সেনাবাহিনীর সঙ্গে টানাপোড়েনের অবহেও ইউনূসের গলায় সংখ্যালঘু প্রীতির বার্তা

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মহম্মদ ইউনূস (younus) সোমবার এক গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণায় বলেছেন, দেশে প্রবর্তিত যেকোনো সংবিধান সংশোধনী ধর্মীয় স্বাধীনতা এবং সংখ্যালঘু অধিকার বজায় রাখবে।…

younus message for minority

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মহম্মদ ইউনূস (younus) সোমবার এক গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণায় বলেছেন, দেশে প্রবর্তিত যেকোনো সংবিধান সংশোধনী ধর্মীয় স্বাধীনতা এবং সংখ্যালঘু অধিকার বজায় রাখবে। তিনি জোর দিয়ে বলেন, সংখ্যালঘু সম্প্রদায় মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠীর সমান অধিকার ভোগ করবে। এই মন্তব্য তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক ধর্মীয় স্বাধীনতা কমিশনের (ইউএসসিআইআরএফ) চেয়ার স্টিফেন শ্নেকের সঙ্গে এক বৈঠকে প্রকাশ করেন, যা তার অফিসিয়াল সোশ্যাল মিডিয়া হ্যান্ডেলে পোস্ট করা হয়েছে।

ইউনুস কি বলেছেন (younus)

ইউনূস(younus) বলেন, “আমরা দেশে ধর্মীয় সম্প্রীতি গড়ে তুলতে কঠোর পরিশ্রম করছি।” গত বছরের জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানের পর সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর প্রস্তাবিত সংবিধান সংশোধনী এবং সংস্কার কমিশনের কার্যক্রম সম্পর্কে জানতে চাইলে ইউনূস বলেন, “যেকোনো সংবিধান সংশোধনী বাংলাদেশে ধর্মীয় স্বাধীনতা এবং সংখ্যালঘু অধিকার বজায় রাখবে।”

   

তিনি (younus)আরও বলেন, “ঐকমত্য গঠন কমিশন রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে প্রস্তাবিত সংশোধনী নিয়ে আলোচনা করছে। সংখ্যালঘুরা মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠীর সমান অধিকার ভোগ করবে।” ইউনূস দেশে ধর্মের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার কথা উল্লেখ করে সরকারের ধর্মীয় সম্প্রীতি বজায় রাখার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, “আমরা প্রতিটি নাগরিকের ধর্মীয় স্বাধীনতা রক্ষায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।”

সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার অভিযোগে স্বচ্ছতার প্রতিশ্রুতি

শেখ হাসিনার পতনের পর গত বছরের আগস্ট থেকে বাংলাদেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়, বিশেষ করে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলার একাধিক ঘটনা ঘটেছে। এই অভিযোগের জবাবে ইউনূস (younus) বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার স্বচ্ছতার প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং তিনি আন্তর্জাতিক সাংবাদিকদের বাংলাদেশে এসে পরিস্থিতি প্রত্যক্ষ করার আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “যেকোনো সাংবাদিক যেকোনো সময় বাংলাদেশে আসতে পারেন। গণঅভ্যুত্থানের পর অনেকে ইতিমধ্যে দেশটি পরিদর্শন করেছেন।”

ইউনূস (younus)আরও উল্লেখ করেন যে, সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার অভিযোগ নিয়ে কিছু “ভুল তথ্য প্রচারণা” চলছে, যা জুলাই অভ্যুত্থানকে কলঙ্কিত করার উদ্দেশ্যে করা হচ্ছে। তিনি ইউএসসিআইআরএফ-এর কাছে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের দীর্ঘস্থায়ী নির্যাতনের বিষয়টি তুলে ধরার জন্য সমর্থন চেয়েছেন। তিনি জানান, তার অনুরোধে জাতিসংঘ আগামী সেপ্টেম্বরে এ বিষয়ে একটি বিশেষ অধিবেশন আয়োজন করবে।

ইউনূসের পদত্যাগের গুজব ও স্থিতিশীলতার প্রতিশ্রুতি

এর আগে, ইউনূসের (younus) পদত্যাগের সম্ভাবনা নিয়ে গুজব ছড়িয়েছিল। তিনি রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐক্যের অভাব এবং কাজ করতে অসুবিধার কথা উল্লেখ করে পদত্যাগের কথা ভেবেছিলেন বলে জানা গিয়েছিল। তবে, তার মন্ত্রিসভার একজন উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ সাংবাদিকদের জানান, “ইউনূস বলেননি যে তিনি চলে যাবেন। তিনি বলেছেন, আমাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালনে অনেক বাধার সম্মুখীন হচ্ছি, কিন্তু আমরা সেগুলো অতিক্রম করছি।” তিনি জোর দিয়ে বলেন, “ইউনূস নিশ্চিতভাবে থাকছেন।”

মাহমুদ আরও বলেন, “আমাদের কোনো উপদেষ্টা কোথাও যাচ্ছেন না, কারণ আমাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ; আমরা এই দায়িত্ব পরিত্যাগ করতে পারি না।” এই বক্তব্য এমন সময়ে এল যখন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকারকে ডিসেম্বরের মধ্যে সংসদ নির্বাচন আয়োজনের আহ্বান জানিয়েছে এবং মন্ত্রিসভা থেকে “বিতর্কিত উপদেষ্টাদের” অপসারণের দাবি তুলেছে।

Advertisements

রাজনৈতিক অস্থিরতা ও সেনাবাহিনীর ভূমিকা

ইউনূসের (younus)অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের সম্পর্কের অবনতির খবর পাওয়া গেছে। সূত্র জানায়, জামান নির্বাচনের জন্য জুন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে রাজি নন এবং সংবিধানের দুর্বলতাগুলো কাজে লাগিয়ে ইউনূসের সরকারকে চ্যালেঞ্জ করার পরিকল্পনা করছেন। বাংলাদেশের সংবিধানে সরকার ভেঙে যাওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচনের বাধ্যবাধকতা রয়েছে, যা ইউনূসের সরকারের আইনি ভিত্তির দুর্বলতার ইঙ্গিত দেয়।

জামান শেখ হাসিনা এবং খালেদা জিয়ার দলগুলোকে একত্রিত করে নির্বাচন আয়োজনের পরিকল্পনা করছেন বলে জানা গেছে। এমনকি তিনি জরুরি অবস্থা ঘোষণার মাধ্যমে রাষ্ট্রপতিকে ইউনূসের কর্তৃত্ব বাইপাস করতে চাপ দিচ্ছেন বলে সূত্র জানায়। এদিকে, ইউনূস রাখাইন করিডোর স্থাপনের বিষয়ে রাষ্ট্রসংঘের সঙ্গে আলোচনা করেছেন, যা জামান বিরোধিতা করেছেন, এটিকে একটি নির্বাচিত সরকারের সিদ্ধান্ত হিসেবে বিবেচনার দাবি জানিয়েছেন।

আইপিএল ২০২৫ সমাপ্তি অনুষ্ঠানে ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীকে বিশেষ সম্মান

সংখ্যালঘু অধিকার নিয়ে উদ্বেগ

ইউএসসিআইআরএফ-এর ২০২৫ সালের বার্ষিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে ধর্মীয় স্বাধীনতার অবস্থা সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলার কারণে অবনতি হয়েছে। প্রতিবেদনে হিন্দু, বৌদ্ধ এবং খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের ওপর হামলার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। তবে, ইউনূসের প্রেস উইং এই দাবি প্রত্যাখ্যান করে বলেছে, শেখ হাসিনার প্রস্থানের পর ধর্মীয় সহিংসতায় শত শত হিন্দু নিহত হয়েছে বলে যে দাবি করা হচ্ছে, তা মিথ্যা।

এক্স-এ কিছু পোস্টে দাবি করা হয়েছে, জুলাই ২০২৪-এর অভ্যুত্থানের পর হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর ২,০০০-এর বেশি হামলা, মন্দির পোড়ানো এবং ব্যাপক উচ্ছেদের ঘটনা ঘটেছে। তবে, এই তথ্য যাচাই করা যায়নি এবং এটি বিতর্কিত।

ইউনূসের (younus)সরকার ধর্মীয় সম্প্রীতি এবং সংখ্যালঘু অধিকার রক্ষায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বলে জানালেও, রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং সেনাবাহিনীর সঙ্গে সম্পর্কের টানাপোড়েন এই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করছে। সংবিধান সংশোধনী নিয়ে আলোচনা এবং নির্বাচনের সময়সীমা নিয়ে বিতর্ক দেশের ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক দিকনির্দেশনার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।