সাদ্দাম স্টাইলে হাসিনা উত্খাত, নেপথ্যে ‘আরব্য রজনী’র দারুচিনি দ্বীপ?

স্বর্ণার্ক ঘোষ:  বাংলাদেশের বিখ্যাত সাহিত্যিক হুমায়ুন আহমেদের রচিত নাটক ‘দারুচিনি দ্বীপ-এর কাহিনী হয়তো অনেকেরই দেখা। সেই নিখাদ সুন্দর গল্পটির পটভূমিই ছিল সেন্ট মার্টিন আইল্যান্ড। কোথায়…

Bangladesh saint Martin island dispute

স্বর্ণার্ক ঘোষ:  বাংলাদেশের বিখ্যাত সাহিত্যিক হুমায়ুন আহমেদের রচিত নাটক ‘দারুচিনি দ্বীপ-এর কাহিনী হয়তো অনেকেরই দেখা। সেই নিখাদ সুন্দর গল্পটির পটভূমিই ছিল সেন্ট মার্টিন আইল্যান্ড। কোথায় এই সেন্ট মার্টিন আইল্যান্ড? চট্টোগ্রামের টেকনাফ থেকে মাত্র নয় কিলোমিটার দূরেই রয়েছে এই ছোট্ট দ্বীপটি। হলুদ বালির চরে নারকেল গাছে ঘেরা দ্বীপটির মনোরম দৃশ্য হার মানাবে যেকোনও বিদেশের দৃশ্যকেও। স্থানীয়রা একে বলে দারুচিনি দ্বীপ। কিন্তু কেন এই দ্বীপের নাম হল দারুচিনি দ্বীপ? রয়েছে ইতিহাস।

বিক্ষোভকারীদের হুমকির মুখে পদত্যাগের ঘোষনা করলেন বাংলাদেশের প্রধান রাষ্ট্রপতি!

   

শোনা যায় পঞ্চদশ শতকে এই পথেই ভারত ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার সঙ্গে ব্যবসা করতেন আরব বনিকেরা। এই সমুদ্র পথেই পাড়ি দিত আরবীদের পণ্যবাহী জাহাজ। একবার এই দ্বীপেই জাহাজ নোঙর করে আরবী বনিকেরা। সেই বিরাট জাহাজে ছিল কয়েক টন দারুচিনি।

সেইসময় হঠাত্ প্রবল ঝড়ে তছনছ করে দেয় গোটা দ্বীপ। মারা যায় বহু বনিক। আর জাহাজে থাকা সেই দারুচিনি ছড়িয়ে পড়ে সমুদ্রের জলে। বিপুল পরিমান দারুচিনি ভেসে ওঠে সাগর পাড়ের বালিতে। সেই থেকেই ওই দ্বীপের নাম দারুচিনি দ্বীপ বলেই ছড়িয়ে পড়ে জনমানষে। আর এই দারুচিনি দ্বীপ বা সেন্ট মার্টিন আইল্যান্ড হাসিনার পতনের অন্যতম কারণ হিসেবে দেখছেন কূটনীতিক মহল।

বিহার হয়ে কোথায় পাচার হচ্ছে পরমাণু বোমার উপকরণ?

কিন্তু বাংলাদেশে গণঅভুত্থানে হাসিনার পতনের সঙ্গে সেন্ট মার্টিন আইল্যান্ডের সম্পর্ক কী? সম্পর্ক রয়েছ। কারণ এই দ্বীপটি বাংলাদেশের চট্টোগ্রাম, মিয়ানমারের মাঝখানে বঙ্গোপসাগরের ওপর অবস্থিত। ভূ-কৌশলগতভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান। জানা যায়, তিন কিলোমিটার ব্যাসার্ধের এই দ্বীপেই নৌ-বন্দর ও বিমান ঘাঁটি করতে চেয়েছিল আমেরিকা। উদ্দেশ্য ছিল এখানে বিমান ঘাঁটি করেই মিয়ানমার, ভারত ও বাংলাদেশের ওপর নজরদারি চালাবে ওয়াশিংটন। এবং অবশ্যই বঙ্গোপসাগরে চিনের গতিবিধির ওপর। শোনা যায় আমেরিকার সেই প্রস্তাব মেনে নেন নি শেখ হাসিনা।

একাধিকবার জনসমক্ষে সেই কথা স্বীকার করেছেন তিনি। তবে আমেরিকা না অন্য কোনও দেশ সেই বিষয় স্পষ্ট কিছু বলেননি। তবে জনৈক শ্বেতাঙ্ক ব্যক্তির কথা বারবার বলেছিলেন বাংলাদেশের প্রাক্তণ প্রধানমন্ত্রী। তবে তা যে আমেরিকান প্রতিনিধি তা বুঝতে অসুবিধা হয়নি কারওরই। পরে বিভিন্ন সূত্রে সেই বিষয়টি জানা গিয়েছে। তবে গোটা বিষয়টিতে নিজেদের ভূমিকা অস্বীকার করে আমেরিকা। মার্কিন মুলুকের পক্ষ থেকে স্পষ্ট জানানো হয় সেন্ট মার্টিন দ্বীপ নিয়ে হাসিনার সঙ্গে কোনও কথা বলেনি ওয়াশিংটন। তবে মুখে অস্বীকার করলেও এমনটা মানতে নারাজ কূটনৈতিক মহল। কারণ এই ধরনের দাবি না মেটানোয় অতীতেও বহু দেশে সরকার ফেলেছে আমেরিকা, বিশেষত মুসলিম দেশগুলিতে। যেমন ইরাক। ২০০৩-০৪ সালের সাদ্দাম হোসেনের কথা মনে করাচ্ছে হাসিনার পতনকে।

মধ্যপ্রাচ্যে তেলের খোঁজে ইরাকের দিকে আঙুল তুলেছিল ওয়াশিংটন। মারাত্মক ভয়ঙ্কর রাসায়নিক মারণাস্ত্র লুকিয়ে রাখা থেকে নির্বিশেষে শিয়া ও কুর্দ হত্যার অভিযোগও তোলা হয়েছিল সাদ্দামের বিরুদ্ধে। কূটনৈতিক মহলের মতে এগুলো সবই ছিল আক্রমণের অজুহাত। কারণ কোনও রাসায়নিক মারণাস্ত্রের খোঁজ মেলেনি পরবর্তীকালে ইরাকে। তেলের ওপর দখল ও ৯০’র দশকে কুয়েতে উপসাগরীয় যুদ্ধের বদলা নিতেই সাদ্দামকে হঠিয়েছিলেন তত্কালীন হোয়াইট হাউজের মালিক জর্জ বুশ। মার্কিন সেনা ঢুকতেই নিরুপায় হয়ে আত্মগোপন করেন দোর্দন্ডপ্রতাপ সাদ্দাম। বাগদাদে তাঁর বিশালাকার মূর্তি টেনে নামিয়ে ভেঙে ফেলে উন্মত্ত ইরাকিরা। ঠিক কয়েকদিন আগে যেমনটা দেখা গিয়েছিল ঢাকার রাস্তায় মুজিবরের মূর্তি নিয়ে যেভাবে উম্মত্ত হয়ে উঠেছিল ‘বাঙালি’।

ভিনেশকে দেখে শিক্ষা! কীভাবে ওজন কমালেন আমন? জানুন বিস্তারিত

দক্ষিণ এশিয়ায় এই ‘রেজিম চেঞ্জ’ আমেরিকার চৌষট্টি খোপের খেলার একটা চাল। এই অঞ্চলে ‘রাজা’ ভারতকে একরকম পর্যদুস্ত করতেই ঘনিষ্ট ‘রানী’ হাসিনাকে উত্খাত করা ওয়াশিংটনের আবশ্যিক ছিল। তাই ছাত্র আন্দোলনের মোড়কে আমেরিকা সেন্ট মার্টিনের প্রতিশোধ নিল বলেই মনে করছে কূটনৈতিক মহল।

এদিকে, গণঅভুত্থানে শেখ হাসিনার পতন হয়েছে বাংলাদেশে। নিজের দেশ ছেড়ে তিনি আশ্রয় নিয়েছেন ভারতে। এদিকে ‘ভারতবন্ধু’ হাসিনার পতন হতেই প্রতিবেশী দেশের শাসন ক্ষমতায় এসেছে বিএনপি-জামাত শিবির। যা ভারতের জন্য যথেষ্ট উদ্বেগের। প্রতিবেশী দেশে এই ধরনের চরম ভারত বিরোধী সরকার নয়াদিল্লির চিন্তা বাড়াতে যথেষ্ট বলেই মনে করছে কূটনৈতিক মহল।