ঝাড়খণ্ড বিধানসভা নির্বাচনের (Jharkhand Assembly Elections) প্রথম পর্বের প্রচারের শেষ হতে আর মাত্র তিন দিন বাকি, এবং কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী (Rahul Gandhi) মাঠে নামছেন। তিনি সিমডেগা এলাকা থেকে কংগ্রেসের নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেন, যা খ্রিস্টান অধ্যুষিত অঞ্চল হিসেবে পরিচিত। এরপর তিনি লোহারদাগা-তে দ্বিতীয় জনসভায় ভাষণ দেবেন। তার এই প্রচারণার লক্ষ্য ঝাড়খণ্ডের দক্ষিণ ছোট নাগপুর বেল্টে ১৫টি বিধানসভা আসন (15 Assembly Seats) জয়ের পরিকল্পনা, যেখানে বিজেপির শক্ত ঘাঁটি বলে পরিচিত।
ঝাড়খণ্ডের দক্ষিণ ছোট নাগপুর (South Chhotanagpur) অঞ্চলটি পাঁচটি জেলা— রাঁচি, খুন্তি, গুমলা, লোহারদাগা এবং সিমডেগা—এ বিস্তৃত। ২০০০ সালে ঝাড়খণ্ড পৃথক রাজ্য হওয়ার পর, এই অঞ্চলটি বিজেপির শক্ত ঘাঁটি হিসেবে বিবেচিত হয়েছিল। তবে ২০১৯ সালের বিধানসভা নির্বাচনে, জেএমএম-কংগ্রেস জোট এখানে বিজেপির দুর্গ ভাঙতে সফল হয়। তা সত্ত্বেও, ২০১৯ এর পর থেকে বিজেপি আবারও এই এলাকায় নিজেদের শক্তি ফিরে পেতে চেষ্টা করছে।
এবার, কংগ্রেস এবং বিজেপির মধ্যে হাড্ডাহাডি লড়াই চলছে। রাহুল গান্ধী শুক্রবার সিমডেগা এবং লোহারদাগায় দুটি বড় জনসভা। সিমডেগা গান্ধী ময়দানে তার প্রথম জনসভা এবং পরবর্তীতে লোহারদাগা-এর বিএস কলেজ মাঠে দ্বিতীয় সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। এরপর, শনিবার তিনি জামশেদপুরে ভারত জোটের প্রার্থীদের সমর্থনে রোড শো করবেন এবং হাজারীবাগ-এ একটি জনসভা করবেন।
এই অঞ্চলটি আদিবাসী অধ্যুষিত, এবং এখানে ১৫টি বিধানসভা আসন রয়েছে, যার মধ্যে ১১টি আসন তফসিলি উপজাতি জন্য সংরক্ষিত এবং একটি আসন তফসিলি জাতির জন্য। বাকি তিনটি আসন সাধারণ। ২০১৯ সালে, কংগ্রেস এবং জেএমএম জোট এই ১৫টি আসনের মধ্যে ৯টি আসন জিতেছিল—যার মধ্যে কংগ্রেস ৫টি এবং জেএমএম ৪টি আসন পেয়েছিল। বিজেপি এই অঞ্চলে ৫টি আসন জিতেছিল, তবে ২০১৪ সালের নির্বাচনে বিজেপি এই অঞ্চলে বেশ শক্তিশালী অবস্থানে ছিল।
দক্ষিণ ছোট নাগপুরের (South Chhotanagpur) জনসংখ্যা ৫৫ লাখেরও বেশি, যার মধ্যে ৭২ শতাংশ আদিবাসী, ৬ শতাংশ সংখ্যালঘু, ৫ শতাংশ তফসিলি জাতি এবং বাকি ১৭ শতাংশ সাধারণ জাতি। তবে, ২০১৪ সালের পথলগাড়ি আন্দোলন এবং তার পরে আদিবাসীদের মধ্যে বিজেপি বিরোধী মনোভাব তৈরি হয়েছে, যা কংগ্রেস এবং জেএমএমের পক্ষে ইতিবাচক সংকেত দিতে পারে।
এই অঞ্চলে, খুন্তি, সিমডেগা, গুমলা এবং লোহারদাগাতে বিজেপির রাজনৈতিক ভিত্তি দুর্বল হতে শুরু করেছে, এবং জেএমএম-কংগ্রেস এখানে শক্তিশালী অবস্থান তৈরি করেছে। বিজেপি এখানকার আদিবাসী ভোট ব্যাংক পুনরুদ্ধারের জন্য প্রচেষ্টা চালাচ্ছে, তবে কংগ্রেস ও জেএমএমেরাও এই ভোটব্যাঙ্কের উপর নির্ভর করছে।
এই পরিস্থিতিতে, রাহুল গান্ধী সিমডেগা, যেটি ৫০ শতাংশ খ্রিস্টান জনসংখ্যা অধ্যুষিত, সেখানে প্রচার শুরু করে একটি বড় বার্তা দিয়েছেন। এটি সিমডেগা ও লোহারদাগা অঞ্চলে কংগ্রেসের শক্তি তুলে ধরার এবং সেখানে আদিবাসী ও খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের সমর্থন লাভের চেষ্টা হিসেবে দেখা হচ্ছে।
রাহুল গান্ধীর লক্ষ্য এখন দক্ষিণ ছোট নাগপুর (South Chhotanagpur) বেল্টের ১৫টি বিধানসভা আসন জয় করা, যাতে বিজেপির শক্ত ঘাঁটিতে কংগ্রেসের উপস্থিতি আরও দৃঢ় হয়। তার প্রচারে একদিকে যেমন বিজেপির বিরুদ্ধে শক্ত বার্তা যাচ্ছে, তেমনি কংগ্রেস-জেএমএম জোটের শক্তি বাড়ানোর পরিকল্পনাও লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
এভাবে, ঝাড়খণ্ডের বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেসের প্রচার নতুন মোড় নিচ্ছে, এবং রাহুল গান্ধী তার প্রচারে সম্পূর্ণ শক্তি নিয়ে ঝাড়খণ্ডে বিজয়ী হওয়ার পথে একে একে তার পরিকল্পনা বাস্তবায়িত করতে চলেছেন।