কলকাতা বইমেলা (Kolkata Book Fair 2025) মানে শুধুমাত্র বই নয়, এক বিশাল সাংস্কৃতিক উৎসব (Cultural Festival)। রাজ্য থেকে শুরু করে দেশ-বিদেশের নানা প্রান্ত থেকে হাজার হাজার বইপ্রেমী (Book Lovers) প্রতিবছর একযোগে হাজির হন এই মহা-যজ্ঞে। রবিবার শেষ হয়েছে কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলা ২০২৫ (Kolkata International Book Fair 2025), তবে তার সোনালি মুহূর্তগুলো যেন স্মৃতি হয়ে রয়ে যাবে সকলের মনে। বইমেলার (Book Fair) শেষ দিনে ভিড় ছিল অবিশ্বাস্য, তবে বই বিক্রির পরিসংখ্যান ও কম গুরুত্বপূর্ণ নয়।
পাবলিশার্স অ্যান্ড বুকসেলার্স গিল্ডের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, এবারের বইমেলায় মোট ২৭ লাখ দর্শনার্থী (27 Lakh Visitors) উপস্থিত হয়েছিলেন। যদিও গত বছর এই সংখ্যা ছিল ২৯ লাখ, তবে এবার ভিড় কিছুটা কমেছে। গিল্ডের সাধারণ সম্পাদক ত্রিদীব চট্টোপাধ্যায়জানিয়েছেন যে গতবার বইমেলা ১৪ দিন হয়েছিল, যেখানে জাতীয় ছুটির দিন ছিল। সেই কারণে ভিড় বেশি হয়েছিল। এবারের মেলা ১২ দিন চলেছে, যার প্রভাব ভিড়ের পরিসংখ্যানে পড়েছে। তবে বই বিক্রির পরিমাণ বেড়েছে, প্রায় ২৫ কোটি টাকার (25 Crore Rupees) বই বিক্রি (Sold) হয়েছে, যা গত বছরের ২৩ কোটি টাকার তুলনায় প্রায় ২ কোটি বেশি।
মেলা শুরু হয়েছিল ২৮ জানুয়ারি, সল্টলেক সেন্ট্রাল পার্কের চত্বরে। বইমেলার প্রতিটি দিনেই ছিল প্রায় ভিড়। কেউ পরিবার নিয়ে, কেউ বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে, আবার অনেকেই একা একা বইয়ের জগতে হারিয়ে যেতে এসেছেন। বইমেলা শুধু বই বিক্রি বা কেনাকাটা নয়, বরং এক সামাজিক উৎসব। বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে আড্ডা, নানা ধরনের সাহিত্যিক আলোচনাও চলে এখানে। অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক, ছাত্র-ছাত্রী, সাহিত্যিক থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষও এই মেলা উপভোগ করেন। শহরের প্রান্তিক এলাকায় কাজ করা এক তরুণী বলেন, “এখানে এসে একটু বিশ্রাম নিতে পারি, একটা নতুন বই হাতে নিয়ে একটু সময় কাটানো আমার জন্য অনেক বড় বিষয়।”
মেলা শেষ হওয়ার দিন বিশেষ আকর্ষণ ছিল অতিরিক্ত ডিসকাউন্ট। বইপ্রেমীরা জানতেন যে শেষদিনে বেশ কিছু বইয়ে বিশেষ ছাড় পাওয়া যাবে। এ কারণে মেলার শেষ দিন ছিল অনেকের কাছে আরও বেশি আকর্ষণীয়। এক কলেজ পড়ুয়া বলনে, “বইমেলার শেষ দিনে সবচেয়ে বড় আকর্ষণ ছিল ডিসকাউন্ট। আমি গতবারও এসেছিলাম, এবারও এসেছি। এই ডিসকাউন্ট ছাড়া চলে?”
এবারের বইমেলা অন্যরকম এক অভিজ্ঞতা তৈরি করেছে। শুধুমাত্র বই কেনা-বিক্রি নয়, এটি ছিল এক নতুন যাত্রার সূচনা। এক তরুণী জানান, “বইমেলা আমাদের জন্য শুধু বই কিনতে আসা নয়, এটা ছিল আড্ডা দেওয়ার, বন্ধুত্ব তৈরি করার এবং একে অপরের সান্নিধ্য উপভোগ করার জায়গা। প্রতি বছর এটাই আমাদের মিটিং পয়েন্ট হয়ে থাকে। এবারও মেলা শেষে সেই অনুভূতিটা ফিরে যেতে হবে।”
এদিকে, কলকাতা বইমেলার আয়োজকরা জানাচ্ছেন যে, রাজ্যে এত বড় মেলা আর কোথাও হয় না। এবারের বইমেলা শুধুমাত্র বইয়ের বাজার নয়, এটি ছিল নানা ধরনের সাংস্কৃতিক আয়োজন। যেমন সাহিত্যিকদের মঞ্চে আলোচনাসভা, কবিতার আসর এবং আরও অনেক কিছু। যা বইমেলাকে শুধু বইয়ের বাজারই নয়, বরং এক বিশেষ সাংস্কৃতিক আন্দোলনের আঙিনায় পরিণত করেছে।