বাংলাদেশের বউ মেলায় যাবেন নাকি?

বউ মেলা ! নামটা শুনলে মনে হতে পারে এই মেলায় হয়ত বউ বিক্রি হয়। কিন্তু আদপে তা নয়। স্বামী স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া বিবাদ মিটিয়ে ভালোবাসা…

বউ মেলা ! নামটা শুনলে মনে হতে পারে এই মেলায় হয়ত বউ বিক্রি হয়। কিন্তু আদপে তা নয়। স্বামী স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া বিবাদ মিটিয়ে ভালোবাসা বাড়াতে এবং স্বামীর সংসারকে ধনসম্পদে ভরিয়ে তুলতে এই মেলার আয়োজন। প্রেমে সফল ও দ্রুত বিয়ের কাজ সম্পন্ন হওয়ার জন্য এ স্থানের মাটি খুবই উপকারী বলে মনে করা হয়। প্রায় ২০০ বছর ধরে বাংলাদেশের নারায়ণগঞ্জ চলে আসছে এই মেলা।

নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও উপজেলার জয়রামপুর গ্রামে প্রাচীন বটবৃক্ষের নিচে বসে শতাব্দি পুরানো বউ মেলা। প্রাচীন এক বটগাছকে পুজো করেন স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের নারীরা। এই মেলার আরেক নাম সিদ্ধেশ্বরীর মেলা। প্রাচীন সেই গাছকে হিন্দু ধর্মাবলম্বী লোকজন সিদ্ধেশ্বরী দেবী হিসাবে পূজা করেন। তাই এই মেলা সিদ্ধেশ্বরী দেবীর মেলা নামে পরিচিত।

এই মেলায় নববধূ থেকে শুরু করে বিভিন্ন বয়সের নারীরাই মূলত অংশগ্রহণ করেন। পুরুষরা এই মেলায় এলেও পূজায় অংশ নেন কেবল নারীরা। মনোবাসনা পূরণে প্রাচীন বৃক্ষ সিদ্ধেশ্বরী দেবীর গোড়ায় মাটি দেন গায়ের বধূরা। এই মাটি তারা নিয়ে আসেন পার্শ্ববর্তী পুকুর ও খাল থেকে। সিদ্ধেশ্বরী দেবীর গোড়ায় মাটি দেওয়া শেষে সেখানে মোমবাতি জ্বালিয়ে পুজো করেন নারীরা। অনেক ভক্ত সিদ্ধেশ্বরী দেবীর গায়ে মেখে দেন সিঁদুর। অংশগ্রহণকারী সব নারী নিজ নিজ বাড়ি থেকে ভোগ নিয়ে আসে।

ভোগ হিসেবে তারা থালা ভর্তি ফলমূল আর মিষ্টান্ন নিয়ে আসেন। বটবৃক্ষের গোড়া পূর্ণার্থীদের ভোগে ভরে গেলে শুরু হয় পুজোর মূল পর্ব। সিদ্ধেশ্বরী দেবীকে পুজো শেষে বধূরা একে অপরের কপালে সিঁদুর পরিয়ে দেন। পুজো শেষে বটতলা থেকে যার যার ভোগ বাড়ি নিয়ে যান। বউ মেলাকে কেন্দ্র করে সেখানে বসে তিন দিনের মেলা। চৈত্র সংক্রান্তি, পহেলা বৈশাখ ,আর পরের দিনে চলেও এই মেলা। হিন্দু সম্প্রদায়ের মেলা হলেও বটতলার এই লোক মেলায় জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সবাই অংশগ্রহণ করে। বউমেলা বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী মেলাগুলোর মধ্যে একটি।