বেঙ্গালুরুতে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু (bengaluru)-এর আইপিএল ২০২৫-এর ঐতিহাসিক জয় উদযাপনের জন্য কর্ণাটক রাজ্য সরকার একটি অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা করেছিল। চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠান হওয়ার কথা ছিল এবং ভিড় নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতার কারণে একটি মর্মান্তিক পদপিষ্ট হওয়ার ঘটনা ঘটেছে।
এই হৃদয়বিদারক ঘটনায় ৭ জন মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন এবং ২৫ জন আহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে বেশ কয়েকজনের অবস্থা গুরুতর। এই ঘটনা সঠিক প্রশাসনিক দূরদর্শিতা এবং ভিড় নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতার ফল, যা প্রতিরোধ করা সম্ভব ছিল। এই দুর্ঘটনার জন্য দায়িত্ব নির্ধারণ করা অত্যন্ত জরুরি, কারণ এটি কেবল দুর্ঘটনা নয়, বরং অবহেলার ফলাফল।
ঘটনার বিবরণ (bengaluru)
৩ জুন, ২০২৫-এ আহমেদাবাদের নরেন্দ্র মোদী স্টেডিয়ামে আইপিএল ২০২৫-এর ফাইনালে পাঞ্জাব কিংসকে ৬ রানে পরাজিত করে আরসিবি তাদের প্রথম আইপিএল শিরোপা জয় করে। ১৮ বছরের দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে এই জয় বেঙ্গালুরু (bengaluru)শহরে উৎসবের আমেজ সৃষ্টি করে।
এই ঐতিহাসিক বিজয় উদযাপনের জন্য কর্ণাটক রাজ্য সরকার এবং কর্ণাটক স্টেট ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন (কেএসসিএ) ৪ জুন বেঙ্গালুরুর এম. চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে একটি সমাবেশ এবং বিদ্যানা সৌধায় একটি আনুষ্ঠানিক সম্মাননা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে(bengaluru)।
দুপুর ১:৩০-এ আরসিবি দল হিন্দুস্তান অ্যারোনটিক্স লিমিটেড (এইচএএল) বিমানবন্দরে পৌঁছায়, যেখানে উপ-মুখ্যমন্ত্রী ডি.কে. শিবকুমার তাদের স্বাগত জানান। দলটি বিদ্যানা সৌধায় মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে এবং সেখানে একটি ঐতিহ্যবাহী কন্নড় সম্মাননা অনুষ্ঠানে অংশ নেয়।
পদপিষ্ট হওয়ার ঘটনা
বিকেল ৩ টা থেকে হাজার হাজার আরসিবি ভক্ত চিন্নাস্বামী (bengaluru)স্টেডিয়ামের চারপাশে জড়ো হতে শুরু করে। প্রাথমিকভাবে, দলটির বিদ্যানা সৌধা থেকে স্টেডিয়াম পর্যন্ত একটি ওপেন-টপ বাস প্যারেডের পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু, ভিড় নিয়ন্ত্রণ এবং ট্র্যাফিক সমস্যার কারণে বেঙ্গালুরু ট্র্যাফিক পুলিশ এই প্যারেড বাতিল করে এবং ঘোষণা করে যে শুধুমাত্র টিকিটধারীদের জন্য স্টেডিয়ামে একটি বন্ধ অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে।
তবে, বিপুল সংখ্যক ভক্ত, যাদের মধ্যে অনেকেরই টিকিট ছিল না, স্টেডিয়ামের গেটে ভিড় করেন। বিকেল ৫টার দিকে বৃষ্টির কারণে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে ওঠে। ভক্তরা ব্যারিকেড ভেঙে এবং পুলিশের নিরাপত্তা ঘেরাটোপ অতিক্রম করে স্টেডিয়ামে প্রবেশের চেষ্টা করলে একটি বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরী হয় এবং তার ফলেই এই পদপিষ্ট হওয়ার ঘটনা ঘটে।
এই বিশৃঙ্খলায় ৭ জন ভক্ত প্রাণ হারান, (bengaluru)যার মধ্যে একজন শিশুও ছিল। ২৫ জনেরও বেশি আহত হন, যাদের মধ্যে চারজনের অবস্থা গুরুতর। আহতদের দ্রুত শিবাজিনগরের বোরিং হাসপাতাল এবং বৈদেহী হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পুলিশ ভিড় নিয়ন্ত্রণের জন্য লাঠিচার্জ করতে বাধ্য হয়, যা পরিস্থিতিকে আরও উত্তপ্ত করে তোলে। এক্স-এ পোস্ট করা তথ্য অনুযায়ী, কিছু প্রত্যক্ষদর্শী জানিয়েছেন যে ভক্তরা স্টেডিয়ামের দেয়াল এবং বেড়া ডিঙিয়ে প্রবেশের চেষ্টা করছিলেন, যা এই বিশৃঙ্খলার অন্যতম কারণ।
প্রশাসনিক ব্যর্থতা
এই ঘটনা রাজ্য সরকার (bengaluru)এবং কেএসসিএ-র দুর্বল পরিকল্পনা এবং ভিড় নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতার প্রতিফলন। বেঙ্গালুরুর সাংসদ পি.সি. মোহন সরকারের সমালোচনা করে এক্স-এ পোস্ট করেন, “ট্র্যাফিক সমস্যা বাস্তব হলেও, কর্ণাটক সরকারের কাছে উৎসবের জন্য আরও ভালো পরিকল্পনা করার যথেষ্ট সময় ছিল। উৎসবকে বোঝা মনে হওয়া উচিত নয়, এটি বেঙ্গালুরুতে উৎসবের মতো হওয়া উচিত।” তিনি আরও বলেন, ভক্তদের উপস্থিতির পরিমাণ কম মূল্যায়ন করা এবং পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থার অভাব এই ট্র্যাজেডির জন্য দায়ী।
বেঙ্গালুরু (bengaluru)পুলিশের ট্র্যাফিক উপদেষ্টায় বলা হয়েছিল যে, বিকেল ৩টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত বিদ্যানা সৌধা এবং চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামের আশপাশের রাস্তা এড়িয়ে চলতে। নাম্মা মেট্রো কর্তৃপক্ষ কিউবন পার্ক এবং ড. বি.আর. আম্বেদকর মেট্রো স্টেশন বন্ধ করে দেয়, যা ভিড় নিয়ন্ত্রণে আরও জটিলতা সৃষ্টি করে। স্থানীয় কর্তৃপক্ষ এবং সরকারের প্রাথমিক প্রস্তুতির অভাব এই ঘটনাকে আরও মর্মান্তিক করে তুলেছে।
ভক্তদের উৎসাহ এবং ট্র্যাজেডি
আরসিবি’র জয় বেঙ্গালুরুবাসীদের (bengaluru)জন্য ছিল একটি আবেগপ্রবণ মুহূর্ত। দলের প্রাক্তন অধিনায়ক বিরাট কোহলি, যিনি ২০০৮ সাল থেকে দলের সঙ্গে রয়েছেন, এই জয়কে তাঁর স্ত্রী অভিনেত্রী অনুষ্কা শর্মার সমর্থনের জন্য উৎসর্গ করেন। তিনি বলেন, “অনুষ্কা আমার পাশে ছিলেন এই ১১ বছরের উত্থান-পতনের মধ্যে।” ভক্তরা “ঈ সালা কাপ নামদে” (এই বছর কাপ আমাদের) স্লোগানে মুখরিত হয়ে রাস্তায় নেমে আসেন। কিন্তু এই আনন্দ উৎসবে পরিণত হয় ট্র্যাজেডিতে, যখন অপরিকল্পিত ভিড় নিয়ন্ত্রণের কারণে দুর্ঘটনা ঘটে।
টেনশনে পাকিস্তান! ব্রহ্মোসের চেয়েও দ্রুত এবং বিপজ্জনক ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করবে ভারত
দায়িত্ব নির্ধারণের দাবি
এই ঘটনায় রাজ্য সরকার এবং কেএসসিএ-র দায়িত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। স্থানীয় বাসিন্দা এবং ভক্তরা সামাজিক মাধ্যমে তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। এক্স-এ একটি পোস্টে বলা হয়, “এই ট্র্যাজেডি প্রতিরোধ করা যেত। এটি কেবল দুর্ঘটনা নয়, প্রশাসনের অবহেলার ফল।” কর্ণাটকের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী জি. পারমেশ্বরা ঘটনার তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন, তবে জনগণ দায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা দাবি করছে।
এই ঘটনা বেঙ্গালুরুর (bengaluru)ক্রিকেটপ্রেমী শহরের জন্য একটি কালো দিন হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে। আরসিবি’র প্রথম আইপিএল জয়ের আনন্দ ছড়িয়ে পড়ার কথা ছিল, কিন্তু দুর্বল প্রশাসনিক পরিকল্পনা এবং ভিড় নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতা এই উৎসবকে দুঃস্বপ্নে পরিণত করেছে। এই ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে ভবিষ্যতে এ ধরনের দুর্ঘটনা রোধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। প্রাণ হারানোদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা এবং আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করা হচ্ছে।