লখনউয়ের (Lucknow) একানা স্টেডিয়ামে এক রোমাঞ্চকর ম্যাচে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু (RCB) ২২৮ রানের বিশাল লক্ষ্য তাড়া করে লখনউ সুপার জায়ান্টসকে (LSG) পরাজিত করে আইপিএল ২০২৫ (IPL 2025) পয়েন্ট টেবিলে শীর্ষ দুইয়ের মধ্যে জায়গা নিশ্চিত করেছে। ম্যাচের সবচেয়ে বড় চমক ছিলেন আরসিবির জিতেশ শর্মা, যিনি মাত্র ৩৩ বলে ৮৫ রানের এক ঝড়ো ইনিংস খেলে ছাপিয়ে যান লখনউয়ের অধিনায়ক ঋষভ পন্থের দুর্দান্ত শতরানকে।
ঋষভ পন্থ এই ম্যাচে নিজের সেরা ইনিংসগুলোর একটি খেলেন – ৬১ বলে ১১৮ রান করে এলএসজিকে তাদের আইপিএল ইতিহাসের সর্বোচ্চ সংগ্রহ ২২৭ রানে পৌঁছে দেন। তবে সেই ইনিংসের আলো ঢেকে দেন জিতেশ শর্মা, যিনি অপ্রতিরোধ্য ব্যাটিংয়ে এলএসজির সব পরিকল্পনা ভেঙে দেন। তার ইনিংসে ছিল ৮টি ছক্কা ও ৬টি চারের মার। আরসিবি অধিনায়ক রজত পতিদার এবং সিনিয়র ব্যাটসম্যান বিরাট কোহলি তাঁকে দুর্দান্ত সঙ্গ দেন। কোহলি এই ম্যাচে অর্ধশতক করার পাশাপাশি তিনটি বড় রেকর্ডও নিজের নামে করে নেন।
এই ম্যাচটি আরসিবির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল, কারণ জয় পেলেই তারা গ্যারান্টি করে ফেলতে পারত শীর্ষ দুইয়ে থাকা। যার অর্থ প্লে-অফে দু’টি সুযোগ থাকবে ফাইনালে ওঠার জন্য। ১৫ বছরের আইপিএল ইতিহাসে দেখা গেছে, শুধুমাত্র একবারই কোনো দল এলিমিনেটর থেকে টানা তিনটি ম্যাচ জিতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। তাই এই ম্যাচটি ছিল আরসিবির কাছে ‘ডু অর ডাই’ না হলেও, শীর্ষস্থানে থাকার দিক থেকে অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।
এই ম্যাচের আগে আরসিবি কিছুটা চাপে ছিল, কারণ তাদের শেষ ম্যাচে সানরাইজার্স হায়দরাবাদের বিরুদ্ধে বড় হারে তারা কিছুটা আত্মবিশ্বাস হারায়। একানা স্টেডিয়ামেও সেটি ঘটেছিল, যা তাদের মানসিকভাবে চাপের মধ্যে ফেলেছিল। কিন্তু জিতেশ শর্মার সাহসী ইনিংস এবং দলের সম্মিলিত প্রচেষ্টা এই চাপকে জয় করতে সাহায্য করে।
আরসিবি এই সিজনে সাতটি অ্যাওয়ে ম্যাচে খেলে সবগুলোতেই জয় পেয়েছে — যা আইপিএল ইতিহাসে এক অনন্য রেকর্ড। এমন পারফরম্যান্স অবশ্যই দলটির আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দেবে প্লে-অফের জন্য। আরসিবি এই জয় দিয়ে গুজরাট টাইটান্সকে টপকে দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছে এবং নেট রান রেটের ভিত্তিতে হয়তো প্রথম স্থানও ছিনিয়ে নিতে পারে পাঞ্জাব কিংসের কাছ থেকে।
এদিকে এলএসজি তাদের মর্যাদা রক্ষার লড়াই চালিয়েছিল। ঋষভ পন্থের সেঞ্চুরি ছাড়াও মিচেল মার্শ একটি দুর্দান্ত ইনিংস খেলেন, এবং নিকোলাস পুরানও ছিলেন ছন্দে। এই ম্যাচে জয় না পেলেও এলএসজি তাদের ব্যাটিং দক্ষতা দেখিয়ে দিয়েছে। তারা চাইবে এই জয়বঞ্চিত মরসুমে অন্তত একটি স্মরণীয় ম্যাচ রেখে যেতে।
এই জয় শুধু একটি জয় নয়, বরং এটি একটি বার্তা। আরসিবি হয়তো শেষ পর্যন্ত সেই বহু প্রতীক্ষিত আইপিএল শিরোপার স্বপ্নকে এবার বাস্তবে রূপ দিতে প্রস্তুত। দলটি যেভাবে কঠিন পরিস্থিতিতে ঘুরে দাঁড়িয়েছে, তাতে সমর্থকদের নতুন করে আশাবাদী হওয়াই স্বাভাবিক। এখন দেখার, তারা কি শেষ পর্যন্ত এই গতি বজায় রেখে ফাইনালে পৌঁছে ট্রফি ঘরে তুলতে পারে? সময়ই বলবে।