সরকারের ‘রক্তচাপ’ বাড়িয়ে শ্যামবাজারে বিজেপিকে ধর্নার অনুমতি হাইকোর্টের!

নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে আর জি কর (R G Kar) সহ শ্যামবাজার চত্বরের একটা বড় অংশে পাঁচজনের বেশি জমায়েত নিষিদ্ধ করেছিল কলকাতা পুলিশ। গোটা এলাকা (R…

West Bengal BJP Gets permission for protest from kolkata high court on RG kar medical College issue at Shyambazar

নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে আর জি কর (R G Kar) সহ শ্যামবাজার চত্বরের একটা বড় অংশে পাঁচজনের বেশি জমায়েত নিষিদ্ধ করেছিল কলকাতা পুলিশ। গোটা এলাকা (R G Kar) জুড়ে ১৬৩ বিএসএস (২০২৩) ধারা জারি হয়েছে। যা ১৪৪ ধারার অনুরূপ। তার ফলে বিতর্কের আঁচ যেন আরও বেড়েছে। এ পরিস্থিতিতে আর জি করের (R G Kar) ঘটনার প্রতিবাদে ধর্নার জন্য কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয় বঙ্গ বিজেপি।

এবার আদালতের নির্দেশে কিছুটা হলেও ব্যাকফুটে যেতে হচ্ছে রাজ্যের সরকার তথা কলকাতা পুলিশ প্রশাসনকে। কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী শ্যামবাজার মেট্রোর এক নম্বর গেটের সামনে ধর্ণায় বসতে পারবে বিজেপি নেতৃত্ব। তবে এই বিষয়ে কিছু শর্ত আরোপ করা হয়েছে। প্রথমত ১৬ ফুট বাই ২০ ফুটের বেশি মঞ্চ কোনও ভাবেই করা যাবে না। শুধু তাই নয়, জনসমাগম নিয়েও কড়া নির্দেশিকা রয়েছে কলকাতা হাইকোর্টের। কোনও ভাবেই ৩০০ জনের বেশি যেন জমায়েত না হয় কড়া নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট।

   

আরজি করের পরিস্থিতি পাল্টাচ্ছে না, সুপ্রিম আর্জির পরও অনড় চিকিৎসকরা

হাইকোর্টের তরফে এই কর্মসূচির সময়সীমাও বেঁধে দেওয়া হয়েছে। বেলা ১১টা থেকে রাত্রি ৯টা পর্যন্ত এই ধরনা বা প্রতিবাদ কর্মসূচি চালানো যেতে পারে। আগামী পাঁচ দিন এই কর্মসূচি করতে পারবে বিজেপি নেতৃত্ব। স্বাভাবিকভাবেই হাইকোর্টের নির্দেশে প্রতিবাদের ক্ষেত্রে আরও অনেকটা অক্সিজেন পেয়ে গেল বঙ্গ বিজেপি এমনটাই মনে করছে বিশেষজ্ঞ মহল। সাম্প্রতিক সময়ে আর জি কর ঘিরে একাধিক প্রতিবাদী মিছিল আছড়ে পড়েছে বলা যেতে পারে।

এমনকি আর জি করের প্রধান গেটের কাছে বাম ছাত্র সংগঠনের প্রতিবাদ মঞ্চও ছিল। কিন্তু স্বাধীনতা দিবসের মধ্যরাত্রে গোটা চিত্রই পাল্টে গিয়েছিল। উন্মত্ত জনতার ভাঙচুরের ঘটনায় রাজ্যের শাসক দল আঙুল তোলে সিপিআইএম এবং বিজেপির দিকে। যদিও এই দুই দলের পাল্টা দাবি, তৃণমূল সমর্থকেরাই পরিকল্পিতভাবে হামলা চালিয়েছে। যদিও এই মুহূর্তে কলকাতা পুলিশ গোটা ঘটনায় প্রায় ৩৭ জনকে আটক করেছে বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে।

পরবর্তীকালে একের পর এক প্রতিবাদ মিছিলের কারণে শান্তি শৃঙ্খলা বিঘ্নিত হওয়ার সম্ভাবনা দেখিয়ে আর জি কর এবং শ্যামবাজার চত্বরে জমায়েত নিষিদ্ধ করেছে কলকাতা পুলিশ। কিন্তু তা সত্ত্বেও মঙ্গলবার দিন বিজেপির প্রতিবাদ মিছিল শ্যামবাজার পৌছয়। কলকাতা পুলিশের নির্দেশিকা ভেঙে সামনে এগোবার চেষ্টা করতেই শুরু হয় বিজেপি সমর্থক এবং পুলিশের কর্মীদের মধ্যে ধস্তাধস্তি। আর সেই দিনই কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে কার্যত স্বস্তিতে বঙ্গ বিজেপির নেতৃত্ব। রাজনৈতিক মহলের মতে এই ধর্ণার অনুমতি পাওয়াতে রাজনৈতিকভাবে অনেকটাই সুবিধা হবে বিজেপির।

কারণ যতই ১৪৪ ধারা বা বর্তমানে ১৬৩ ধারা জারি করা হোক, শ্যামবাজার চত্বরে জনসমাগম বা প্রতিদিনকার অফিসযাত্রী থেকে শুরু করে নিত্যযাত্রীদের সমাগম কোনওভাবেই আটকানো সম্ভব নয়। সেই সঙ্গে মেট্রো চত্বরেও নিত্য যাত্রীদের ঢল প্রতিদিনই স্বাভাবিকের মতোই নামবে। ফলে সেই শ্যামবাজার মেট্রোর এক নম্বর গেটে ধর্ণা মঞ্চ থাকলে জনসাধারণের কাছে নিজেদের বার্তা আরও বেশি করে ছড়িয়ে দেওয়া যাবে এমনটাই মনে করছে বিজেপি নেতৃত্ব।

হাইকোর্টের পর সুপ্রিম কোর্টেও কার্যত ভর্ৎসনার মুখে পড়েছে রাজ্যের প্রশাসন। আর জি কর কান্ডে সারা পশ্চিমবঙ্গ শুধু নয়, দেশজুড়ে এমনকি বিদেশেও প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে। রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস যথেষ্ট ব্যাকফুটে এই ঘটনায়। রাজ্যের বিরোধী দল বিজেপির কাছে রাজনৈতিকভাবে এই ঘটনার গুরুত্ব যে অপরিসীম, তা বলার অপেক্ষা রাখেনা। গোটা ঘটনায় শাসকদলকে আরও চাপে ফেলতে মরিয়া বঙ্গ বিজেপি। এই নিয়ে প্রতিবাদের বহর আরও ধারালো করতে চাইছে তারা হাইকোর্টের এই অনুমতিতে তাদের সেই লক্ষ্য অনেকটাই পূরণ হবে বলে মনে করছেন বিজেপি নেতৃত্ব থেকে শুরু করে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা।

যদিও আরজি করের নির্যাতিতার হত্যাকারীর ফাঁসির দাবিতে রাজ্যের বিভিন্ন ওয়ার্ড এবং ব্লকস্তরে ধরনায় বসেছিলেন তৃণমূল নেতৃত্ব। কিন্তু এবার ঘটনার এপিসেন্টারের কাছাকাছি বিজেপির ধর্ণার পাল্টায় কী তারা কিছু করবেন? আপাতত সেই নিয়ে মুখে কুলুপ এটেছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। সুবিচারের পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগের দাবিও বারবার তুলছে বিজেপি নেতৃত্ব। ধর্ণা মঞ্চ থেকে সেই দাবি আরও জোরালোভাবে উঠবে বলেই মনে করা হচ্ছে। উত্তর কলকাতা তৃণমূলের গড় বলেই পরিচিত। সেই গড়ে এবার বিরোধিতার ঝরে কার্যত এই মুহূর্তে ব্যাকফুটে তৃণমূল।

এক আর জি করার ঘটনা যেন বঙ্গ রাজনীতির চেনা ছবিটাকে পুরোই পাল্টে দিয়েছে। আবার সেই পুরনো ছবি ফিরিয়ে আনতে তৃণমূল কংগ্রেস রাজনৈতিকভাবে এখন কী কী পদক্ষেপ নেয় সেটাও দেখার বিষয়। তবে সুবিচারের দাবী জানিয়ে নিজেদের রাজনৈতিক জমি দখলে মরিয়া বিজেপি নেতৃত্ব।

আর তাই আর জি কর ইস্যু যাতে কোনোভাবেই ধামাচাপা না পড়ে যায় সেটা নিয়ে এখন থেকেই সচেষ্ট তারা। সামনেই উৎসবের মরশুম, কিন্তু আর জি করের এই নৃশংস ঘটনার অধিকার সাধারণ মানুষের মন থেকে যাতে কোনোভাবেই মুছে না যায় সেই জন্য নিরবিচ্ছিন্ন কর্মসূচিতেই মন দিতে চলেছেন বঙ্গ বিজেপি নেতৃত্ব। এমনটাই মনে করছেন বঙ্গের রাজনৈতিক মহলের অধিকাংশ।