জেনারেল চৌহানের বক্তব্য ঘিরে উত্তেজনা, রাজনাথ কে একহাত রমেশের

কংগ্রেস সাংসদ জয়রাম রমেশ (ramesh) রবিবার (১ জুন, ২০২৫) প্রতিরক্ষা মন্ত্রীর প্রতি হতাশা প্রকাশ করেছেন। তিনি অভিযোগ করেছেন যে, প্রতিরক্ষা মন্ত্রী দুটি সর্বদলীয় বৈঠকে বিরোধী…

ramesh slams rajnath

কংগ্রেস সাংসদ জয়রাম রমেশ (ramesh) রবিবার (১ জুন, ২০২৫) প্রতিরক্ষা মন্ত্রীর প্রতি হতাশা প্রকাশ করেছেন। তিনি অভিযোগ করেছেন যে, প্রতিরক্ষা মন্ত্রী দুটি সর্বদলীয় বৈঠকে বিরোধী নেতাদের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য শেয়ার করেননি। এই সমালোচনা এসেছে চিফ অফ ডিফেন্স স্টাফ (সিডিএস) জেনারেল অনিল চৌহানের সিঙ্গাপুরে দেওয়া সাম্প্রতিক মন্তব্যের পর।

রমেশ প্রশ্ন (ramesh) তুলেছেন, কেন সরকার জেনারেল চৌহানের এই উদ্ঘাটনের জন্য অপেক্ষা করল, বিরোধী নেতাদের সঙ্গে তথ্য শেয়ার করা বা সংসদের বিশেষ অধিবেশন আহ্বান না করে। তিনি বলেন, “প্রতিরক্ষা মন্ত্রীর উচিত ছিল দুটি সর্বদলীয় বৈঠকে এই তথ্য শেয়ার করা। জেনারেল চৌহান যা বলেছেন, তা বিরোধী নেতাদের জানানো উচিত ছিল এবং সংসদের একটি বিশেষ অধিবেশন আহ্বান করা উচিত ছিল। আমাদের সিঙ্গাপুর থেকে এই উদ্ঘাটনের জন্য অপেক্ষা করতে হল কেন?”

   

কার্গিল রিভিউ কমিটির উদাহরণ

জয়রাম রমেশ (ramesh) ১৯৯৯ সালের কার্গিল রিভিউ কমিটির প্রতিবেদনের গুরুত্ব তুলে ধরেন। তিনি উল্লেখ করেন, কার্গিল যুদ্ধ শেষ হওয়ার মাত্র তিন দিন পর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ী কে. সুব্রহ্মণ্যমের নেতৃত্বে এই কমিটি গঠন করেছিলেন। এই কমিটিতে জেনারেল হাজারি, বি.জি. বর্গিস এবং সতীশ চন্দ্র ছিলেন।

১৯৯৯ সালের ১৫ ডিসেম্বর তারা তাদের প্রতিবেদন বাজপেয়ী সরকারের কাছে জমা দেয়, এবং ২০০০ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি ‘ফ্রম সারপ্রাইজ টু রেকনিং’ নামে ১৫০ পৃষ্ঠার এই প্রতিবেদনটি সংসদে পেশ করা হয়। রমেশ বলেন, “এটি একটি উদাহরণ। বর্তমান সরকার কি জেনারেল চৌহানের উদ্ঘাটনের আলোকে এমন কোনো পদক্ষেপ নেবে?”

ইন্দাস জল চুক্তি স্থগিত ই থাকবে, রাষ্ট্রসংঘে কড়া প্রতিক্রিয়া ভারতের

অপারেশন সিঁদুর এবং সিডিএস-এর মন্তব্য

সিঙ্গাপুরে শাংরি-লা ডায়ালগের সময় রয়টার্সকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে জেনারেল চৌহান স্বীকার করেন, অপারেশন সিঁদুরের প্রাথমিক পর্যায়ে ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনী কিছু ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছিল। তিনি বলেন, “৭ মে এবং প্রাথমিক পর্যায়ে কিছু ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল, কিন্তু সংখ্যা গুরুত্বপূর্ণ নয়।

গুরুত্বপূর্ণ ছিল কেন এই ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল এবং আমরা এরপর কী করব। আমরা কৌশলগত ভুল সংশোধন করে ৭, ৮ এবং ১০ মে পাকিস্তানের ঘাঁটিতে বড় ধরনের আঘাত হানি।” তিনি আরও বলেন, ভারতীয় বিমান বাহিনী ১০ মে সব ধরনের বিমান এবং অস্ত্র ব্যবহার করে পাকিস্তানের বায়ু ঘাঁটিগুলিতে নির্ভুল আঘাত হানে।

জেনারেল চৌহান পাকিস্তানের দাবি, যে তারা ছয়টি ভারতীয় যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করেছে, তা ‘সম্পূর্ণ ভুল’ বলে খারিজ করেন। তিনি জোর দিয়ে বলেন, ভারত পাকিস্তানের বায়ু প্রতিরক্ষা ভেদ করে ৩০০ কিলোমিটার গভীরে নির্ভুল আঘাত হানতে সক্ষম হয়েছিল। তিনি বলেন, চীন-সরবরাহিত অস্ত্রগুলি পাকিস্তানের জন্য কার্যকর ছিল না।

Advertisements

রাজনৈতিক বিতর্ক এবং কংগ্রেসের দাবি (ramesh)

জয়রাম রমেশ (ramesh) বলেন, সামরিক বিষয়গুলি বিশেষজ্ঞদের দ্বারা আলোচিত হলেও, চীন ও পাকিস্তানের মধ্যে যে মৈত্রী অপারেশন সিঁদুরের সময় স্পষ্ট হয়ে উঠেছে, তা রাজনৈতিক আলোচনার বিষয়। তিনি বলেন, “এই বিষয়গুলি প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে সর্বদলীয় বৈঠকে আলোচনা করা উচিত।

আমরা গণতন্ত্রের জননী বলে দাবি করি, তাহলে কেন সিঙ্গাপুর থেকে এই তথ্য জানতে হল?” তিনি সরকারের স্বচ্ছতার অভাব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন এবং সংসদের বিশেষ অধিবেশনের মাধ্যমে এই বিষয়ে আলোচনার দাবি জানিয়েছেন। কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়গে এর আগে সরকারের বিরুদ্ধে ‘দেশকে বিভ্রান্ত’ করার অভিযোগ তুলে সংসদের বিশেষ অধিবেশন দাবি করেছিলেন। তিনি বলেন, “১৪০ কোটি ভারতীয় জানতে চায়, ভারত ও পাকিস্তান কি আবার একত্রিত হয়েছে? যুদ্ধবিরতির শর্ত কী ছিল?”

অপারেশন সিঁদুরের পটভূমি

অপারেশন সিঁদুর ২০২৫ সালের ৭ থেকে ১০ মে পর্যন্ত চলে, যা ২২ এপ্রিল জম্মু ও কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলার প্রতিক্রিয়ায় শুরু হয়। এই হামলায় ২৬ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়। ভারত এই হামলার জন্য পাকিস্তান-সমর্থিত জঙ্গিদের দায়ী করে। অপারেশন সিঁদুরের সময় ভারতীয় বিমান বাহিনী পাকিস্তানের ১১টি বায়ু ঘাঁটিতে আঘাত হানে, যার মধ্যে ইসলামাবাদের নিকটবর্তী নূর খান বায়ু ঘাঁটিও ছিল। স্যাটেলাইট চিত্রে এই আঘাতের নির্ভুলতা ও ধ্বংসাত্মক প্রভাব নিশ্চিত হয়েছে।

পাকিস্তান এই আঘাতের জবাবে ভারতের প্রতিরক্ষা ও বেসামরিক স্থাপনাগুলিতে হামলার চেষ্টা করে, কিন্তু ভারত আরও এক দফা নির্ভুল আঘাতের মাধ্যমে পাকিস্তানের বেশ কয়েকটি বায়ু ঘাঁটি ধ্বংস করে। ১০ মে একটি যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করা হয়, যা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেন, তিনি মধ্যস্থতার মাধ্যমে অর্জন করেছেন। তবে, জেনারেল চৌহান এই দাবি প্রত্যাখ্যান করে বলেন, উভয় পক্ষই যুদ্ধের সময় যুক্তিপূর্ণ আচরণ করেছে এবং পারমাণবিক সংঘাতের কোনো সম্ভাবনা ছিল না।

কংগ্রেসের অবস্থান

কংগ্রেস নেতা উত্তম কুমার রেড্ডি বলেন, “আমরা আমাদের সশস্ত্র বাহিনীর সাফল্যে গর্বিত, কিন্তু সরকারের উচিত সত্য প্রকাশ করা।” তিনি জানান, কংগ্রেস কোনো রাজনৈতিক খেলায় নেই, বরং ভবিষ্যতের জন্য শিক্ষা নিতে চায়। তিনি বলেন, “প্রতিবার আমরা এই বিষয়ে প্রশ্ন তুললে আমাদের দেশবিরোধী বলা হয়। এখন কি তারা জেনারেল চৌহানকেও এমন বলবে?”

অপারেশন সিঁদুর নিয়ে জেনারেল চৌহানের মন্তব্য ভারতের রাজনৈতিক মহলে তীব্র বিতর্কের সৃষ্টি করেছে। কংগ্রেস সরকারের কাছে স্বচ্ছতা এবং সংসদে আলোচনার দাবি জানিয়েছে। চীন-পাকিস্তান মৈত্রী, যুদ্ধবিরতির শর্ত এবং সামরিক কৌশল নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এই ঘটনা ভারতের সামরিক, কূটনৈতিক এবং রাজনৈতিক ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার গুরুত্ব তুলে ধরেছে।