রাতেই বিদেশ সচিব (foreign-secretary) সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন , ভারতীয় সেনাকে জবাব দেওয়ার জন্য পুরো ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে। পাকিস্তান যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে অপরাধ করেছে। ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে শনিবার বিকেল ৫টা থেকে কার্যকর হওয়া যুদ্ধ বিরতি চুক্তির মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই পাকিস্তান নিয়ন্ত্রণ রেখা (এলওসি) এবং আন্তর্জাতিক সীমান্তে গোলাবর্ষণ ও ড্রোন হামলা শুরু করে, যা চুক্তির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় (এমইএ) এই লঙ্ঘনের তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেছে (foreign-secretary)
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় (foreign-secretary) এই লঙ্ঘনের তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেছে, “পাকিস্তান আজ ঘোষিত যুদ্ধবিরাম লঙ্ঘন করেছে। আমরা পাকিস্তানকে এই লঙ্ঘন বন্ধ করার আহ্বান জানাচ্ছি।” ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীকে সীমান্তে আরও লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে কঠোরভাবে মোকাবিলা করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে এবং বিদেশ সচিব (foreign-secretary) জানিয়েছেন ভারতীয় সেনা এর প্রত্যাঘাত হানতে যে কোনো পদক্ষেপ নিতে পারে। এর জবাবে ভারতীয় সেনাবাহিনী পাকিস্তানের পেশোয়ারে সামরিক স্থাপনা ও সন্ত্রাসী ঘাঁটিগুলিতে নির্ভুল হামলা চালিয়েছে, যার ফলে শহরটি বিস্ফোরণে কেঁপে উঠেছে।
কেরালায় খেলার প্রসঙ্গে কী বললেন বিকাশ ইউমনাম?
যুদ্ধবিরাম লঙ্ঘন ও ভারতের প্রতিক্রিয়া
শনিবার রাত ৮টার দিকে পাকিস্তান জম্মু ও কাশ্মীরের পুঞ্চ, রাজৌরি, আখনুর, আরএস পুরা এবং পালানওয়ালা সেক্টরে ভারী গোলাবর্ষণ শুরু করে। এছাড়া, উধমপুর, শ্রীনগর, বারমার, ফিরোজপুর এবং কাচ্ছে পাকিস্তানি ড্রোন প্রবেশ করে, যা ভারতীয় আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা দ্বারা নিষ্ক্রিয় করা হয়। জম্মু ও কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ সামাজিক মাধ্যমে লেখেন, “যুদ্ধবিরামের কী হল? শ্রীনগর জুড়ে বিস্ফোরণের শব্দ!”
ভারতীয় সেনাবাহিনী তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া হিসেবে পেশোয়ারে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর কমান্ড সেন্টার, অস্ত্র মজুদ এবং জঙ্গি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলিতে নির্ভুল হামলা চালায়। ভারতীয় বিমান বাহিনীর যুদ্ধবিমান এবং ড্রোন ব্যবহার করে এই অভিযান পরিচালিত হয়।
স্থানীয় সূত্র জানায়, হামলায় পাকিস্তানের সামরিক স্থাপনাগুলিতে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে, এবং বেশ কয়েকজন সেনা সদস্য হতাহত হয়েছেন। পেশোয়ারে বিস্ফোরণের শব্দে শহর ফাঁকা হয়ে যায়, এবং বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
বিদেশ সচিব বিক্রম মিশ্রি বলেন,(foreign-secretary) “গত কয়েক ঘণ্টা ধরে পাকিস্তান যুদ্ধবিরামের বারবার লঙ্ঘন করছে। ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনী এই লঙ্ঘনের যথাযথ জবাব দিচ্ছে।” তিনি আরও জানান, ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) এবং সেনাবাহিনীকে সম্পূর্ণ স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে যে কোনো লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে।
পাকিস্তানের সেনাপ্রধান ও আইএসআই-এর ভূমিকা
এই লঙ্ঘনের জন্য পাকিস্তানের সেনাপ্রধান জেনারেল অসিম মুনিরের ভূমিকা নিয়ে তীব্র সমালোচনা হচ্ছে। বিশ্লেষকরা মনে করেন, মুনিরের কঠোর সামরিক নীতি এবং পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই-এর সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক এই লঙ্ঘনের পেছনে মূল কারণ।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ যুদ্ধবিরামের প্রশংসা করার কয়েক মিনিট পরেই এই হামলা শুরু হয়, যা তার নেতৃত্বের দুর্বলতা এবং সেনাবাহিনীর প্রভাব প্রকাশ করে। সামাজিক মাধ্যমে অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন—শেহবাজ শরিফ কি অসিম মুনিরের নির্দেশে চলছেন?
আইএসআই-এর ভূমিকাও এই প্রেক্ষাপটে উল্লেখযোগ্য। ২২ এপ্রিল পহেলগাঁও জঙ্গি হামলায় ২৬ জন নিহত হওয়ার পর ভারত এই হামলার জন্য আইএসআই-সমর্থিত জঙ্গিদের দায়ী করে। এর জবাবে ভারত ৭ মে ‘অপারেশন সিঁদুর ’ পরিচালনা করে, যাতে পাকিস্তান ও পাকিস্তান-অধিকৃত কাশ্মীরে নয়টি জঙ্গি ঘাঁটি ধ্বংস করা হয়। বিশ্লেষকরা মনে করেন, এই অভিযানে আইএসআই-এর প্রভাব ক্ষুণ্ন হওয়ায় তারা সেনাবাহিনীর উপর চাপ সৃষ্টি করে যুদ্ধবিরাম লঙ্ঘনের মাধ্যমে প্রতিশোধ নেওয়ার চেষ্টা করছে।
ভারতের কূটনৈতিক ও সামরিক অবস্থান
ভারত এই লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী (foreign-secretary)এস জয়শঙ্কর বলেন, “ভারত সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে দৃঢ় ও আপসহীন অবস্থান বজায় রাখবে। পাকিস্তানের এই পদক্ষেপ তাদের বিশ্বাসযোগ্যতা নষ্ট করে।” ভারত ইন্দুস জল চুক্তি স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত অব্যাহত রেখেছে, যা পাকিস্তানের কৃষি ও জলসেচনের উপর ব্যাপক প্রভাব ফেলতে পারে।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি শনিবার সন্ধ্যায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়শঙ্কর, প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল এবং তিন বাহিনীর প্রধানদের সঙ্গে উচ্চ-পর্যায়ের বৈঠক করেন। সূত্র জানায়, এই বৈঠকে ভবিষ্যৎ লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এই লঙ্ঘন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী (foreign-secretary)মার্কো রুবিও বলেন, “যুদ্ধবিরামের লঙ্ঘন অঞ্চলের শান্তির জন্য হুমকি। আমরা উভয় পক্ষকে সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানাচ্ছি।” যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র সচিব ডেভিড ল্যামি বলেন, “এই যুদ্ধবিরাম অত্যন্ত স্বাগতযোগ্য। আমি উভয় পক্ষকে এটি বজায় রাখার আহ্বান জানাই।”
পাকিস্তানের যুদ্ধ বিরতি লঙ্ঘন এবং ভারতের পেশোয়ারে প্রত্যাঘাত অঞ্চলের উত্তেজনাকে নতুন মাত্রা দিয়েছে। ভারতের সামরিক ও কূটনৈতিক দৃঢ়তা স্পষ্ট, এবং সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে তার জিরো টলারেন্স নীতি অব্যাহত রয়েছে। আগামী সোমবার ডিজিএমও-দের আলোচনা এই সংকট সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। তবে, পাকিস্তানের সেনাবাহিনী এবং আইএসআই-এর প্রভাব শান্তি প্রক্রিয়াকে জটিল করে তুলছে। এই ঘটনা ভারতের সামরিক শক্তি এবং সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থানের প্রমাণ।