তাঁর অনুমতিতেই লোকসভায় ঢুকে রীতিমতো তাণ্ডব চালিয়েছিল দুই যুবক। যা নিয়ে তোলপাড় সারা দেশে। লোকসভার নিরাপত্তা (Parliament Security) বলয় ভঙ্গকারী যুবকদের সংসদে প্রবেশের অনুমতিপত্র দিয়েছিলেন বিজেপি সাংসদ প্রতাপ সিমহা (Pratap Simha)। পুলিশের নজরে রয়েছেন এই বিজেপি নেতাও।
প্রতাপের বক্তব্য, সাগর নামের ওই যুবকের বাবা শঙ্করলাল শর্মা তাঁর পরিচিত। প্রতাপের কেন্দ্র মহীশূরেই তিনি থাকেন। শঙ্করই বার বার অনুরোধ করেছিলেন, তাঁর পুত্র সাগরকে নতুন সংসদ ভবনটি দেখার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য। দীর্ঘদিন ধরে সেই ‘পাস’ জোগাড় করার জন্য প্রতাপের দফতরের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলছিলেন শঙ্কর। স্পিকারের কাছে বিজেপি সাংসদ জানিয়েছেন, অনুপ্রবেশকারী সাগরের বিষয়ে এর চেয়ে বেশি কিছু তথ্য তাঁর কাছে নেই।
সাংসদ প্রতাপ সিমহা ২০১৪ ও ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে কর্ণাটকের মহীশূর-কোডাগু থেকে দু’বার জয়ী হয়েছিলেন। এই সাংসদ ওই দুই যুবককে অনুমতি পত্র দিয়েছিলেন। তা নিয়েই বিরোধী সাংসদরা প্রশ্ন তুলেছেন, কেন প্রতাপ সিমহার বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হল না, যখন বৃহস্পতিবার ১৪ জন বিরোধী সাংসদকে সাসপেন্ড করা হয়েছে নিরাপত্তা লঙ্ঘনের প্রতিবাদ এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের বিবৃতি দাবি করার জন্য। জাতীয় নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে পাসওয়ার্ড শেয়ার করার জন্য তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্রকে কেন বহিষ্কার করা হল, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তাঁরা।যদিও কেন্দ্রীয় সরকার বা বিজেপি এখনও প্রতাপ সিমহা সম্পর্কে কোনও বিবৃতি দেয়নি।
ছয়জন (সাগর শর্মা এবং মনোরঞ্জন, যারা সংসদ চত্বরে প্রবেশ করেছিল, নীলম আজাদ এবং অমল শিন্ডে যারা সংসদের বাইরে স্লোগান দিচ্ছিল এবং তাদের সহযোগী ললিত ঝা এবং ভিকি শর্মা) যারা বেকারত্ব, কৃষকদের দাবি, এবং মণিপুরে জাতিগত সংঘর্ষের বিষয়গুলি তুলে প্রতিবাদ জানিয়েছিল এবং পার্লামেন্টের এই ঘটনার সাথে জড়িত ছিল সবাইকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের কঠোর সন্ত্রাস আইন বেআইনি কার্যকলাপ (প্রতিরোধ) আইন (ইউএপিএ) এর অধীনে গ্রেফতার করা হয়েছে। প্রতাপ সিমহা অবশ্য এখনও কোনও পদক্ষেপের মুখোমুখি হননি।
বুধবার এই ঘটনার পর বিএসপি সাংসদ দানিশ আলি প্রথম প্রতাপ সিমহার কথা তোলেন। তিনি বলেন, নিরাপত্তা কর্মীদের সাথে সাগর শর্মাকে আটক করার সময়, তিনি সাগরের কাছে একটি পাস দেখেন যেখানে প্রতাপ সিমহার অনুমোদনের স্বাক্ষর রয়েছে।পরে, আলি পাসের একটি ছবিও টুইট করেছিলেন যাতে প্রতাপ সিমহার নাম ছিল।
সংবাদ সংস্থা প্রেস ট্রাস্ট অফ ইন্ডিয়া জানিয়েছে, প্রতাপ সিমহা সংসদীয় মন্ত্রী প্রহ্লাদ জোশীকে বলেছেন যে তিনি সাগরের বাবাকে চিনতেন। নতুন সংসদ ভবন পরিদর্শনের জন্য একটি পাস পেতে সাগর বিজেপি সাংসদের কাছে গিয়েছিলেন। তবে তাঁর সম্পর্কে বিশেষ কিছু জানেন না।
এই প্রথমবার নয় যে প্রতাপ সিমহা বিতর্কে জড়ালেন।প্রতাপ সিমহা, একজন প্রাক্তন কন্নড় ভাষার সাংবাদিক, তার অঞ্চলে উস্কানিমূলক বক্তব্যের জন্য বিতর্কে জড়িয়েছিলেন। ২০১৪ সাল পর্যন্ত একজন সাংবাদিক হিসাবে কাজ করে, যখন তিনি প্রথমবারের মতো এমপি হয়েছিলেন, তখন তাঁর হিন্দুত্বের প্রতি ঝোঁক স্পষ্ট ছিল। তিনি সম্পাদক বিশ্বেশ্বর ভাটের অধীনে কাজ করেছিলেন যিনি কন্নড় দৈনিক বিশ্ববাণী চালান, যা তার চরম হিন্দুত্ববাদীকে সাপোর্ট করার জন্য পরিচিত।
প্রভাবশালী ভোক্কালিগা সম্প্রদায়ের অন্তর্গত প্রতাপ সিমহা, বহুসংস্কৃতিবাদের জন্য পরিচিত পুরাতন মহীশূর অঞ্চলের সবচেয়ে মেরুকরণকারী জনপ্রতিনিধিদের মধ্যে একজন হিসাবে পরিচিত।
২০২২ সালের নভেম্বরে সিমহা বুলডোজার দিয়ে নানজানগুড হাইওয়ের কাঠামোটি ভেঙে ফেলার হুমকি দিয়েছিলেন, কারণ বাস স্ট্যান্ডের গম্বুজগুলি “একটি মসজিদের অনুরূপ”। মহীশূর জেলা প্রশাসন পরবর্তীকালে নবনির্মিত বাস স্টপের তিনটি গম্বুজের মধ্যে দুটি ভেঙে কেন্দ্রীয় গম্বুজটি ধরে রেখেছিল।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের এক রিপোর্টে বলা হয়েছে, চলতি বছরের গোড়ার দিকে রাজ্য নির্বাচনে কংগ্রেস জয়ী হওয়ার পর গত জুনে সিমহা অভিযোগ করেছিলেন, বিএস ইয়েদুরাপ্পা ও বি এস বোম্মাই-র নেতৃত্বে রাজ্য দলের কয়েকজন নেতা কংগ্রেসের সঙ্গে ‘অভ্যন্তরীণ সমন্বয়ের’ জন্য একটি ‘সমঝোতা’ চুক্তি করেছিলেন। কংগ্রেস এই দাবি অস্বীকার করেছে।