ওড়িশার আইনমন্ত্রী পৃথ্বীরাজ হরিচন্দন সম্প্রতি জানিয়েছেন যে, পূরীর শ্রীজগন্নাথ মন্দিরের (Jagannath Temple) ভিতরে এবং বাইরে রত্নভান্ডারে গ্রাউন্ড পেনিট্রেটিং রাডার (জিপিআর) সমীক্ষা পরিচালিত হয়েছে। তিনি উল্লেখ করেছেন যে, “আমরা শ্রীজগন্নাথ মন্দিরের বাহ্যিক এবং অভ্যন্তরীণ রত্নভান্ডারে জিপিআর সমীক্ষা চালিয়েছি। রিপোর্ট এক বা দুই দিনের মধ্যে পাওয়ার কথা। রিপোর্ট পেলে আমরা একটি বিস্তারিত আলোচনা এবং আরও বিশ্লেষণ করব। রিপোর্টে যদি কিছু পাওয়া যায় তবে সরকার ব্যবস্থা নেবে। যদি কিছু না পাওয়া যায়, তবে ভারতীয় প্রত্নতাত্ত্বিক সর্বেক্ষণ (এএসআই)-এর অধীনে মেরামতের কাজ শুরু হবে।”
রত্নভান্ডারের ইতিহাস ও গুরুত্ব
শ্রীজগন্নাথ মন্দিরের রত্নভান্ডার হল একটি অত্যন্ত রহস্যময় এবং সুরক্ষিত এলাকা, যা মন্দিরের সম্পদ এবং রত্নের জন্য বিখ্যাত। দীর্ঘদিন ধরে এই ভান্ডারটি খোলার বিষয়ে বিভিন্ন ধরনের ধোঁয়াশা এবং কৌতূহল সৃষ্টি হয়েছে। অনেকেই বিশ্বাস করেন যে, রত্নভান্ডারে প্রচুর ধনসম্পদ রয়েছে যা মন্দিরের ঐতিহ্য এবং ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত।
রত্নভান্ডারের গুরুত্ব শুধু ঐতিহাসিক বা আর্থিক নয়, ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকেও এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পূরীর শ্রীজগন্নাথ মন্দির সারা বিশ্বে হিন্দুদের একটি অন্যতম পবিত্র তীর্থক্ষেত্র। রত্নভান্ডার এই মন্দিরের একটি রহস্যময় অংশ, যা দীর্ঘকাল ধরে সুরক্ষিত এবং সীমিতভাবে ব্যবহার করা হয়েছে। অনেকেই মনে করেন যে, রত্নভান্ডারে প্রচুর মূল্যবান ধনরত্ন রয়েছে, তবে এর সত্যতা পরীক্ষা করার জন্যই এই জিপিআর সমীক্ষা পরিচালিত হয়েছে।
#WATCH | Banpur: Odisha Law Minister Prithiviraj Harichandan says, “We have conducted a GPR survey in the outer and inner Ratna Bhandar of Puri’s Sri Jagannath Temple. The report is supposed to come within a day or two. Once we get the report we will do a detailed discussion and… pic.twitter.com/X9doU6TRnW
— ANI (@ANI) October 14, 2024
জিপিআর সমীক্ষা কীভাবে কার্যকর?
গ্রাউন্ড পেনিট্রেটিং রাডার (জিপিআর) একটি প্রযুক্তিগত সমীক্ষা পদ্ধতি যা মাটির নিচের স্তরগুলি স্ক্যান করতে এবং সেখানে থাকা কোনও ধনরত্ন বা অন্যান্য উপাদান খুঁজে পেতে সহায়তা করে। এটি মাটির নিচের অবস্থা বা স্ট্রাকচার সম্পর্কে তথ্য প্রদান করে। এই সমীক্ষা প্রক্রিয়া জিপিআরের মাধ্যমে মন্দিরের ভিতরের রত্নভান্ডারের অবস্থা এবং সেখানে থাকা সম্ভাব্য ধনরত্নের অবস্থান খুঁজে বের করার জন্য ব্যবহৃত হয়েছে।
ওড়িশা সরকার এবং মন্দির কর্তৃপক্ষ এই সমীক্ষার মাধ্যমে সঠিক তথ্য পেতে এবং রত্নভান্ডার সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা লাভ করতে চায়। জিপিআর সমীক্ষার ফলাফল আসার পর, পরবর্তী পদক্ষেপ হিসাবে কোন ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হবে সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
ভবিষ্যৎ পদক্ষেপ
মন্ত্রী পৃথ্বীরাজ হরিচন্দন আরও জানান যে, “যদি জিপিআর রিপোর্টে কিছু পাওয়া যায়, তবে সরকার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। তবে, যদি রিপোর্টে কিছু না পাওয়া যায়, তাহলে মেরামতের কাজ শুরু হবে।”
ভারতীয় প্রত্নতাত্ত্বিক সর্বেক্ষণ (এএসআই)-এর অধীনে মন্দিরের রত্নভান্ডারের মেরামতের কাজ শুরু হবে। এএসআই এর আগে মন্দিরের বিভিন্ন অংশের মেরামত ও সংরক্ষণ কাজ করেছে এবং রত্নভান্ডারের মেরামত কাজও তাদের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে।
সরকারের এই পদক্ষেপগুলির মাধ্যমে মন্দিরের ঐতিহ্য এবং সুরক্ষা বজায় রাখার প্রয়াস চলছে। যদি রত্নভান্ডারে কোনও মূল্যবান ধনরত্ন পাওয়া যায়, তবে তা সঠিকভাবে সুরক্ষিত এবং ব্যবহৃত হবে, মন্দিরের সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যের মর্যাদা অক্ষুণ্ণ রাখার চেষ্টা করা হবে।
মন্দিরের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের গুরুত্ব
পূরীর শ্রীজগন্নাথ মন্দির হিন্দু ধর্মের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতীক। এই মন্দির শুধু ওড়িশার নয়, গোটা ভারতের ধর্মীয় ঐতিহ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। যুগ যুগ ধরে এই মন্দির ধর্মীয় এবং সাংস্কৃতিক কেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠেছে। রত্নভান্ডারের মতো সম্পদ এই মন্দিরের ঐতিহ্যের একটি অংশ যা যুগ যুগ ধরে পূজিত হয়েছে এবং সুরক্ষিত রাখা হয়েছে।
রত্নভান্ডারের ধনসম্পদ শুধুমাত্র ধর্মীয় কারণেই গুরুত্বপূর্ণ নয়, এটি মন্দিরের অর্থনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক স্থায়িত্বের প্রতীকও বটে। মন্দিরের সংস্কৃতি, ঐতিহ্য এবং সম্পদ রক্ষা করা শুধু মন্দির কর্তৃপক্ষ নয়, সরকারেরও একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব।
শ্রীজগন্নাথ মন্দিরের রত্নভান্ডারের জিপিআর সমীক্ষার ফলাফলের জন্য এখন সকলের অপেক্ষা। রিপোর্টের ভিত্তিতে সরকার এবং মন্দির কর্তৃপক্ষ পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। ওড়িশার সরকার মন্দিরের ঐতিহ্য এবং সম্পদ রক্ষা করার জন্য সবরকম ব্যবস্থা গ্রহণ করছে, যাতে মন্দিরের সংস্কৃতি অক্ষুণ্ণ থাকে।