ঘটনার পূর্ণাঙ্গ চিত্র প্রকাশ পাবে। তবে, এই ঘটনা সমাজে তরুণদের মধ্যে বিলাসিতার প্রতি অন্ধ আকর্ষণ এবং নৈতিক মূল্যবোধের অবক্ষয় নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন তুলেছে।