পৃথিবীর ‘ভূত-ভবিষ্যত’ লেখা রয়েছে এই সিম্পসন কার্টুনেই

স্বর্ণার্ক ঘোষ: নস্ত্রাদামুসের নামের সঙ্গে হয়তো অনেকেই পরিচিত। পঞ্চদশ শতকে রেঁনেসার রেশ তখনও কাটেনি ইউরোপে। মধ্যযুগ আর রেঁনেসার আলো-আঁধারিতে ফ্রান্সে আর্বিভূত হয়েছিলেন ইতিহাসের সর্বকালের শ্রেষ্ঠ…

Simpson cartoon

স্বর্ণার্ক ঘোষ: নস্ত্রাদামুসের নামের সঙ্গে হয়তো অনেকেই পরিচিত। পঞ্চদশ শতকে রেঁনেসার রেশ তখনও কাটেনি ইউরোপে। মধ্যযুগ আর রেঁনেসার আলো-আঁধারিতে ফ্রান্সে আর্বিভূত হয়েছিলেন ইতিহাসের সর্বকালের শ্রেষ্ঠ ভবিষ্যতদ্রষ্টা নাস্ত্রাদামুস। পরবর্তীকালে এই আশ্চর্য মানুষটির চোখ দিয়েই ভবিষ্যত দেখেছিল এই বিশ্ব। আর সেই ভবিষ্যতই আগামীদিনে হয়ে ওঠে ইতিহাস।

আজবকাণ্ড, ভারতের এই শহর প্রতিদিন থমকে দাঁড়ায় ৫২ সেকেন্ড

   

লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চির ছবি মোনালিসা থেকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জার্মানিতে হিটলারের উত্থান। সবকিছুই ফরাসি ভাষায় ও বিভিন্ন গানিতিক অঙ্কে হাজারও পুঁথিতে লিখে গিয়েছেন তিনি। আর সেই সব ঘটনারই ইতিহাসের পাতায় সাক্ষী থেকেছে মানবসভ্যতা।

কিন্তু এত ইউরোপে ফরাসি বিপ্লবোত্তর ইতিহাস। জানেন কী আধুনিক যুগেও এমন এক চরিত্র রয়েছে। যে বিশ্বের ‘ভূত-ভবিষ্যত’ সবকিছুই বলে দিয়েছেন। তবে তিনি কিন্তু প্রাচীনকালের মতো দুর্বোধ্য ভাষায় হাজারও পুঁথি লিখে যাননি। তিনি চিরকাল ‘বোকাবাক্সে’ বন্দী থেকে গিয়েছেন। হ্যাঁ, সেই চরিত্রের নাম ‘সিম্পসন’। ১৯৮৭ সাল আমেরিকাতে প্রথম শুরু হয় কার্টুনটি। সেই সময় ‘গ্লাসনস্ত’ ও ‘পেরোস্ত্রৈকা’র ছোঁয়াও লেগেছে রুশ-মার্কিন ঠান্ডা লড়াইয়ে। সবচেয়ে দীর্ঘসময় ধরে সম্প্রচারিত এই কার্টুন সিরিজটি ২০২৩ সালে সর্বশেষ ‘সিজন’টি সম্প্রচারিত হয়।

ভুলেও এই ফল নিয়ে বিমানে ওঠার চেষ্টা করবেন না, ধরা পড়লেই হেনস্তা

এই সিম্পসন কার্টুনকে কেন আধুনিক নাস্ত্রাদুমাস বলা হয়?

৮০-র দশকের শেষভাগ থেকে প্রচারিত এই কার্টুনটিতে বিশ্বের যাবতীয় উল্লেখযোগ্য ঘটনা দেখানো হয়েছে। মজার ব্যাপার ঘটনা ঘটার পর নয়, ঘটনার বহু পূর্বেই সিম্পসনে ঠান্ডা লড়াই পরবর্তী বিশ্বের প্রতিটি রাজনৈতিক উত্থান-পতন বিস্তারে দেখানো হয়। দক্ষিণ আফ্রিকায় নেলসন ম্যান্ডেলার উত্থান থেকে আমেরিকায় ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে হামলা। আবার, সুনামির মতো ভয়াবহ দুর্যোগ থেকে করোনা মহামারীর ভয়াবহতার পূর্বাভাসও বহু আগেই দিয়েছিল সিম্পসন।

আশ্চর্য মনে হলেও এটাই সত্যি। কারণ ২০১০ বা তারও আগের এক এপিসোডে চিনের ল্যাবরেটরি থেকে একটি মহামারী ছড়ানোর দৃশ্য দেখানো হয়। এবং বাস্তবে ২০২০ সালে চিনের উহান ল্যাবরেটরি থেকেই করোনা ভাইরাস ছড়িয়েছিল বলে দাবি করা হয়।

Simpson

                                                            সিম্পসন কার্টুনের দৃশ্য

শুধু তাই নয়, ২০১৬ সালে ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রেসিডেন্ট হওয়ার এপিসোডটিও ৯০-র দশকে দেখিয়েছিল সিম্পসন। হলুদ-সোনালী চুলের এক ব্যক্তি লাল জামা পড়া একটি মেয়েকে নিয়ে চলন্ত সিড়ি দিয়ে নেমে আসতে দেখানো হয়েছিল। এবং পরবর্তীকালে বাস্তবেই ডোনাল্ড ট্রাম্প মেয়ে ইভাঙ্কাকে নিয়ে এভাবেই নেমে এসেছিল ডোনাল্ড ট্রাম্প। এমনকী ট্রাম্পের প্রত্যাবর্তন ও ২০২৮ সালে মেয়ে ইভাঙ্কা প্রেসিডেন্ট হবে বলেও দেখানো হয়েছিল সিরিজটিতে। তবে ট্রাম্পের দিকেই ঝুঁকে রয়েছে মার্কিন ভোটারদের দাড়িপাল্লা।

‘গাধা’ বলে গালমন্দ করেন! কিন্তু জানেন এই জন্তুটিও একটি দেশের জাতীয় পশু?

ভবিষ্যতে চাঁদ ও মঙ্গলগ্রহে বসতি স্থাপনে আগ্রহী হবে মানুষ। বর্তমানে এলন মাস্কের মতো একাধিক উদ্যোগপতিরা ভিনগ্রহে পাড়ি দেওয়ার স্বপ্ন দেখাচ্ছে পৃথিবীকে। সেই সবকিছুই বহু আগেই দেখানো হয় জনপ্রিয় কার্টুনটিতে। এমনকি আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্সের উত্থান মানুষকে বিপন্ন করে তুলবে বলে ৯০-র দশকে তাই দেখায় সিম্পসন।

কিন্তু কীভাবে এতটা নিঁখুত ভবিষ্যত দেখাতে পারে সিম্পসন? এটা কাকতালীয় নাকি পেছনে রয়েছে কোনও রহস্য? এই সিম্পসনের রহস্য নিয়ে নানা মুনির নানা মত। ম্যাট গ্রাউনিং-এর নির্মিত কার্টুনটির নির্মাণকারীরা টাইম মেশিনে ব্যবহার জানতেন বলেও নানামহলে গুঞ্জন শোনা যায়। আবার অনেকের মতে মার্কিন গুপ্তচর সংস্থা সিআইএ-র একাধিক গোয়েন্দা ও গনিতজ্ঞেরা মিলে এই কার্টুন নির্মাণে সহযোগিতা করেছিলেন বলেও দাবি অনেকের।

জাতীয় পতাকা উত্তোলনের সময় কি জুতো খুলতে হয়? জানুন ভারতীয় আইন

তবে সেই রহস্য কিন্তু আজও ভেদ হয়নি। প্রায় একদশক আগে সিম্পসনের একটি এপিসোডে দেখানো হয় ২০২৪ সালে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধ বাঁধতে পারে। আর সেই যুদ্ধে পারমানবিক বোমা ব্যবহারের সম্ভাবনাও প্রবল। তাহলে ভবিষ্যত কী? সিম্পসন তো বলেছে, আর কে বলবে?……….