পাকিস্তানের বন্ধু তুরস্ককে কড়া বার্তা আসাদুদ্দিন ওয়াইসির

বর্তমানে ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনার আবহে তুরস্কের ভূমিকা নিয়ে নতুন করে বিতর্ক দানা বাঁধছে। বিশেষত, পহেলগাঁওয়ে জঙ্গিহানার পর ভারতের পাল্টা অপারেশন ‘সিঁদুরে’-এর সাফল্যের প্রেক্ষিতে যখন গোটা দেশ…

Asaduddin Owaisi Warns Turkey Over Blind Support to Pakistan Amid Terror Tensions

বর্তমানে ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনার আবহে তুরস্কের ভূমিকা নিয়ে নতুন করে বিতর্ক দানা বাঁধছে। বিশেষত, পহেলগাঁওয়ে জঙ্গিহানার পর ভারতের পাল্টা অপারেশন ‘সিঁদুরে’-এর সাফল্যের প্রেক্ষিতে যখন গোটা দেশ সন্ত্রাসবাদ নির্মূলে একজোট, তখন তুরস্কের পাকিস্তানকে সামরিক সাহায্য নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন দেশের রাজনীতিকরা। এই প্রেক্ষিতেই এবার কড়া হুঁশিয়ারি দিলেন AIMIM প্রধান ও সর্বদলীয় প্রতিনিধিদলের সদস্য আসাদুদ্দিন ওয়াইসি (Asaduddin Owaisi)।

তিনি স্পষ্ট বলেন, “তুরস্ককে সতর্ক থাকতে হবে। পাকিস্তানকে অন্ধভাবে সমর্থন করে তারা ভারতের সঙ্গে ঐতিহাসিক সম্পর্ককে ধ্বংস করছে।” তিনি আরও জানান, “তুরস্ক ভুলে গেলে চলবে না যে ভারতে পাকিস্তানের থেকেও বেশি মুসলমান বাস করেন। ভারতীয় মুসলমানরা দেশপ্রেমে অটুট। তাদের মন জয় না করে তুরস্ক যদি পাকিস্তানকে সমর্থন করে, তাহলে তাদের বিশ্বাসযোগ্যতা সংকটে পড়বে।”

   

ঐতিহাসিক বন্ধনের কথা মনে করালেন ওয়াইসি
আসাদুদ্দিন ওয়াইসি তাঁর বক্তব্যে তুরস্কের সঙ্গে ভারতের দীর্ঘ দিনের সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক বন্ধনের কথাও তুলে ধরেন। তিনি বলেন, “তুরস্কের ইসবাঙ্ক (Isbank)-এর প্রাথমিক আমানতকারীদের মধ্যে ছিলেন ভারতের হায়দরাবাদ ও রামপুরের মানুষ। তারা তুরস্কের স্বাধীনতা আন্দোলনের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন।”

তিনি আরও বলেন, “১৯৯০ সাল পর্যন্ত লাদাখের স্কুল ও কলেজে তুর্কি ভাষা পড়ানো হতো। তুরস্ককে এই ঐতিহাসিক বন্ধনের কথা ভুলে গেলে চলবে না। আজ যদি তারা পাকিস্তানকে অন্ধভাবে সমর্থন করে, তবে সেই বন্ধন ধ্বংস হবে।”

পহেলগাঁও হামলা ও ‘অপারেশন সিঁদুরে’
সম্প্রতি জম্মু-কাশ্মীরের পহেলগাঁও এলাকায় পাকিস্তান-প্রেরিত জঙ্গিদের হামলায় একাধিক ভারতীয় সেনা শহিদ হন। এর পাল্টা জবাব দিতে ভারত চালায় ‘অপারেশন সিঁদুরে’। এই অভিযানে পাকিস্তানের অধিকৃত কাশ্মীরে জঙ্গিদের একাধিক ঘাঁটি ধ্বংস করা হয়। ভারতীয় সেনার দাবি, অন্তত চারটি বিমানঘাঁটি ও দুটি জঙ্গি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র পুরোপুরি গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।

এই অভিযানের পর বিশ্বমহলে ভারতের শক্ত অবস্থানের প্রশংসা হলেও, তুরস্ক প্রকাশ্যে পাকিস্তানের পাশে দাঁড়ায়। এমনকি, সামরিক সরঞ্জাম ও তথ্য-সহায়তা দেওয়ার অভিযোগও ওঠে তুরস্কের বিরুদ্ধে। এই ভূমিকায় চরম অসন্তোষ প্রকাশ করেন ভারতীয় কূটনীতিকরা।

Advertisements

“তুরস্কের উচিত ভারতীয় মুসলমানদের সম্মান করা”
আসাদুদ্দিন ওয়াইসি বলেন, “তুরস্ক যদি সত্যিই মুসলিমদের স্বার্থে কথা বলে, তাহলে তাদের প্রথমে ভারতীয় মুসলমানদের পাশে দাঁড়ানো উচিত। আমরা পাকিস্তানের মত উগ্রপন্থার পৃষ্ঠপোষক নই। আমরা শান্তি চাই, উন্নয়ন চাই এবং আমাদের দেশের প্রতি অঙ্গীকার অটুট।”

তিনি আরও বলেন, “তুরস্ক যদি আন্তর্জাতিক মঞ্চে ভারতের বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে থাকে, তাহলে ভারতীয় মুসলমানদের মধ্যে তুরস্কের প্রতি goodwill-ও ধীরে ধীরে হারিয়ে যাবে।”

রাজনৈতিক বার্তা ও ভবিষ্যতের দিক নির্দেশনা
ওয়াইসির এই মন্তব্য শুধু একজন রাজনীতিকের বক্তব্য নয়—এটা ভারতের তরফে একটি কৌশলগত বার্তা। ভারত এখন শুধু সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করছে না, বরং তাদের পাশে দাঁড়ানো রাষ্ট্রগুলোকেও সতর্ক করছে। তুরস্কের মতো মুসলিম প্রধান দেশ যদি পাকিস্তানের কার্যকলাপে সমর্থন দেয়, তবে তা ভারত ও দক্ষিণ এশিয়ার নিরাপত্তার পক্ষে বিপজ্জনক।

আসাদুদ্দিন ওয়াইসির কড়া বার্তা স্পষ্ট করে দেয়, পাকিস্তানকে সমর্থন মানে সন্ত্রাসবাদকে প্রশ্রয় দেওয়া। আর সেই পথ যদি তুরস্ক বেছে নেয়, তাহলে তাদের সঙ্গে ভারতের ঐতিহাসিক বন্ধনও প্রশ্নের মুখে পড়বে।