‘ছাড় পাবেন না রাহুল’, সেনাবাহিনী অবমাননার জেরে তীব্র কটাক্ষ হাইকোর্টের

এলাহাবাদ হাইকোর্ট বিরোধী দলের নেতা এবং কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীর (rahul) বিরুদ্ধে ভারতীয় সেনাবাহিনী সম্পর্কিত অবমাননাকর মন্তব্যের জন্য তীব্র প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করেছে। বিচারপতি সুভাষ বিদ্যার্থীর…

rahul slammed by hc

এলাহাবাদ হাইকোর্ট বিরোধী দলের নেতা এবং কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীর (rahul) বিরুদ্ধে ভারতীয় সেনাবাহিনী সম্পর্কিত অবমাননাকর মন্তব্যের জন্য তীব্র প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করেছে। বিচারপতি সুভাষ বিদ্যার্থীর একক বেঞ্চ লখনউয়ের একটি নিম্ন আদালতের জারি করা সমনের আদেশের বিরুদ্ধে রাহুল গান্ধীর দায়ের করা আবেদনের শুনানি করছিলেন।

এই সমনটি ২০২২ সালে ভারত জোড়ো যাত্রার সময় ভারতীয় সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে তাঁর কথিত অবমাননাকর মন্তব্যের সঙ্গে সম্পর্কিত। বিচারপতি বিদ্যার্থী রাহুল গান্ধীর (rahul) আবেদন খারিজ করে বলেন, “সংবিধানের ১৯(১)(এ) অনুচ্ছেদে বাক ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা হলেও, এই স্বাধীনতা যুক্তিসঙ্গত সীমাবদ্ধতার অধীন এবং এটি কোনো ব্যক্তি বা ভারতীয় সেনাবাহিনীর প্রতি অবমাননাকর বিবৃতি দেওয়ার স্বাধীনতা অন্তর্ভুক্ত করে না।”

   

মামলার পটভূমি

২০২২ সালের ১৬ ডিসেম্বর ভারত জোড়ো যাত্রার সময় রাহুল গান্ধী (rahul) বলেছিলেন, “চীনা সৈন্যরা অরুণাচল প্রদেশে ভারতীয় সেনাবাহিনীর কর্মীদের মারধর করছে।” তিনি আরও বলেন, “লোকেরা ভারত জোড়ো যাত্রা, অশোক গেহলট, সচিন পাইলট এবং এই ধরনের বিষয় নিয়ে প্রশ্ন করবে, কিন্তু তারা চীনের দ্বারা ২০০০ বর্গ কিলোমিটার ভারতীয় ভূখণ্ড দখল, ২০ জন ভারতীয় সৈন্য হত্যা এবং অরুণাচল প্রদেশে আমাদের সৈন্যদের উপর হামলার বিষয়ে একটি প্রশ্নও করবে না।”

এই মন্তব্যগুলো ভারতীয় সেনাবাহিনীর প্রতি অবমাননাকর বলে অভিযোগ করেন বর্ডার রোডস অর্গানাইজেশনের (বিআরও) প্রাক্তন ডিরেক্টর উদয় শঙ্কর শ্রীবাস্তব, যিনি সেনাবাহিনীর কর্নেল পদমর্যাদার সমতুল্য। তাঁর পক্ষে আইনজীবী বিবেক তিওয়ারি লখনউয়ের একটি নিম্ন আদালতে মানহানির মামলা দায়ের করেন। অতিরিক্ত প্রধান বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট অলোক বর্মা এই মামলায় রাহুল গান্ধীকে ২০২৫ সালের ২৪ মার্চ শুনানির জন্য হাজির হওয়ার নির্দেশ দেন।

এলাহাবাদ হাইকোর্টের রায়

বৃহস্পতিবার (৩০ মে, ২০২৫) এলাহাবাদ হাইকোর্টের লখনউ বেঞ্চে শুনানির সময় বিচারপতি সুভাষ বিদ্যার্থী রাহুল গান্ধীর (rahul) আবেদন খারিজ করে দেন। তিনি জানান, বিস্তারিত রায় ২ জুন প্রকাশিত হবে। বুধবার প্রকাশিত বিস্তারিত রায়ে তিনি বলেন, “বাক ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা কোনো ব্যক্তি বা ভারতীয় সেনাবাহিনীর প্রতি অবমাননাকর বিবৃতি দেওয়ার অধিকার দেয় না।”

রাজ্য সরকারের পক্ষে অতিরিক্ত অ্যাডভোকেট জেনারেল ভিনোদ কুমার শাহী, সরকারি অ্যাডভোকেট ভি কে সিং এবং অতিরিক্ত সরকারি অ্যাডভোকেট অনুরাগ বর্মা যুক্তি দেন যে, রাহুল গান্ধীর আবেদন গ্রহণযোগ্য নয়, কারণ তিনি সেশন কোর্টে সমনের আদেশের বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ করার বিকল্প পথ বেছে নিতে পারতেন। তারা আরও বলেন, অভিযোগ এবং সাক্ষীদের বিবৃতির প্রাথমিক পর্যালোচনায় রাহুল গান্ধীর বিরুদ্ধে প্রাথমিক অপরাধ প্রমাণিত হয়েছে।

রাহুল গান্ধীর পক্ষের যুক্তি (rahul)

রাহুল গান্ধীর (rahul)আইনজীবী প্রাংশু আগরওয়াল যুক্তি দেন যে, অভিযোগটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং মিথ্যা উদ্দেশ্যে দায়ের করা হয়েছে। তিনি বলেন, অভিযোগটি পড়লেই বোঝা যায় যে এটি বানোয়াট। এছাড়া, রাহুল গান্ধী লখনউয়ের বাসিন্দা নন, তাই অভিযোগের সত্যতা যাচাই না করে তাঁকে সমন জারি করা উচিত হয়নি। তাঁর মতে, প্রাথমিকভাবে অভিযোগগুলো বিচারের উপযুক্ত বলে প্রমাণিত হলেই সমন জারি করা উচিত ছিল।

মন্তব্যের প্রেক্ষাপট

রাহুল গান্ধীর (rahul)মন্তব্যটি ২০২২ সালের ৯ ডিসেম্বর অরুণাচল প্রদেশের তাওয়াংয়ে ভারতীয় ও চীনা সৈন্যদের মধ্যে সংঘর্ষের প্রেক্ষাপটে করা হয়েছিল। এই সংঘর্ষে উভয় পক্ষের সৈন্যরা হাতাহাতি অস্ত্র ব্যবহার করে এবং আহত হয়। রাহুল গান্ধীর মন্তব্য ছিল কেন্দ্র সরকারের সমালোচনার অংশ, যেখানে তিনি চীনের আগ্রাসন এবং ভারতীয় ভূখণ্ড দখলের বিষয়ে সরকারের নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ তুলেছিলেন।

Advertisements

তবে, তাঁর বক্তব্য ভারতীয় সেনাবাহিনীর প্রতি অবমাননাকর বলে অভিযোগ উঠে, যা ব্যাপক বিতর্কের জন্ম দেয়। ভারতীয় সেনাবাহিনী ১২ ডিসেম্বর, ২০২২-এ একটি সরকারি বিবৃতি জারি করে বলে, “চীনা সেনাবাহিনী অবৈধভাবে অরুণাচল প্রদেশে প্রবেশ করেছিল, কিন্তু ভারতীয় সেনাবাহিনী যথাযথভাবে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে তাদের পিছু হটতে বাধ্য করেছে।”

রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া

রাহুল গান্ধীর (rahul)এই মন্তব্য ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) থেকে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়ে। বিজেপি তাঁর বক্তব্যকে ‘পাকিস্তানের মতো’ বলে অভিহিত করে এবং জাতীয় নিরাপত্তার সংবেদনশীল সময়ে সেনাবাহিনীর মনোবল ভাঙার প্রচেষ্টা হিসেবে সমালোচনা করে। এক্স-এ বিজেপি’র একটি পোস্টে বলা হয়, “রাহুল গান্ধীকে আমাদের সাহসী সশস্ত্র বাহিনীর বীরত্ব ও নিষ্ঠাকে অবমূল্যায়ন থেকে বিরত থাকতে হবে।

তিনি ইচ্ছাকৃতভাবে এমন প্রশ্ন তুলছেন যা জাতীয় নিরাপত্তাকে ক্ষুণ্ন করে।” এছাড়া, এক্স-এ আরেকটি পোস্টে বলা হয়, “রাহুল গান্ধীর বক্তব্য পাকিস্তানের পক্ষে কথা বলার মতো। জনগণ ক্ষুব্ধ এবং দেশ তাঁকে ক্ষমা করবে না।”

আইনি পরিণতি

এলাহাবাদ হাইকোর্টের এই রায়ের ফলে রাহুল গান্ধীকে (rahul)এখন লখনউয়ের নিম্ন আদালতে মানহানির মামলায় বিচারের মুখোমুখি হতে হবে। অতিরিক্ত অ্যাডভোকেট জেনারেল ভিনোদ কুমার শাহী জানান, এই মামলায় রাহুল গান্ধীকে অভিযুক্ত হিসেবে হাজির হতে হবে। এই রায়ে আদালত স্পষ্ট করেছে যে, সেনাবাহিনীর মতো একটি জাতীয় প্রতিষ্ঠানের প্রতি অবমাননাকর মন্তব্য স্বাধীন মতপ্রকাশের অধিকারের আওতায় পড়ে না।

ভাইরাল অডিওর রেশ? বীরভূমে দলবদলের হাওয়া, বিজেপির পতাকা হাতে ঘাসফুল ছিঁড়ল শতাধিক পরিবার

অন্যান্য বিতর্ক

রাহুল গান্ধী (rahul)এর আগেও তাঁর মন্তব্যের জন্য আইনি ও রাজনৈতিক বিতর্কে জড়িয়েছেন। ২০২২ সালের নভেম্বরে ভারত জোড়ো যাত্রার সময় মহারাষ্ট্রের আকোলায় বীর সাভারকরকে ‘ব্রিটিশদের চাকর’ বলে মন্তব্য করায় তাঁর বিরুদ্ধে মানহানির মামলা দায়ের হয়। সুপ্রিম কোর্ট এই মামলায় তাঁকে সমন থেকে স্থগিতাদেশ প্রদান করলেও তাঁর মন্তব্যের জন্য তীব্র সমালোচনা করে।

এলাহাবাদ হাইকোর্টের এই রায় রাহুল গান্ধীর(rahul) বিরুদ্ধে আইনি প্রক্রিয়াকে আরও এগিয়ে নিয়ে গেছে। তাঁর মন্তব্য ভারতীয় সেনাবাহিনীর মর্যাদা ও জনগণের আস্থার প্রতি প্রভাব ফেলেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এই মামলা রাজনৈতিক ও সামাজিক মহলে বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে থাকবে, এবং আগামী দিনে এর বিচারিক ও রাজনৈতিক পরিণতি গুরুত্বপূর্ণ হবে।