বৃহস্পতিবার রাত বারোটায় বৃন্দাবনের রাধা কুন্ডের স্নান যাত্রা উৎসবের সঙ্গে সঙ্গে নবদ্বীপে অনুষ্ঠিত হলো গঙ্গা স্নান। সাইক্লোন দানা (Cyclone Dana) উপেক্ষা করে এ বছরও ভক্তরা এই উৎসবে অংশগ্রহণ করতে আসেন। যদিও সাইক্লোনের কারণে লোকসমাগম কিছুটা কম ছিল, তবে রাতের আকাশের নিচে অনুষ্ঠিত এই ধর্মীয় অনুষ্ঠানটি ছিল সাড়া জাগানো। প্রশাসন সুরক্ষার জন্য কড়া নজরদারি রেখেছিল, যা স্থানীয় প্রশাসনের যথাযথ প্রস্তুতির পরিচায়ক।
নবদ্বীপের বিভিন্ন এলাকা থেকে অসংখ্য ভক্ত রাতে এসে হাজির হন। শহরের বিভিন্ন গঙ্গার ঘাটগুলোতে হরিনাম সংকীর্ত্তন, গঙ্গা আরতি এবং অন্যান্য ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। রাত এগারোটার পর থেকে ভক্তদের আসা শুরু হয় এবং সকাল পর্যন্ত চলতে থাকে। স্নান যাত্রা উৎসব উপলক্ষে মন্দিরগুলোতে ভক্তদের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো।
নবদ্বীপে স্নান যাত্রার জন্য শহরের সুদর্শন মন্দিরের রাধা কুন্ড এবং শ্যাম কুন্ডের আশেপাশে ভক্তদের উজ্জীবিত সমাগম দেখা যায়। এদের মধ্যে অনেকেই সপরিবারে এসেছেন, যে কারণে পুরো এলাকায় এক ধরনের আনন্দমুখর পরিবেশ তৈরি হয়। সেখানেও আয়োজিত হয় বিভিন্ন অনুষ্ঠানের পাশাপাশি গঙ্গা আরতি, যা ভক্তদের জন্য বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ।
স্থানীয় বাসিন্দা আশালতা মন্ডল, যিনি কৃষ্ণ নগরের বাসিন্দা, বলেন, “প্রতি বছরই আমরা নবদ্বীপে এই বিশেষ দিনে গঙ্গা স্নানে আসি। এ বছরও আমরা পনেরো জন টোটো ভাড়া করে এসেছি। কারো বয়স একাত্তর, তো কারো সত্তর।” তিনি আরও জানান, “এই পবিত্র দিনে গঙ্গা স্নান করতেই আমাদের আসা।”
এছাড়া, নবদ্বীপের প্রধান গঙ্গার ঘাটগুলোতে ভক্তরা একত্রিত হয়ে নানান ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালন করেন। তারা একে অপরকে উৎসাহিত করেন এবং নিজেরা গঙ্গায় স্নান করতে প্রস্তুত হন। আশালতার মতো অনেক ভক্তই জানান, তারা বিশ্বাস করেন যে এই স্নান তাদের জীবনে শান্তি ও সৌভাগ্য নিয়ে আসবে।
প্রশাসনের পক্ষ থেকে সুরক্ষার জন্য বিভিন্ন ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল। সাইক্লোনের প্রভাবে যেন কোনো অসুবিধা না হয়, সে কারণে প্রশাসন উপযুক্ত পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিল। পুলিশ ও স্বেচ্ছাসেবকদের দ্বারা শহরের বিভিন্ন এলাকায় নজরদারি রাখা হয়েছিল, যাতে করে উৎসবের সময় ভক্তদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায়। নবদ্বীপে গঙ্গা স্নানের জন্য প্রচুর ভক্ত আগমন করায় কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব ছিল অনেক বেশি।
সাইক্লোন দানা উড়িয়ে দিলেও ভক্তদের ধর্মীয় অনুভূতি এবং উৎসাহের কোনোটাই কমেনি। ভক্তরা জানান, তারা প্রতিবার এই উৎসবে অংশগ্রহণ করেন এবং তাদের বিশ্বাস, এই স্নান তাদের জীবনে সুখ ও সমৃদ্ধি আনবে।
এমন একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানে অংশ নিতে পেরে ভক্তরা আপ্লুত। তারা বলেন, “এই উৎসবের মাধ্যমে আমরা আমাদের বিশ্বাস এবং সংস্কৃতিকে পুনর্বার জীবিত রাখতে পারি।” সুতরাং, সাইক্লোন দানা হার মানলো ভক্তির কাছে, এবং রাধাকুন্ডের স্নান যাত্রা উৎসব হয়ে উঠল একটি বিশেষ ধর্মীয় অনুষ্ঠান।