মমতার স্লোগান নকল করেই বাংলাদেশে দুরন্ত ‘কামব্যাক’ জিয়ার?

এপার বাংলার মমতার অনুপ্রেরণায় স্লোগান উঠছে ওপার বাংলায় (Bangladesh)। ২০১১ সালে ক্ষমতায় আসার সময় থেকেই ‘মা-মাটি-মানুষ ‘ শব্দবন্ধ তৃণমূল কংগ্রেসের কার্যত পেটেন্ট স্লোগানে পরিণত হয়েছে।…

এপার বাংলার মমতার অনুপ্রেরণায় স্লোগান উঠছে ওপার বাংলায় (Bangladesh)। ২০১১ সালে ক্ষমতায় আসার সময় থেকেই ‘মা-মাটি-মানুষ ‘ শব্দবন্ধ তৃণমূল কংগ্রেসের কার্যত পেটেন্ট স্লোগানে পরিণত হয়েছে। বর্তমানে তৃণমূল কংগ্রেসের ব্যানার মানেই তাতে ‘মা-মাটি-মানুষের’ উপস্থিতি বাধ্যতামূলক। এবার মমতার সেই ‘মা-মাটি-মানুষ’ই ওপার বাংলার রাজপথে!

সম্প্রতি শেখ হাসিনার পদত্যাগ এবং দেশত্যাগের পর বাংলাদেশের রাজনীতিতে আবারও লাইম লাইটে বিএনপি। বিএনপি নেত্রী তথা বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াও আবারও প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছেন ওপার বাংলার রাজনীতিতে। আর এরকম অবস্থাতেই খালেদা জিয়ার ছবি সম্বলিত প্রকাণ্ড পোস্টারে এপার বাংলার মমতার স্লোগান। যা দেখে কার্যত অবাক এ রাজ্যের তৃণমূল কর্মীরাও। তবে একটু তফাৎ আছে দুটো স্লোগানের মধ্যে। বাংলাদেশে পুরোপুরি মা মাটি মানুষকে কপি করা হয়নি। সেখানে বলা হচ্ছে, ‘মা-মাটি-দেশ’!

   

ঢাকার নিউ পল্টন এলাকায় এক প্রকাণ্ড ব্যানার টাঙানো হয়েছে। সেই ব্যানারে রয়েছে বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার বিশালাকায় ছবি। পাশে বড় বড় অক্ষরে লেখা, ‘সংকটে মা মাটি দেশ, সেরে উঠুন বাংলাদেশ ‘! যদিও খালেদা জিয়ার ছবি ছাড়া তাঁর রাজনৈতিক দল বিএনপি’র সেরকম কোনও উল্লেখ নেই গোটা ব্যানারে। কিন্তু এই মুহূর্তে প্রশ্ন উঠছে তাহলে কি নির্বাচনের জন্য এখন থেকেই সলতে পাকানো শুরু হয়ে গেল? সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া ছবি অন্তত সেই ইঙ্গিতে দিচ্ছে বলে মত বিশেষজ্ঞদের।

পিতৃহারা সজল, প্রয়াত কলকাতা পুরসভার প্রাক্তন কাউন্সিলর প্রদীপ ঘোষ

২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনে বঙ্গের তৃণমূল কংগ্রেসের স্লোগান ছিল ‘খেলা হবে’। বাংলাদেশের আওয়ামী লীগের নেতা তথা নারায়ণগঞ্জের প্রাক্তন সংসদ শামীম ওসমান প্রথম জনপ্রিয় করেন এই ‘খেলা হবে’ স্লোগান। আর ২০২১-এ সেই ‘খেলা হবে’ দিয়েই বাংলার মসনদ জয় করেছিল তৃণমূল। তৃণমূলের যুব নেতা দেবাংশু ভট্টাচার্য ‘খেলা হবে’ নিয়ে কার্যত একটা গানই লিখে ফেলেছিলেন। যা তুমুল জনপ্রিয়তা পেয়েছে তৃণমূল সমর্থকদের কাছে।

এবার কী তাহলে মমতার স্লোগানকে হাতিয়ার করে ময়দানে নামছে আওয়ামী লীগের প্রতিপক্ষ বিএনপি? বিশেষজ্ঞ মহলের মতে আগামী দিনে সেই দৃশ্য দেখলে খুব একটা অবাক হওয়ার কিছু নেই। এমনিতেই বর্তমানে অন্তর্বর্তী সরকারের শাসনে চলছে বাংলাদেশ। বর্তমানে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধানমন্ত্রী ডঃ মহম্মদ ইউনুসকে নিজেদের ঘনিষ্ঠ বলেই দাবি করছেন বিএনপি নেতারা।

এমনকি প্রধানমন্ত্রী ইউনুস থেকে শুরু করে বিএনপি নেতা গয়েশ্বর রায়ও একই সুরে কার্যত ভারতকে হুঁশিয়ারি দেওয়া শুরু করেছেন। যা বাংলাদেশের জনগণের একটা বড় অংশের ভারত বিরোধী মনোভাবকেই প্রশ্রয় দেওয়া বলে মনে করা হচ্ছে। যদিও বিএনপি’র শাসন ক্ষমতায় ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক হাসিনার সময়কালের মতো মসৃণ ছিল না। আর এবার ক্ষমতার অঙ্কে ভারত বিরোধিতার স্বর আরো চড়া হবে বলেই ধারণা অনেকের।

অবসরের পর রাজনীতিতে পা? ভিনেশের ভবিষ্যতে চাঞ্চল্যকর মোড়!

ইউনুসকে নিজেদের লোক বলে দাবি করা থেকে শুরু করে, প্রথম থেকেই কট্টর ভারত বিরোধী অবস্থান। হাসিনা বিহীন বাংলাদেশে রাজনীতির সেন্টার স্টেজে কামব্যাকের পরই পুরনো ফর্মে বিএনপি নেতৃত্ব। দীর্ঘদিন বন্দি থাকা খালেদা জিয়ার মুক্তি থেকে শুরু করে নির্বাসিত খালেদা পুত্র তারেক রহমানের বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তনের খবর। এই মুহূর্তে কার্যত কনফিডেন্সের শীর্ষে রয়েছে বিএনপি নেতৃত্ব।

আর সেই আবহেই ‘সেরে ওঠা’র বার্তা দেওয়া এই পোস্টারে বাংলাদেশের মানুষকে অন্য কথা মনে করিয়ে দিতে চাইছে তারা? বাংলাদেশে বহু মানুষ আছে যাদের সঙ্গে কলকাতার যোগাযোগ নিবিড়। তাদের মধ্যে অনেকে আবার মমতা বন্দোপাধ্যায়কে শ্রদ্ধাও করেন।

আবার সাম্প্রতিক সময়েই নজির বিহীনভাবে বাংলাদেশে দুর্গাপুজোতে ছুটি ঘোষণার প্রস্তাবও দেওয়া হয়েছে। যার পিছনে রাজনৈতিক অঙ্ক কাজ করছে বলে মত অনেকের। যদিও ঘোষণা করছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কিন্তু তার সুফল পেতে পারে বিএনপিও। এমনটাও কিন্তু মত এপার বাংলার অনেক বাংলাদেশ বিশেষজ্ঞের।

পুনরায় ইউজিসি নেট পরীক্ষা বাতিল করার আবেদন খারিজ সুপ্রিম কোর্টের!

নিয়ম অনুযায়ী আগামী ৩ থেকে ৬ মাসের মধ্যেই বাংলাদেশে সাধারণ নির্বাচন হতেই হবে। এদিকে সাধারণ নির্বাচনের আগে শেখ হাসিনার দেশে ফেরার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে তাঁর পুত্র জয়ের কথায়। তাই এখন থেকেই কোনো রিস্ক না নিয়ে কার্যত নিঃশব্দে প্রচার শুরু করেছে বিএনপি? সেই সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।

ওপার বাংলার ‘খেলা হবে’ নিয়ে এ বাংলায় খেলা জয় করেছিলেন মমতা। এবার মমতার ‘মা-মাটি-মানুষ’কে নিয়ে দেশের ক্ষমতায় ফিরবে বিএনপি? আগামী দিনে বাংলাদেশের রাজনৈতিক আবহই সেটা স্পষ্টভাবে বুঝিয়ে দেবে।