২৫ বছর পর রোনাল্ডোর গোলে জার্মানিকে হারিয়ে ফাইনালে পর্তুগাল

সময় বদলায়, কিন্তু কিছু নাম কখনও পুরনো হয় না। ৪০ বছর বয়সেও ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো (Cristiano Ronaldo) যেন পর্তুগালের (Portugal) ফুটবল (Football) ইতিহাসের শিরোনামে। সময়ের সঙ্গে…

Portugal legend Cristiano Ronaldo finally beats Germany in UEFA Nations League Semifinal

সময় বদলায়, কিন্তু কিছু নাম কখনও পুরনো হয় না। ৪০ বছর বয়সেও ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো (Cristiano Ronaldo) যেন পর্তুগালের (Portugal) ফুটবল (Football) ইতিহাসের শিরোনামে। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে পাল্টেছে খেলোয়াড়েরা, বদলেছে কৌশল, কিন্তু রোনাল্ডো রয়ে গিয়েছেন অটল। বারবার যেন নিজের কিংবদন্তির সংজ্ঞা নতুন করে লিখে চলেছেন। নেশনস লিগের (UEFA Nations League) সেমিফাইনালে (Semifinal) জার্মানির (Germany) বিপক্ষে তাঁর দুর্দান্ত পারফরম্যান্স যেন আরও একবার প্রমাণ করল।

অ্যালিয়াঞ্জ অ্যারেনায় আয়োজিত এই গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে শুরু থেকেই উত্তেজনার পারদ ছিল তুঙ্গে। স্বাগতিক জার্মানি প্রথমার্ধে আক্রমণে বেশ দাপট দেখালেও গোলের দেখা পায়নি। প্রথম ২০ মিনিটেই জার্মান মিডফিল্ডার লিয়ন গোরেৎজকা এবং ফরোয়ার্ড হাভার্টজের দুটি জোরালো শট দারুণভাবে ঠেকিয়ে দেন পর্তুগালের গোলরক্ষক দিয়োগো কস্তা। ম্যাচের প্রথমার্ধ শেষ হয় গোলশূন্য সমতায়।

   

দ্বিতীয়ার্ধে মাঠে নেমেই খেলার রং বদলাতে শুরু করে। ৪৮ মিনিটে জোশুয়া কিমিখের নিখুঁত পাস থেকে মাথা ছুঁইয়ে পর্তুগালের জালে বল জড়ান ফ্লোরিয়ান উইর্টজ। ভিএআরের সন্দেহ থাকলেও রেফারি গোলটি বহাল রাখেন। জার্মানির এই গোলে যেন হঠাৎই ঘুম ভেঙে যায় পর্তুগালের। পিছিয়ে পড়ার পর পর্তুগিজ দল যেন ফিরে পায় আসল রূপ। মাঠে নামেন বদলি খেলোয়াড় ফ্রান্সিসকো কনসেইসাও, যিনি মাত্র ৬৩ মিনিটেই দলের হয়ে সমতায় ফেরান ম্যাচ।

হামজার স্বপ্নময় অভিষেক, আত্মবিশ্বাস বাড়াল বাংলাদেশের

এই গোলের সঙ্গে জুড়ে আছে ইতিহাসের একটি চমৎকার অধ্যায়। ২০০০ সালে ইউরোতে জার্মানির বিপক্ষে যে ম্যাচে পর্তুগাল জয় পেয়েছিল, সেই ম্যাচে গোল করেছিলেন ফ্রান্সিসকোর বাবা, সের্গিও কনসেইসাও। ২৫ বছর পর, বাবার দেখানো পথে ছেলের গোলেই আবারও সমতায় ফেরে পর্তুগাল।

এরপর ৬৮ মিনিটে এল সেই মুহূর্ত, যেটি হয়তো ইতিহাসে বারবার ফিরে দেখা হবে। বাঁ দিক থেকে নুনো মেন্ডেসের পাসে নিখুঁত ফিনিশিংয়ে জালের ঠিকানা খুঁজে নেন রোনাল্ডো। সেটিই হয় ম্যাচের জয়সূচক গোল। রোনাল্ডোর এই গোলটি শুধু ম্যাচের ফল নির্ধারণ করেনি, বরং ভেঙে দিয়েছে অতীতের একাধিক অভিশাপ।

Advertisements

এই গোলের মধ্য দিয়ে রোনাল্ডো গড়ে ফেলেছেন তিনটি বড় রেকর্ড:
১. আন্তর্জাতিক ফুটবলে এটি তাঁর ১৩৭তম গোল, যা এখনও পর্যন্ত রেকর্ড।
২. সব মিলিয়ে এটি তাঁর কেরিয়ারের ৯৩৭তম গোল।
৩. সবচেয়ে বেশি বয়সে (৪০ বছর) জার্মানির বিপক্ষে গোল করা খেলোয়াড় হিসেবে নাম লিখিয়েছেন ইতিহাসে।

এর আগে রোনাল্ডো জার্মানির বিপক্ষে পাঁচবার খেলেও জয় পাননি। বরং সবগুলো ম্যাচেই হেরেছে পর্তুগাল। তবে এবার ষষ্ঠ ম্যাচে রোনাল্ডো সেই ধারা বদলে দিলেন নিজেই। আর পর্তুগাল ২০০০ সালের পর প্রথমবার জার্মানিকে হারাতে সক্ষম হলো।

এই জয় শুধু রেকর্ডের কথা বলে না, বলে এক সংগ্রামী মনোভাবের, এক অবিশ্বাস্য প্রত্যাবর্তনের গল্প। একটি দল, যারা প্রথমার্ধে চাপে ছিল, যারা পিছিয়ে পড়েও হাল ছাড়েনি, তারাই শেষ পর্যন্ত জয় ছিনিয়ে নিয়েছে। রোনাল্ডোর গোলেই নিশ্চিত হলো পর্তুগালের নেশনস লিগের ফাইনালে জায়গা। এবার ফাইনালে তাদের প্রতিপক্ষ হতে পারে ফ্রান্স কিংবা স্পেন – এই দুই দলের মধ্যে যেই জিতবে, তারাই মুখোমুখি হবে পর্তুগালের।

৯ জুন, আবারও অ্যালিয়াঞ্জ অ্যারেনাতেই বসবে সেই শিরোপা নির্ধারক ম্যাচ। সেদিন হয়তো রোনাল্ডোর হাতে উঠতে পারে আরও একটি ট্রফি। তবে যাই হোক না কেন, জার্মানির বিপক্ষে এই জয়, এই প্রত্যাবর্তন, এবং রোনালদোর রেকর্ডময় গোল, সব মিলিয়ে এই ম্যাচ চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেই পর্তুগাল এবং ফুটবলপ্রেমীদের কাছে।